রাত পোহালেই মহালয়া। গত বছরের মতো এই বছরও স্টার জলসার পর্দায় মহিষাসুরমর্দিনী রূপে ধরা দেবেন কোয়েল মল্লিক। ছোট থেকেই মল্লিকবাড়ির ঠাকুর গড়া দেখে বড় হয়েছেন কোয়েল। দুর্গা পুজো মানে তাঁর কাছে আলাদা একটা আবেগ। তবে মন খারাপের আবহে নায়িকা স্পষ্ট জানালেন, এবার পুজো হবে উৎসব নয়। মহালয়ার অনুষ্ঠানের অংশ হওয় থেকে পুজোর পরিকল্পনা সব নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন কোয়েল মল্লিক।
‘রণং দেহী’ অনুষ্ঠানে ফের মা দুর্গা কোয়েল, অভিনেত্রী বললেন- ‘এবার আমরা দেবীকে রণমূর্তি ধারণ করতে দেখেছি… যতবার অন্যায় অনাচার নেমে এসেছে পৃৃথিবীতে ততবার নারীশক্তি জাগ্রত হয়ে পৃথিবী থেকে অন্ধকারের ছায়া মিটিয়ে নতুন আলোর দিশা দেখিয়ে চলে। এই বারের মহালয়া এটাই মূল আকর্ষণ। কখনও মাতৃ রূপে সে সন্তানকে রক্ষে করছ, কখনও নারীর সম্মান করছে, আবার কখনও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষে করছে অরাজকতা থেকে। সে তার শক্তি রূপ প্রকাশ করে অশুভের বিনাশ ঘটা,সেই নারী হয়ে উঠে রণং দেহী’।
মায়ের তৃতীয় নয়নই কোয়েল-পুত্রের সেরা আকর্ষণ
নিজের কার্তিক মানে কবীরকে নিয়েই এই বছরও মহালয়ার অনুষ্ঠানের শ্যুটিং সেরেছেন কোয়েল। মা-কে দেবী রূপে দেখে খুদের কী প্রতিক্রিয়া? মুচকি হেসে অভিনেত্রী জানালেন, ‘ছেলে গত বছর মহালয়ায় আমাকে দুর্গারূপে দেখে, মূলত আমার ত্রিনয়ন দেখে ও প্রচণ্ড ফ্যাসিনেটেড হয়ে পড়েছিল। বাকিগুলো ঠিক ছিল, মনে হয়েছিল মায়ের চুল একটু অন্যরকম, শাড়ি-গয়নায় মা-কে একটু অন্যরকম লাগছে। তবে তৃতীয় নয়ন থেকে খুব খুব ফ্যাসিনেটেড ছিল কবীর। শ্যুটিং শেষে বাড়ি আসার পর সেটাই খুঁজছিল। এ বছর ও বুঝতে পেরেছে মা দুর্গা মানে তৃতীয় নয়ন পরতে হবে। তৃতীয় নয়নের মানে বোঝবার মতো বয়স ওর হয়নি। তবে কবীর যতটুকু বুঝতে পারে, সেই মতো করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার নিজের বুদ্ধি, নিজের বিবেচনা এইগুলোই হল তৃতীয় নয়ন’।
আরও পড়ুন-মল্লিক বাড়িতে ঠাকুর দেখতে যান? আরজি কর আবহে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল, যা বললেন কোয়েল
কোয়েলের মেয়েবেলার মহালয়া
মেয়েবেলার মহালয়া মানেই একরাশ স্মৃতি। তাতে ডুব দিয়ে অভিনেত্রী বললেন, ‘মহালয়াটা আমার কাছে আবেগের স্মৃতিজাল। ছোটবেলায় আমার মনে আছে, বাবার আগের দিন রাত থেকেই তোড়জোর শুরু করতেন, রেডিও-তে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার জন্য সব সেট করে রাখতেন। আমরা সব উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। সেই সময় তো এখনকার মতো বোতাম টিপলেই মহালয়া শোনা যেত না। বাবা নিজের উদ্যোগে পরদিন ভোরে মা-কে, আমাকে ঘুম থেকে তুলতেন। এরপর জোরে রেডিও বাজতো, বীরেন্দ্রকৃ্ষ্ণ ভদ্রের সেই কণ্ঠ। গমগমে আওয়াজ, অসাধারণ একটা আবেগ। আসলে মহালয়া বাজছে মানেই তো মা আসছেন দুষ্টের নাশ করতে। ছোটবেলায় মাঝেমধ্য়ে ঘুমিয়েও পড়তাম, বাবা টেনে তুলে দিত। তারপর ডিডি বাংলায় মহালয়া যখন দেখানো হত, সেটা দেখতাম’।
মল্লিকবাড়ির ১০০ বছরের পুজো
অভিনেত্রী জানালেন, ‘এই বছর আমাদের মল্লিকবাড়ির ১০০ বছরের পুজো। পুজো যেমন প্রতি বছর হয়, এই বছরও হবে। যেহেতু একশো বছরের পুজো, অনেক আত্মীয়-স্বজন প্রতি পুজোয় আসতে পারেন না। কিন্তু এই বছর আসবেন, সেই পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করে রেখেছেন। পুজো পুজোর মতোই হবে, তবে উৎসবটা হবে না’।
আরজি করের নির্যাতিতা তরুণী প্রসঙ্গে কোয়েল
আরজি করের নির্যাতিতার সুবিচার চেয়ে কোয়েল বলেন, ‘সবাই আমরা মন খারাপের জায়গায় আছি, প্রতি মুহূর্তে প্রার্থনা করছি তিলোত্তমা যেন সুবিচার পায়। যখনই হবে, কী বলব… তার থেকে বেশি আর কী চাইতে পারি? প্রথম যখন আরজি করের ঘটনা ঘটে, সেইদিন থেকে একটা দিন এমন যায়নি, যে আমি ওই মেয়েটির আত্মার শান্তি কামনা করি, তার জন্য সুবিচার চাইনি’।
আরও পড়ুন-খাকি উর্দিতে দাবাং অবতার! টেক্কার ক্লাইম্যাক্স নিয়ে বড় খোলসা সৃজিতের
তাঁর আরও সংযোজন, ‘মায়ের কাছে প্রার্থনা করি তিলোত্তমা-কাণ্ডের মতো আর কোনও ঘটনা যেন পৃথিবীতে ঘটে। কোনও বাবা-মা যেন এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে না যায়, যেটা ভালো লাগল যে আমাদের গোটা শহর একসঙ্গে দৃঢ়ভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদে,তিলোত্তমার জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে পথে নেমেছে। আবারও বলছি, এই বছর উৎসব হবে না, তবে পুজো হবে’।