বেশ কয়েকদিনের টালবাহানার পর ছন্দে ফিরেছে টলিপাড়া। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে শ্যুটিং। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিচালক-ফেডারেশের ঝামেলা মিটেছে। যদিও বিজেপি ঘনিষ্ঠ অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলছেন অন্যকথা। তাঁর সাফ কথা, 'ছাই চাপা দেওয়াকে মিটে যাওয়া বলে না। সমস্যা থেকে গেলো, আগুন আবার জ্বলবে।'
কিন্তু কেন এমন মনে হয়েছে রুদ্রনীল ঘোষের? এবিষয়ে কথা বলতে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে রুদ্রনীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রুদ্রনীল বলেন, ‘টেকনিশিয়ান-আর্টিস্ট, প্রডিউসর, ডিরেক্টর, এই ৪ জন ছাড়া অডিও ভিজুয়্যালের কাজ অসম্ভব। এদের কোনও ১ পক্ষেরই মতামতে ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে না। বর্তমান রাজ্য সরকারের ভুল শিল্পনীতি, বাণিজ্যনীতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আর ফেডারেশনের নীতির ফলে প্রযোজকরা লাভের মুখ দেখছেন না, ফিরে যাচ্ছেন। তাই খরচ কমাতে হবে। ফেডারেশনের নিয়ম-নীতি শিথিল করতে হবে। আর ফেডারেশনের মাথায় বসে আছেন, তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই, আরেক তৃণমূল নেতা স্বরূপ বিশ্বাস। যিনি আবার অনেকগুলো অটো ইউনিয়নের সভাপতি। যিনি পশ্চিমবঙ্গে অটো চালান, তাঁকে যদি টলিউড চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তো অ্যাক্সিডেন্ট হবেই। আর যাঁরা সেখানে আছেন, সকলেই আহত হবেন। বহু প্রযোজক এরাজ্যে আসছেন না শুধু ফেডারেশেনর তালিবানি ফতোয়ার জন্য।'
রুদ্রনীলের প্রশ্ন, পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে নেওয়া হবে কি হবে না, সেটা ফেডারেশন ঠিক করে দেবে! এটা তো পরিচালকের অসম্মান। তবে রাহুলকে ধরেই আন্দোলন হল, ইন্ডাস্ট্রির সমস্যার কথা উঠে এল, তবে সেটা নবান্নে গিয়ে মেটার কোনও কারণ দেখি না। টলিউডে বসেই প্রতিটি সংগঠনের তরফে প্রতিনিধে রেখেই তো মিটিয়ে নেওয়া যেত। আর সবথেকে বড় কথা, এই আলোচনায় শুরু থেকেই প্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটরদের যে সংস্থা ইম্পা, তাঁদের কেন আড়াল করা হল জানি না! প্রযোজকরাই তো আসল, তাঁরাই তো টাকা ঢালেন। আসলে গণ্ডোগোলটাকে জিইয়ে রাখা হল। এটা তৃণমূলের পরিকল্পিত চিত্রনাট্য। মুখ্যমন্ত্রী চটকরে সমস্যা মিটিয়ে দিলেন। পরিকল্পিত চিত্রনাট্যে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতল তৃণমূল। ফলাফলও জানাল তৃণমূল। আসলে সবই থোড় বড়ি খাড়া খাড়া বড়ি থোড়'।
স্পষ্ট বক্তা রুদ্রনীলের কথায়, ‘নবান্নের বৈঠকে কাদের ডাকা হল? সবকিছুর ঊর্ধে থাকা সম্মানীয় দুই মানুষ গৌতম ঘোষ ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। যাঁরা কিনা আসন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের চেয়ারপার্সন এবং কো-চেয়ারপার্সন। তাঁরা নাকি এই বৈঠকে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবেন, তাঁদের তো ইতিমধ্যেই পদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা রাজ্য সরকারের সম্মানার্থে এমনিতেই কোনও কঠিন কথা বলতে পারবেন না। অথচ যাঁরা শুরু থেকে সমস্যা নিয়ে আওয়াজ তুললেন, সেই রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে মিটিংয়ে ডাকা হল না। অরিন্দম শীলকেও ডাকা হল না। এমনকি যাঁর ছবি নিয়ে গণ্ডোগোল সেই প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাকেও ডাকা হয়নি, ইম্পাকেও না।'
রুদ্রনীলের কথায়, ‘আসলে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের যে লড়াই, এটা সেটারই একটা মেকআপ করা লুক। আসলে এটা তৃণমূলের সাংসদ দেব, তৃণমূলের বিধায়ক রাজ, আর অন্যান্য পরিচালকরা যাঁরা প্রচ্ছন্ন তৃণমূলের নিরব সমর্থক, তাঁদের সঙ্গে টালিগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ অরূপ বিশ্বাস-স্বরূপ বিশ্বাসের লড়াই। মিটিংয়ের পর সকলেই বলবেন দারুণ, তবে মনে মনে দাঁড় কিড়মিড় করবেন। কারণ আওয়াজ তোলার তো জায়গা নেই। কারণ, সকলকেই সিনেমা চালাতে হবে। শ্যুটিংয়ের জন্য পুলিশের অনুমতি লাগবে। তাই সকলেই এখন তৃণমূল। নাহলে তো নন্দনে সিনেমা চলবে না। মিঠুন চক্রবর্তীকে নেওয়ার জন্য দেবের ছবিও কিন্তু নন্দনে চলেনি। আবার সায়নী ঘোষ অনীক দত্তের ছবিতে কাজ করেছেন, সেই ছবিও নন্দনে চলেনি। আর আমার ছবি তো বাদই দিলাম।’
রুদ্রনীলের কটাক্ষ, কমিটি তৈরি করে স্বরূপ বিশ্বাসের ফেডারেশনের নিয়ম বদলানো হবে, সেই কমিটির দায়িত্বে দাদা অরূপ বিশ্বাস। তিনি তিনমাস সময় নিয়েছেন। তাই নিয়ম কি আদৌ বদলাবে, নাকি একই রেখে একটু অদলবদল হবে। আর এই তিনমাসে অনেককিছুই ঘটে যাবে। অথচ এই নিয়ম প্রতিটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা বসে ১৫ দিন কিংবা ১ মাসেই বদলাতে পারতেন। তাই নিয়ম কি আদৌ বদলাবে? এই তিনমাসে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সবই আছে, আসলে তাই আসল সমস্যা চাপা পড়েই থাকবে ছাই চাপা আগুনের মতো।'