টলিউডের নতুন বউ তিনি। সাত মাসের সংসার সন্দীপ্তার। টেলিভিশনের দুর্গা এখন বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয় মুখ। ১৬ বছরের অভিনয় কেরিয়ারের আক্ষেপ, সৌম্যর সঙ্গে দাম্পত্য থেকে নতুন ওয়েব সিরিজ নষ্টনীড় ২ নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা জমালেন সন্দীপ্তা।
বিয়ের পর নতুন জীবন কেমন কাটছে?
সন্দীপ্তা: সত্যি, সবটাই নতুন। প্রিয় মানুষের সঙ্গে জীবন কাটানো শুরু হয়ছে, কার না ভালো লাগে। বাবা-মা'ও খুব খুশি।
নষ্টনীড় ২ মুক্তি পেয়েছে। অপর্ণার ফিরে আসা দুর্দান্ত সফল। কী বলবেন?
সন্দীপ্তা: বিশ্বাস করো, গত বছর নষ্টনীড় শেষ হওয়ার পর থেকে আমার সঙ্গে যার দেখা হয়েছে সেই জানতে চেয়েছে সিজন ২ কবে আসছ। অবশেষে এখন দর্শক দরবারে, তাঁরাই জানাবেন কেমন লাগল নষ্টনীড় ২। ঋষভের সঙ্গে যা ঘটছে সেটা কী অপর্ণাই শোধ তোলবার জন্য করছে? ঋষভকে কি আদেও অপর্ণা ক্ষমা করবে, সেই সব জানতে হলে দেখতে হবে নষ্টনীড় ২। নষ্টনীড় দেখে মানুষ সেই গল্পটার সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছিল, সেই কারণেই তা দর্শক পছন্দ করেছে। পজেটিভ রিউভস পেয়ে ভালো লাগছে।
টলিউডে কি নারীকেন্দ্রিক কাজ কম হচ্ছে?
সন্দীপ্তা: এখন তো টলিউডে কাজই কম হচ্ছে। আগে যত সিনেমা হত, তেমন বড় ছবির সংখ্যা কমেছে। ওয়েব সিরিজ বা মেগা সিরিয়ালের তুলনায় নারীকেন্দ্রিক কাজ বড় পর্দায় তুলনায় অনেক কম হয়। সংখ্যাটা বাড়লে তো আমরা নিঃসন্দেহে উপকৃত হব।
২০০৮ সালে শুরু, নয় নয় করে ইন্ডাস্ট্রিতে ১৬ বছর পার করলেন, কোনও আক্ষেপ রয়েছে?
সন্দীপ্তা: অনেক কিছুই তো না পাওয়া থাকে, আমি সবসময় জোর দিই আমার কাছে কোনটা আছে। তাই সেই অর্থে কিছু আক্ষেপ নেই, তবে আরও অনেক কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। সব শিল্পীরই খিদে রয়েছে, আমারও আছে।
সিনেমায় সেভাবে কাজের সুযোগ আসেনি, এই আক্ষেপ নেই?
সন্দীপ্তা: বড় পর্দায় কাজের অফার পেয়েছি, তবে এমন অফার আসেনি যে এক কথায় হ্যাঁ বলে দেব। হালে আপিস করলাম, বা একেন বাবু রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান করলাম। একথা ঠিক, আমি যে পরিমাণ মেগা করেছি বা ওটিটি প্রোজেক্ট করেছি তেমন সুযোগ বড় পর্দায় আসেনি। তবে অপেক্ষা করতে আমি ভালোবাসি। মেগা সিরিয়াল করতে করতে যখন ভাবলাম এবার থেমে অন্য কিছু চেষ্টা করব। যাতে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি, সেই সময় ওয়েব সিরিজের রমরমা শুরু হয়। প্রতিদানের পরপরই আমার আস্তে লেডিজ দিয়ে ওটিটি জার্নি শুরু।
সন্দীপ্তার কি পিআর খারাপ? নিজেকে ১০-এ কত নম্বর দেবেন?
সন্দীপ্তা: ১০-এর মধ্যে মেরে কেটে ৩-৪! তবে আমি কিন্তু কাজ চাই, বড় বড় পরিচালকদের সঙ্গে যখন দেখা হয়, তাঁরা বলেন আমার কাজ ভালো লাগে। আমার সঙ্গে কাজ করতে চান। আমি যখন পালটা বলি, তাহলে কাজ হচ্ছে না কেন? তাঁরা বলেন, ‘একটু অপেক্ষা কর, সেরকম চরিত্র এলে নিশ্চয়ই তোকে ফোন করব।’
এই তালিকায় কী সৃজিত-কৌশিক কিংবা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রয়েছেন?
সন্দীপ্তা: (হাসি) হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন এই তিনজনেই আমাকে বলেছে নিশ্চয় একসঙ্গে কাজ হবে। আমিও আশাবাদী নিশ্চয় কাজ হবে কোনও একদিন।
এত বছর কাজের পরেও যখন নিন্দকরা বলে, সৌম্যর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জোরে কাজ পাচ্ছেন, খারাপ লাগে শুনতে?
সন্দীপ্তা: যারা বলছেন একটু চোখটা খুলে ভাবুন। যারা এসব বলে তাদের চোখে একটা পর্দা পরে আছে। সেই পর্দাটা তারা সরাতে চান না। সন্দীপ্তা সেন ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছে, দর্শক জানে সন্দীপ্তা কী কাজ করে এসেছে। ওয়েব সিরিজও আমি অনেক আগে শুরু করেছি। সৌম্যর কাজটা বিজনেস, এটা আমি আগেও বলেছি। যারা মানতে না-রাজ তারা এটা ভেবে খুশি থাকুন, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। সত্যি কেউ জানতে চাইলে বলব, সৌম্য ব্যবসাটাই দেখে, ওর কাস্টিং-এ কোনও হাত নেই।
মিটু-র মতো বিষয় ঘিরে তৈরি নষ্টনীড় সিরিজ, কেরিয়ারের শুরুতে তোমায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে?
সন্দীপ্তা: সৌভাগ্যবশত আমাকে কখনও কোনও খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। সেই সময় তো হ্যাশট্যাগ মিটু ছিল না। কিন্তু যদি আমার সঙ্গে খারাপ কিছু হত, তাহলে নিশ্চয় সন্দীপ্তা সেন প্রতিবাদ করতে হত। চুপ করে থাকার মেয়ে নয় সন্দীপ্তা সেন।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অহেতুক ট্রোলিং, হালে তোমার বিয়ে ঘিরেও অনেক কটাক্ষ ধেয়ে এসেছে। সন্দীপ্তা সেটা কীভাবে সামাল দেয়?
সন্দীপ্তা: আমি আসলে পাত্তা দিই না। এটা আমার ছোট থেকে। আজকাল তো সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকে ট্রোল করে। ছোট থেকেই বাবা-মা এইভাবেই আমাকে বড় করেছে। আমি তো ছেলেদের সঙ্গে খেলে বড় হওয়া মেয়ে, পাড়ার লোকে অনেক খারাপ কথা বলত। বাবা-মা বলত, নিজের যেটা ঠিক মনে হবে করবি। সমাজের সবাই তোকে পছন্দ করবে সেটা হতে পারবে। তোমার ফ্যামিলি ভ্যালু অনেক উঁচু, সেটার কথা মাথায় রাখবি। তাই আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কী বলল, সেটা আমাকে কোনওভাবেই প্রভাবিত করে না।
ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো বন্ধু পাওয়া যায়?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ, ভালো বন্ধু হয় তবে প্রচুর বন্ধু হয় এমনটা নয়। আমার কিন্তু স্কুল-কলেজেও প্রচুর বন্ধু ছিল না। ওই হাতে গুণে চার-পাঁচ জন। তাহলে বুঝতেই পারছো, স্কুল কলেজে যদি এত কম সংখ্যক বন্ধু হয় তাহলে ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ক'জন বন্ধু হবে।
এখন ইন্ডাস্ট্রির কারা সন্দীপ্তার কাছের বন্ধু, অবশ্যই, সৌম্য বাদে?
সন্দীপ্তা: আরে না না! সৌম্য তো আমার বর (হাসি)। তবে ওর সঙ্গে অন্যরকম বন্ধুত্বটা সারাজীবন থাকবে। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কাছের বন্ধু বলতে তনুকাদি, বয়সে অনেক বড় তবে খুব কাছের মানুষ। অদিতিদি (নষ্টনীড় পরিচালক) অবশ্যই। অনেকগুলো কাজ করলাম। আর মিমিও খুব কাজের।
দাম্পত্যের পর জীবনে কী বদল এল?
সন্দীপ্তা: এই রে! আমি তো বুঝতেই পারিনি এখনও কোনও পরিবর্তন। কারণ সৌম্য আর আমি কাজ নিয়ে ব্যস্ত, প্রচুর কিছু বদলায়নি। সৌম্যর বাবা-মা মারা গেছেন, আমরা তো একাই থাকি দুজনে, তাই খুব বেশি বদল হয়নি কিছু।
কে কার কথা বেশি শোনে?
সন্দীপ্তা: দুজনেই দুজনের কথা শুনি। আমি একটু বেশি বলি, এটা খাবি না কিংবা ওটা পরবি না। সৌম্য় আমাকে একা কোনও কাজ করতে দেয় না। যখন রান্না করার হয়, ও একটা পদ করল আমি আরেকটা করলাম। কিংবা অনেক সময় তো আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতেও দেয় না।
বিয়ের পরেও তুই-তোকারি চালু আছে?
সন্দীপ্তা: (লাজুক হাসি) আসলে আমি ওকে তুই বলি। আমাকে ও তুমি বলে।
নষ্টনীড় সিরিজে দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়েন উঠে এসেছে। তোমার কাছে সম্পর্কে রেড ফ্ল্যাগ কোনটা?
যদি সে তোমাকে সম্মান না করে, তাহলে সম্পর্ক থেকে সরে আসুন। আমরা তো সবসময় বলি আসি, সে আমাকে ভালোবাসে, সে আমার কেয়ার করে। কিন্তু সম্মান করাটা খুব জরুরি। যদি সম্পর্ক থেকে সেটা চলে যায়, তাহলে সেটাই সবচেয়ে বড় রেড ফ্ল্যাগ।
সৌম্যর কোন স্বভাবে সন্দীপ্তা মুগ্ধ? বরের কোন স্বভাবটা বদলাতে চাইবে?
আসলে ভালো লাগার তালিকাটা আন-এন্ডিং। মানুষটা খুব সৎ। একটু বেশিই সৎ। আর খারাপ লাগা… বেশিকিছু না রেগুলার একটু এক্সারসাইজ করুক। তাহলেই হবে। (হাসি)
জন্মদিনের তো একমাসও বাকি নেই। কী পরিকল্পনা?
বিয়ের পর দুজনেই খুব ব্যস্ত। আমাদের ঠিকভাবে ঘুরতে যাওয়া হয়নি। সামনেই আমার জন্মদিন, নেক্সট ট্রিপটা সৌম্য প্ল্যান করছে, সেটা পাহাড় না সমুদ্র না জঙ্গল আমি কিছুই জানি না।