শুক্রবার রাতে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে নেট-নাগরিকদের, যখন দেখা যায় কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে সম্বর্ধণা দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। একদিন যে মানুষটা শাসক দলের ডাকা সব অনুষ্ঠান, তা কার্নিভ্যাল হোক বা পুজো, বয়কটের ডাক দিয়ে এসেছেন, সেই মানুষটা কেন গেলেন ছবি-উৎসবে, উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন! এদিকে ব্যক্তগতভাবেও নন্দী উপাধির এক সাংবাদিকের সঙ্গে রীতিমতো তু তু ম্যায় ম্যায়-তে জড়িয়েছেন তিনি।
শনিবার টলিউডের প্রযোজক রাণা সরকার ফেসবুকে লেখেন, ‘নন্দ আর নন্দীর অন্ধিসন্ধি দেখে ফন্দিটা বোঝা যাচ্ছে না। সিনেমা হলে লাস্ট সিনে এদের বিয়ে হয়ে যেত। এখন দু হাত বন্দি হয় কি না, দেখার অপেক্ষায় থাকবে জাতি।’
বলা বাহুল্য, কারও নাম নেননি তিনি এই পোস্টে। তবে পেশায় অভিনেতা ও ডাক্তার কিঞ্জল এসে মন্তব্য করেন, ‘দাদা আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করি। প্লিজ এই ধরনের কথা না বললেই ভালো হবে। আপনাকে অনুরোধ, আমি বিবাহিত, আমার বউকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি, তাই এই ধরনের লেখাতে একটু কষ্ট হয়। অনেকেই লিখেছেন অনেক কিছু। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু আপনাকে পছন্দ করি, শ্রদ্ধা করি। ভালোবাসি। তাই যদি পোস্টটা তুলে নেন, ভালো হয়।’
আরও পড়ুন: চায়ের দোকানে কাজ, রোজগার মাসে ৩ হাজার! কেবিসিতে বড় জয় বাংলার ছেলের, কত টাকা পেলেন মিন্টু
তবে কিঞ্জলের করা এই অনুরোধ ধোপে টিকল না। জবাবে রাণা জুড়লেন, ‘তুমি আমাকে শ্রদ্ধা করা বন্ধ করে দাও প্লিজ। এই বন্ধন আমার সইবে না’। জবাবে কিঞ্জল জুড়লেন, ‘এতে (শ্রদ্ধা করা) আমার কিছু করার নেই।’ সঙ্গে আরও লেখেন, ‘অনুরোধটি রাখলে ভালো হয়। (হাত জোড় করার ইমোটিকন)।’
তাতে রাণা জবাব দেন, ‘তোমাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তোমার কোনো কাজ কখনো দেখিনি। সবার উপর তোমার নামও নেইনি। তোমার অনুরোধ মাঠে মারা গেল ভাই।’ যদিও পরে দেখা যায় কমেন্টটি আর নেই রাণার পোস্টে। প্রযোজকের পোস্ট সরাতে না পারলেও, নিজের মন্তব্যটি সরিয়ে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: ‘মিত্তির বাড়ির’ মেজ বউর বিয়েতে আদৃত, রইল পৌলমীর মালা বদল থেকে সিঁদুর দানের ছবি
এই নিয়ে রাণার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বললেন, ‘না আমি সরাইনি! কী বলব বলো তো। আমি মজা করেই করেছিলাম পোস্টটা। কারও নামও নেইনি ওখানে।’
চলচ্চিত্র উৎসবে, যা তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে ডাক্তার আন্দোলনের প্রধান মুখ কিঞ্জল নন্দের উপস্থিতি কি তাঁকে অবাক করেছে? রাণাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘আমিও কিন্তু গেছি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। আমি আরজি কর নির্যাতিতার হয়ে বিচার চেয়েছি, আন্দোলনকেও সমর্থন করেছি। আমি যদি মেন্টাল স্টেটে থাকি, আমি সরকারের সঙ্গে কো-অপরাট করব না, সেখানে আমি আমার অন্য একটা স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে গিয়ে সরকারের সঙ্গে হাত মেলাব কি না! দেখো, সরকার কারও না, সরকার সবার। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালও সবার। কিন্তু আমার অবস্থান কী, সেটা স্পষ্ট করতে হবে!তৃণমূল সরকারের সব ভালো ওই আরজি কর ইস্যুটা ছাড়া, নাকি তৃণমূল সরকারের সব খারাপ, এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ছাড়া।’
‘এরকম নয় তো, তোমার সিনেমা না থাকলে, তুমি বয়কটের ডাক দিতে? গতবার চলচ্চিত্র উৎসবে আমার সিনেমা ছিল, এবার নেই। তাও তো আমি গেছি। আবার আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদেও গেছি। এরকম না হয় আমি ডাক্তারি করছি যখন সরকারের বিপক্ষে আর অভিনয় করছি যখন সরকারের পক্ষে। আমার কি দ্বৈত সত্তা ফুটে উঠছে না?’, আরও প্রশ্ন রাখলেন রাণা।