সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে সৌরভ দাসের। তাছাড়াও চলছে ছবির কাজ। কিন্তু চলতি মাসেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর নতুন ছবি ‘১০ই জুন’। এত কিছু একসঙ্গে কীভাবে সামাল দিচ্ছেন অভিনেতা? হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে সৌরভ এই প্রসঙ্গে জানান, সবটা নিয়ে শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছেন না তাঁর।
নায়ক বলেন, ‘এত যাতায়াতের ফলে শরীরটা খুব একটা ঠিক নেই। তার মধ্যে সেলেব্রেটি ক্রিকেট লিগ চলছে। আগেরবার আমরা চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলাম এবারও সেই আশা নিয়েই যাওয়া, সেই খাটুনি করা, যাতে এই বছরও আমরা জিততে পারি। দেখা যাক কী হয়? প্রথম দুটো ম্যাচে জয় এসেছে। দুটি ম্যাচ এখনও বাকি একটি মুম্বইয়ের সঙ্গে আর একটি তেলেগুর সঙ্গে, বেশ কঠিন হতে চলেছে ম্যাচগুলো। তবে যদি জিতে যাই তাহলে সেমি ফাইনালে পৌঁছতে পারব। কিন্তু ছবির প্রমোশন তো করতেই হবে। কারণ চলতি মাসের ২১ তারিখে আমাদের ছবির রিলিজ।'
আরও পড়ুন: 'পথ চলা শুরু...', ১২ বছরের সম্পর্ক ভেঙেছে! ফের কাছাকাছি সৌপ্তিক-রণিতা, জুড়ছে ভাঙা প্রেম?
তবে এই ছবিতে তিনি কেবল নায়ক নয়, গায়কও বটে। মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এসেছে '১০ই জুন'-এর গান 'ব্যাথা থামে না', আর সেই গানটি গেয়েছেন সৌরভ। ‘মন্টু পাইলট’ সিরিজের র্যাপের পর আবার তাঁর গাওয়া গান এই ছবিতে। নায়ক জানান প্রযোজকের স্বপ্ন ছিল যাতে তিনি এই ছবিতে গান করেন, আর তাঁর কথাতেই এই ছবিতে গান গাওয়া। এই গানের জন্য আলাদা করে কোনও পারিশ্রমিকও নেননি সৌরভ। তাছাড়া গান করতে খূব ভালোবাসেন অভিনেতা। তাই ইতিমধ্যেই সঙ্গীত পরিচালক বন্ধু কুন্তল দের সঙ্গে নিজের দুটি গানও বানিয়ে ফেলেছেন তিনি।
কিন্তু কাজের এত চাপের মধ্যে গানের চর্চাটা কীভাবে চালিয়ে যান অভিনেতা? এই প্রসঙ্গে গায়ক সৌরভ বলেন, ‘আমি একটু ওয়ার্কোহলিক, আমার স্ত্রী (দর্শনা বণিক)-ও এটা বলেন। আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকতে পছন্দ করি। সে ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা হয় না। আর যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে সব কিছুর জন্যই সময় বেরিয়ে যায়।’
তারপরই অভিনেতা জানান যে গান নিয়ে তাঁর এগিয়ে যাওয়ার অনেকটা ইচ্ছে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এর জন্য পথ চলা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি গানের শো করা শুরু করেছি। প্রায় দেড় ঘন্টা করে মঞ্চে গান করার চেষ্টা করছি। তবে আরও সুন্দর ভাবে আমার ব্যান্ড নিয়ে গান করার একটা পরিকল্পনা চলছে।’ তাঁর কথায়, ‘খুব তাড়াতাড়ি গান নিয়ে আসব। ইতিমধ্যেই আমার নিজের সুরে দুটো গান বানানোও হয়ে গিয়েছে।’
‘১০ই জুন’-এর হাত ধরে টলিউড নতুন জুটি হিসেবে পাচ্ছে সৌরভ ও সৌমিতৃষা কুন্ডুকে। তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন তো দর্শকরা পর্দায় দেখবেন কিন্তু অফস্ক্রিন সমীকরণটা ঠিক কেমন? ‘কাজের ক্ষেত্রে রসায়নটা তো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ওঁর সঙ্গে দারুণ আড্ডা হত। সৌমিতৃষা প্রচন্ড এক্সসাইটেড একটি মেয়ে, খুবই কিউট। সেই বিষয়গুলো আমাদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আর আমি এমনতেও সকলের সঙ্গে ইয়ার্কি ঠাট্টা করি, তো সব মিলিয়ে বেশ মজা করে কাজ করেছি।’
তবে সৌরভ ও সৌমিতৃষার কেরিয়ারের ক্ষেত্রে একটা বড় মিল হল দু'জনেরই বিনোদন জগতে কাজ শুরু মেগার হাত ধরে। তাই কাজ করতে গিয়ে কি একে অপরকে সেই জায়গাটা থেকে কানেক্ট করতে পারলেন তাঁরা? ‘না, এই নিয়ে আসলে কোনও আলোচনাই হয়নি। প্রত্যেকের নিজস্ব একটা জার্নি থাকে, তাই সেটা নিয়ে আমাদের কথা হয়নি। তবে হ্যাঁ, সৌমিতৃষা বেশ ভালো কাজ করছেন, কিছু দিন আগে অ্যাওয়ার্ডও পেলেন। ভালো অভিনেতা পেয়েছে ইন্ড্রাস্টি। ওঁর আগামী জীবনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল, তিনি আরও ভালো ভালো কাজ করুক।’
প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে তৈরি সমস্যার জেরে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না নায়িকা। একসঙ্গে কাজ, কিন্তু প্রমোশনে নায়িকা নেই, তাঁকে কি মিস করছিলেন সৌরভ? এই প্রশ্নে অভিনেতার জবাব, ‘হ্যাঁ, একটা ছবি যখন আমারা একসঙ্গে করছি তখন মিস করাটা তো খুব স্বাভাবিক। তবে কেবল সৌমিতৃষা নয়, আমি তো কৌশিক সেনকেও মিস করছি।’ সবাই মিলে থাকলে বেশ ভালো লাগে।'
'১০ ই জুন'-এর প্রযোজনা সংস্থা একেবারে নতুন, পরিচালক হিসেবে এটাই রূপক চক্রবর্তীর প্রথম কাজ। ফলে বলাই যায় একবারে নতুন টিমের সঙ্গে কাজ করছেন অভিনেতা। তবে সৌরভকে সব সময়ই নতুনদের পাশে থাকতে দেখা। নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার এই ভাবনাটা কি খুব সচেতন ভাবে? এই প্রসঙ্গে নায়ক বলেন, ‘একটা সময় আমি নতুন ছিলাম, সেই সময় ইন্ড্রাস্টির কিছু মানুষ আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। যাঁরা ভেবেছেন যে সৌরভ দাসকে নিয়ে করা ছবিতে টাকা দেবেন, তাঁদের কাছে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি নতুনদের সুযোগ দেওয়ার কেউ নই। আর যাঁরা নতুন কাজ আসেন তাঁরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসেন, সেক্ষেত্রে যদি তাঁদের স্বপ্নের নৌকাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে আমি একটু দাঁড় বেয়ে দিতে পারি তাহলে তো ভালোই হয়। কারণ আমি আমার স্বপ্নের নৌকায় যখন উঠেছিলাম তখন দাঁড় বাওয়ার মানুষ খুব বেশি ছিলেন না। যে কয়েকজন ছিলেন তাঁদের আমি মনে রেখে দিয়েছি, আর সারাজীবন তাঁদের মনে রাখব। তবে আমি যে সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, নতুন যাঁরা কাজ করতে আসছেন তাঁরা যাতে এইগুলোর মুখোমুখি না হন সেটাই চাইব। সেই কারণেই তাঁদের পাশে থাকা।’
কিন্তু নতুনদের ক্ষেত্রে বাজেট একটা বড় বিষয়। এই প্রসঙ্গে সৌরভ বলেন, 'আমি যে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকি তাঁর থেকে অনেকটাই কমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি নতুনদের থেকে, তিন ভাগের একভাগ হয়তো, যেটা তাঁরা পারবেন। এই বিষয়টা এমনটাই রাখি যেটাতে আমারও অসুবিধা হবে না, আবার প্রযোজকদেরও অসুবিধা হবে না।' কিন্তু এই বিষয়টা কেরিয়ারে তো প্রভাব ফেলতে পারে… এই প্রসঙ্গে নায়কের সাফ জবাব, ‘কোনও কিছুই কোনও কিছুকে প্রভাবিত করে না। যেটা হওয়ার সেটা হয়। এটাই আমি বিশ্বাস করি।’