বুধবার রাতে শ্যামবাজারে আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চাইতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত! ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান তোলা হয়।এখানেই থামেনি একদল জনতা। এরপর রীতিমতো অভিনেত্রীর দিকে তেড়ে আসে একদল জনতা। গাড়ির উপর চড়াও হয় তারা। উড়ে আসে জলের বোতল, জুতো!
এমন মারমুখী পরিস্থিতি থেকে ঋতুপর্ণাকে উদ্ধারের দায়িত্ব ছিল এই মানুষটার কাঁধে। তিনি রাহুল দাস। অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। ঋতুপর্ণার ছায়াসঙ্গীও বলা যায় তাঁকে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঋতুপর্ণার সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। গতকালের বর্বরচিত ঘটনা সম্পর্কে জানতে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল রাহুলের সঙ্গে।
কয়েক ঘণ্টা আগে ঘটা সেই ঘটনার ক্ষত দগদগে রাহুলের মনেও। বললেন, ‘সাধারণ মানুষ তো একজন মহিলার জন্য প্রতিবাদ করতে গেছে। সেখানে আরেক মহিলার সঙ্গে এই ধরণের আচরণ? এমন হেনস্থা? দিদি তো প্রতিবাদ করতেই গিয়েছিল। দিদির খুব খারাপ লেগেছে। সাদা মনে দিদি প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল…রাস্তায় বসে মোমবাতিও জ্বালাল। তারপর যা ঘটল….এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না’।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় ঋতুপর্ণাকে বাঁচাতে গিয়ে চোট পেয়েছেন রাহুল। সেই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'দিদি ঠিক আছে এটাই আমার শান্তি। আমাকে নিয়ে ভাবিত নই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার মহিলারা আমার গায়ে হাত তুলেছে, আমি তাদের উপর পালটা হাত তোলা তো দূর, তাদের স্পর্শও করতে পারব না। ওদের (হামলাকারীদের) মধ্যে অনেকে কাল মদ্যপ অবস্থায় ছিল। আমাদের গাড়িটা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দিদিকে ওখান থেকে বার করে আনতে পেরেছি এটাই স্বস্তির'। শ্যামবাজার থেকে সোজা লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে পৌঁছান ঋতুপর্ণা।
আক্ষেপের সুরে রাহুল বলেন, ‘দিদি রাজনীতি করেন না। রাজনীতি ওঁনার পছন্দ নয়। লোকে ওঁনাকে ট্রোল না করে, ওঁনার উপর আক্রোশ না দেখিয়ে সেই ফোর্সটা যদি অভয়ার বিচারের জন্য কাজে লাগায়, তাহলে বোধহয় ভালো হবে। দিদি খুব কষ্ট পেয়েছে'।
জানা গিয়েছে, ঋতুপর্ণা কোনওরকম পরিকল্পনা ছাড়াই গতরাতে শ্যামবাজারে পৌঁছান। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, এরপর গাড়ি থেকে নেমে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদে শরিক হন। হঠাৎ করেই ভিড়ের মধ্যে শুরুতে এক মহিলা ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান তোলেন। আস্তে আস্তে সেই রব জোরালো হয়। ঋতুপর্ণা সেখানে থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিলেন। আচমকাই একদল মানুষ চড়াও হন অভিনেত্রীর উপর।
অভিনেত্রীর দেহরক্ষী বলেন, ‘ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কত বড় মনের মানুষ সেটা আমরা জানি। উনি এই অপমান, হেনস্থা ডিজার্ব করেন না। উনি যবে থেকে কলকাতায় ফিরেছেন, পথে নেমে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেছেন। আর শাঁখ বাজানো নিয়ে যে ট্রোলিং, সেটাও তো কাম্য নয়। উনি ওই সময় বিদেশে ছিলেন। তাও তো আন্দোলনকারীদের পাশে থাকতে চেয়েই ওই ভিডিয়োটি করেন। জানেন, কাল নিজের চোখে দেখলাম ওই আন্দোলনকারীদের অনেকে অভয়ার ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে, এটা কোন ধরণের আন্দোলন? কী ধরণের সম্মান প্রদর্শন?'
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই উত্তেজিত পরিস্থিতিতেও মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলেন ঋতুপর্ণা। পালটা টুঁ শব্দটি করেননি তিনি। সব অপমান, গালিগালাজ, মুখ বুজে সহ্য করেছেন। এই ঘটনায় ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই ঋতুপর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে মুখ খুলেছেন।