বুধবার ইতিহাস গড়ল ভারত। এদিন চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেছেন চন্দ্রযান ৩। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের কুমেরুর মাটির ছুঁয়েছে ভারত। এর মাঝেই বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে ভাইরাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ভিডিয়ো ক্লিপিংস। সেখানে চন্দ্রায়ন ৩ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মহাকাশে পৌঁছানো প্রথম ভারতীয় রাকেশ শর্মার বদলে রাকেশ রোশন (কোই মিল গায়া ছবির পরিচালক)-এর নাম বলে ফেলেন! ব্যস, মমতার বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিযোগ তোলেন বিরোধী নেতারা। বিজ্ঞানী রাকেশ শর্মার অপমান করেছেন তিনি, এমন কথাও শোনা যায় নেটিজেনদের মুখে। এরপর রাত গড়াতেই ফেসবুকে হু হু করে ভাইরাল কাঞ্চন মল্লিকের একটি ভিডিয়ো। সেখানে সবুজে মোড়া পিচ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কাঞ্চন বন্ধুদের উদ্দেশ্য বলছেন, ‘দিদি যখন বলেছেন রাকেশ রোশন তখন রাকেশ রোশনই… একদম জ্ঞান কপচাবি না’।
ব্যাস, সোশ্যালে হইচই কাণ্ড। কেউ ভাবছেন, এটা কী করে সম্ভব? এই ক্লিপে নিশ্চয় এডিটিং-এর কারসাজি আছে, অনেকে আবার ভাবছেন এই ছবির পরিচালক কি ভবিষ্যত দেখতে পান নাকি? কোন ছবির অংশ এই ক্লিপ, সেই প্রশ্ন অনেকের মনেই। আপনাদের জানিয়ে রাখি এই দৃশ্য মোটেই এডিটিং-এর কারসাজি নয়। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আলোর নিশানা’ ছবির অংশ এটি। যা পরিচালনা করেছিলেন অনিন্দিতা সর্বাধিকারী।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে তাঁর কাছে সটান প্রশ্ন, সকলকে জানতে চাইছে আপনি কি ভবিষ্যত দ্রষ্টা? এক গাল হাসি নিয়ে পরিচালকের জবাব, ‘আরে উনি তো একই ভুল আগেও করেছেন! চন্দ্রযান ১-এর সময়েও উনি রাকেশ শর্মার বদলে রাকেশ রোশনের নাম বলেছিলেন। সেই থেকেই তো অনুপ্রেরণা নিয়ে এই সংলাপ লেখা, দেখতেই তো পাচ্ছেন হুবহু একই কথা। সমস্যাটা হল ওঁনার ভুলটা কেউ শুধরে দেয় না। আমি ওঁনাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি আর নাই করি, কিংবা ওঁনার সমর্থক হই বা নাই হই, – উনি যে রবীন্দ্রনাথ, গান্ধিজিকে নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলে দাঁড়িয়ে এতোকিছু বলেন, লোকের উচিত তো ওঁনাকে শুধরে দেওয়া। সেই জন্যই তো একই ভুল উনি করতে থাকেন। আমি কোনও ভবিষ্যত দ্রষ্টা নই। ২০০৯ সালে যখন ছবিটি তৈরি করি তখন এটা একটা অ্যানিকডোট হিসাবে রেখেছিলাম’।
খানিক আশ্চর্যের সুরেই অনিন্দিতার পালটা প্রশ্ন, ‘উনি তো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন রাকেশ রোশনই প্রথম ভারতীয় যিনি চাঁদে গিয়েছিলেন। ওঁনার আশেপাশে এত শিক্ষিত আধিকারিকরা রয়েছেন, কেন তাঁরা ওঁনার ভুল শুধরে দেয় না’।
‘আলোর নিশানা’ ছবি যখন তৈরি হয়,তখন রাজ্যে ক্ষমতায় বাম সরকার। এই ছবির প্রেক্ষাপটে রয়েছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলন। সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই তৈরি অনিন্দিতার এই ছবি। বর্তমানে তা ট্রেন্ডিং-এ। পরিচালক বললেন-'আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ছবিটার কথা, কাল থেকে সবাই আলোচনা করেছে। আদ্যোপান্ত পলিটিক্যাল ফিল্ম এটা। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের কথা রয়েছে, অনেক রিয়েল ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। সত্য ঘটনাকে আশ্রয় করে তৈরি আলোর নিশানা, সবাই এখন আলোচনা করছে দেখে ভালো লাগছে'।
অনিন্দিতা যোগ করলেন এই ছবির অভিনতো-অভিনেত্রীর সেইসময় অধিকাংশই ছিলেন বাম সমর্থক, যাঁরা সকলেই এখন রং বদলেছেন। তাঁর কথায়,'আমি ছবিতে যা তুলে ধরি তা আমার ব্যক্তিগত ভাবনা। আমি রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত নই। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ছবিতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা সকলেই প্রায় বাম সমর্থক ছিলেন। সেই কারণে তাঁরা প্রায় কোনওরকম পারিশ্রমিক ছাড়াই এই ছবিতে কাজ করেছিলেন। যার মধ্যে কাঞ্চন আজ তৃণমূলের বিধায়ক, অঞ্জনা বসু -পাপিয়া অধিকারীরা বিজেপিতে। এই ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তীরা রয়েছেন। ছবিটাতে যারা অভিনয় করেছিল সকলকে বাম সমর্থক বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।'
সবশেষে চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য নিয়ে পরিচালক জানালেন, ‘এই মুহূূর্তগুলোতে বোঝা যায় দেশের অহঙ্কার কী, দেশের জন্য গর্ব কী বোঝা যায়। আসলে এখন তো আমরা নিজেদের গ্লোবাল সিটিজেন হিসাবেই দেখতে পাই। বিজ্ঞানই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি আশা রাখি কেউ আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ভুলটা শুধরে দেবেন। এই হাসির খোরাক হওয়াটা উচিত নয়, মানুষ ভুল বলতেই পারেন। মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় কখনও কখনও। কিন্তু উনি এটা আগেও বলেছেন, এখনও বললেন কারণ উনি এটা বিশ্বাস করেন। প্রাণজ্বল ভাবে বুঝিয়েছেন ব্যাপারাটা। উনি বিশ্বাস করেন এর আগে চাঁদের মানুষ গেছেন, এখন মেশিন গেছেন। কারুর উচিত প্রসাশনের তরফে ওঁনাকে শুধরে দেওয়া না হলে বিশ্বের কাছে আমরা সকলেই হাসির খোরাক হব’।
বুধবার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের উদযাপন এবং ‘বাংলার শাড়ি' উদ্বোধনে গিয়েছিলেন মমতা, সেখানেই এই ভুল করে বসেন মুখ্যমন্ত্রী।