সুদীপ মুখোপাধ্যায় মানেই বহু দর্শকদের চোখে খলনায়ক। কিন্তু বাস্তব জীবনে তার সম্পূর্ণ বিপরীত অভিনেতা। জীবনের ইতিবাচক দিকগুলি নিয়েই বাঁচতে ভালোবাসেন তিনি। আর এবার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের 'চিরসখা'র হাত ধরে অনেক বছর পর আবার একটি ইতিবাচক চরিত্রে ফিরছেন সুদীপ। তাই তাঁর ভালোলাগাও অনেকখানি। কিন্তু দর্শকরা এভাবে কতটা গ্রহণ করবেন তাঁকে? সুদীপের জীবনে 'চিরসখা'র সংজ্ঞাটা ঠিক কী? সবটা নিয়ে হিন্দুস্থান টাইমসের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন অভিনেতা।
মেগায় তাঁর চরিত্র ‘স্বতন্ত্র’ ভীষণ ভাবে ইতিবাচক। এত দিন নেতিবাচক চরিত্র করার পর আদ্যপান্ত পজেটিভ চরিত্রে তাঁকে দর্শকরা কতটা গ্রহণ করবেন? প্রশ্নে সুদীপ বলেন, ‘দর্শকরা বেশিরভাগ সময়ই আমাকে নেগেটিভ চরিত্রে দেখেছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু পজেটিভ চরিত্রও করেছি। তবে আমি যে কোনও চরিত্রই করি না কেন, দর্শকরা আমার করা চরিত্রগুলো নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখান। আর সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি। অনেক বছর পর এরকম একটা পজিটিভ চরিত্র আমি করব। আমার মনে হয় দর্শকরা খুব ভালোবেসেই তা গ্রহণ করবেন। তাঁরাও পাশে থাকবেন আশা করি।’
আরও পড়ুন: বেদাঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কে সিলমোহর খুশির? 'প্রেমের প্রস্তাব…' যা বললেন শ্রীদেবী-কন্যা
দর্শকরা পাশে থাকবেন কিনা তা যদিও সময়ই বলবে। কিন্তু ধারাবাহিকে 'কমলিনী' পাশে সব সময় থাকে পর্দার ‘স্বতন্ত্র’ সুদীপ। দু'জন দু'জনের ‘চিরসখা’। কিন্তু চিরসখা তো চিরদিনের। একটা সম্পর্ক যখন কেউ শুরু করেন, তা চিরদিনের হবে ভেবেই একে অপরের হাত ধরেন। কিন্তু তাও বিচ্ছেদ আসে। অভিনেতার জীবনেও এসেছিল বিচ্ছেদ। প্রথম স্ত্রী দামিনী বেণী বসু সঙ্গে ভেঙে ছিল সংসার। এতটা পথ একসঙ্গে হেঁটে যাওয়ার পর, বিচ্ছেদ অভিনেতাকে কতটা প্রভাবিত করেছিল? এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে সুদীপ বলেন, ‘এটা জীবনের একটা অংশ হিসেবেই দেখা ভালো। প্রেম, ভালোলাগা, ভালোবাসো, ওঠাপড়া, বিচ্ছেদ এগুলো জীবনেরই অংশ। তাই সেগুলোকে আলাদা করে খুব একটা হাইলাইট দরকার নেই। যা কিছু জীবনে নেগেটিভ সেগুলোকে একটু দূরে সরিয়ে রেখে। পজিটিভ দিকটা দেখতে পারলেই বরং অনেকটা ভালো থাকব। আমার জীবনে বিচ্ছেদ হয়েছে সেটা যেমন ঠিক, কিন্তু কী কারণে বিচ্ছেদ হয়েছে সেটা কিন্তু আমি এখন ভুলে গিয়েছি। আমার মনে কেবল ভালো স্মৃতি গুলোই রয়ে গিয়েছে। যাই ঘটে যাক না কেন, সেগুলো সরিয়ে রেখে প্রতিটি মানুষকে শ্রদ্ধা করাটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।’
অভিনেতা আরও বলেন, ‘কেন সম্পর্কটা ভাঙছে সেই প্রশ্নটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনও সম্পর্কের একটা দায়িত্ব থাকে সেই সঠিক দায়িত্বটা পালন না করে আমরা অন্য কিছু করছি কী? আমরা এই বন্ধনটাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি? বা সম্পর্কটার সঙ্গে কতটা জড়িয়ে থাকতে চাইছি সেটা বোঝা খুব দরকার। দায়িত্ব পালন করে সম্পর্কটাকে বাঁচিয়ে রাখা বা তার জন্য কিছু ত্যাগ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: ‘কাজের থেকে বেশি পরিবারকে সময় দিয়েছি…’, ঋত্বিকের সঙ্গে দাম্পত্য নিয়ে অকপট অপরাজিতা
তবে বিচ্ছেদ ভুলে আবারও নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন অভিনেতা। কিছুদিন আগেই তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী পৃথার সঙ্গে বিবাহবার্ষিকীও উদযাপন করেছেন। ১০ বছর ধরে সংসার করছেন তাঁরা। তাই সুদীপের মতে এই উদযাপন কেবল একদিনের নয়। তাঁর কথায়, ‘বিবাহবার্ষিকীর দিন আমরা নানা কারণে একসঙ্গে থাকতে না পারলেও। মধ্যরাতে আমরা নিজেদের মতো করে আমাদের বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছি। তবে আমরা প্রতিটা দিনের প্রতিটা মুহূর্ত উদযাপন করি। আমাদের ১০ বছরের বিবাহিত জীবন। সম্পর্ক আছি প্রায় ১৩ বছর ধরে। ফলে আমরা একে অপরকে খুব ভালো ভাবে চিনেছি। প্রথম থেকেই আমাদের বন্ধুত্বটা খুব গভীর ছিল।'
কিন্তু কেমন করে রোজ সম্পর্ককে উদযাপন করেন নায়ক। প্রশ্নে সুদীপ বলেন, ‘আমরা আড্ডা দেই, গল্প করি, গান শুনি, সিনেমা দেখি। এমনকী পৃথা যদি সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখতে বসে তবেই আমার কিছু দেখা হয়। কারণ আমি ব্যক্তিগত ভাবে বই পড়তে বেশি ভালোবাসি। স্যোশাল মিডিয়া থেকে সিনেমা, সিরিজ, গান সব কিছুতে পৃথাই আমাকে আপডেট করে।’
সুদীপের জীবনে প্রকৃত অর্থেই পৃথা ‘চিরসখা’। তবে স্ত্রী ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন ভালো বন্ধুও আছে তাঁর। অভিনেতার মতে তাঁরাও কিন্তু 'চিরসখা'র থেকে কম কিছু নয়। এই প্রসঙ্গে সুদীপ বলেন, ‘আমার আরও কিছু বন্ধু আছেন। যাঁদের সঙ্গে হয়তো প্রতিদিন যোগাযোগ হয় না, কিন্তু তাঁদের সঙ্গে একবার দেখা হয়ে কথা বলতে বসলে একবারও মনে হয় না যে আমাদের অনেক দিন কথা হয়নি। যে কোনও দরকারে ওঁদের পাশে পাওয়া যায়। আর 'চিরসখা' বলতে আমি এটাই বুঝি, একটা ভরসার হাত।’
অভিনেতার স্ত্রী বা বন্ধুরা তাঁর চিরসখা কিন্তু এই মেগায় যে সম্পর্ক গল্প বলা হয়েছে তা নামহীন একটা সম্পর্ক। এই প্রসঙ্গে অভিনেতার মত, ‘আমরা কোনও নাম দিচ্ছি না সম্পর্কটার। সব সময় যে সব সম্পর্কের নাম দিতেই হবে বা দুটো মানুষকে একটা নাম দিয়ে বেঁধে দিতে হবে, তা কিন্তু সম্ভব হয় না। তার থেকেও পৃথিবীটা অনেক বড়। আর আমাদের ‘চিরসখা’ এরকমই একটা সম্পর্কের গল্প বলবে।’
২৭ জানুয়ারি থেকে স্টার জলসার পর্দায় 'স্বতন্ত্র' হয়ে ‘চিরসখা’য় ধরা দেবেন সুদীপ মুখোপাধ্যায়। তবে এই মেগার পাশাপাশি তথাগত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘রাস’-এও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নজর কাড়বেন অভিনেতা। তবে 'রাস'-এর পর আর আপাতত কোনও ছবি বা সিরিজে কিছুদিনের জন্য কাজ করবেন না তিনি। কারণ মেগার সিডিউল ও থিয়েটার সামলে এই মুহূর্তে নতুন কাজে হাত দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।