RG কর নিয়ে এরাজ্য এখন উত্তাল। তারই মাঝে আরজি করের আন্দোলনরত ডাক্তারদের নিয়ে মন্তব্য করে বিপাকে বিধায়ক, অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। তৃণমূলের ধরনা মঞ্চ থেকে কাঞ্চন মল্লিক প্রশ্ন তোলেন, 'রোগীদের কী অপরাধ? এমন কোনও কাজ আপনাদের করা উচিত নয় যে রোগীরা ডাক্তার ভগবান বলতে দু’বার ভাবেন। ‘যাঁরা কর্মবিরতি করছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে। ভাল। তাঁরা সরকারি বেতন নিচ্ছেন তো নাকি নিচ্ছেন না? এটা আমার প্রশ্ন। বোনাস নেবেন তো? না নেবেন না? এটা আমার প্রশ্ন।’
আর কাঞ্চনের এই মন্তব্য ঘিরেই এখন টলিপাড়ার বিতর্কের ঝড় বইছে। এবার Hindustan Times Bangla-য় কাঞ্চন মল্লিকের মন্তব্য এবং এবার আরজি করের ঘটনায় মুখ খুললেন বিধায়কের অভিনেত্রী স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজ।
কাঞ্চন বিতর্কে ঠিক কী বলেছে শ্রীময়ী?
লম্বা বিবৃতিতে শ্রীময়ী বলেন, ‘কাঞ্চন তো খুব সাধারণ একটা কথা বলতে চেয়েছে। ও তো ভুল কিছু বলেনি। যে মানুষটা জেলা থেকে আসছেন, তাঁর কাছে হয়ত আন্দোলনটা নয়, তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর বাড়ির মানুষটা। একটা গর্ভবতী মহিলা যদি হাসপাতালে যায়, যাঁর প্রসবযন্ত্রণা উঠেছে। তাকে তো তৎক্ষণাৎ অপারেশন করতে হবে। নইলে বাচ্চা-মা কাউকেই বাঁচানো যাবে না। চিকিৎসকদের খারাপ লেগেছে সেটা বুঝলাম। তবে আমাদের অনেক সময় অনেককিছুই খারাপ লাগে, আমরা কিন্তু তাতে প্রতিশ্রুতি থেকে বের হয়ে আসতে পারি না। আমাদেরই যখন কোনও শিল্পীর অপমৃত্যু হয়, তখন আমরা হয়ত ১ ঘণ্টা শান্তি কামনা করি, তারপর ফ্লোরে ফিরে যাই। চরিত্রটাও বদলে যায়। সেই চরিত্রের জন্য কেউ ১ বছর শোক পালন করে না। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণ দিলে তো বিতর্কে তৈরি হবে। আমাদের কাজটা যখন জরুরী, তেমন ডাক্তারদের কাজটাও জরুরী পরিষেবা। কোনও রোগীর পরিবার কিন্তু চাইবে না, তাঁর পরিবারের লোকের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে। সকলের কিন্তু একটাই উদ্দেশ্য আর যেন কোনও অপমৃত্যু না হয়।’
শ্রীময়ী আরও বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলছেন। যাঁদের বক্তব্য পেশ করাটাই কাজ। যাঁরা আসলেই আঁতেল। একটা বক্তব্যকে রাজনীতির জালে ফেলে একটা লোককে কীভাবে অপদস্ত করা যায়, সেটাই তাঁদের কাজ। এটা আমি সব জায়গায় দেখেছি। আমার বিয়ের ক্ষেত্রেও এমনকি আমরা যখন প্রেম করেছি তখনও বড় বড় কথা বলেছেন। কেউ কিন্তু নিজেকে বিচার করেন না। আগের নিজের মেরুদণ্ড সোজা রাখুন, তারপর অন্যের বিষয়ে মাথা ঘামাবেন। তাঁদের নিজেদেরই তো কোনও মেরুদণ্ড নেই। তাঁরা যখন যেমন পান, তেমন লাফান। তাঁদের আসলে কিছু যায়ই আসে না। আবার বাইরে এসে আঁতলানো করে বক্তব্য রাখেন। এই লোকজনের বক্তব্যকে কিছু যায় আসে না। আমি এগুলি ধার্যই করি না। হয়ত তাঁরা ভালো অভিনেতা বা অভিনেত্রী। তবে তাঁদের বক্তব্যে সত্য পাল্টে যায় না।’
শ্রীময়ী তোপ দেগে বলেন, ‘এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা আজ চেঁচাচ্ছেন, তাঁরাই যখন মুখ্যমন্ত্রী টেলি অ্যাকেডেমি অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছেন, তখন সেটা পাওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন। আবার তাঁরাই আজ বলছেন মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ চাই। বুঝতে পারিনা তাঁরা কাকে সাপোর্ট করেন! তাঁরা কি তবে তরমুজের মতো, বাইরে এক, কাটলে আরেক!’
আরজি কর ইস্যুতে শ্রীময়ী
এদিন আরজি করের ঘটনাতেও নিজের মতামত জানান শ্রীময়ী চট্টরাজ। শ্রীময়ী বলেন, ‘আরজি করে যেটা ঘটেছে সেটা সত্যিই মর্মান্তিক, নিন্দনীয়। আমাদের প্রতিবাদ মিছিলে মেয়েটি কিন্তু তাঁর বাবা-মায়ের কোলে ফিরবে না। যাঁর যায় সেই বোঝে। সকলেই কিন্তু সকলের মতো করে সুবিচার চাইছেন। বিচার চাওয়া ভালো, আন্দোলন করা ভালো, সেগুলো সবই ঠিক আছে। তবে এক একটা সময় দেখতে পাচ্ছি, আন্দোলনের নামে গুন্ডামো হচ্ছে। যেমন যেদিন নবান্ন অভিযান হয়, সেদিন আমি শ্যুটিংয়ে যাচ্ছিলাম। তাই রাস্তাতেই ছিলাম, তখন দেখেছি কী অরাজকতা হয়েছে! একটা মানুষের আত্মার শান্তি কামনা করছি, সুবিচার চাইছি। তার মানে রক্তবন্যা বইয়ে দেব নাকি? তুমি অধম হইলে, আমি উত্তম হইব না এমন তো নয়। এটা কিন্তু বিচার চাওয়া হচ্ছে না গুণ্ডামি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যাঁরা রাস্তাঘাটে বের হচ্ছেন, কাজে যাঁদের যেতেই হচ্ছে, তাঁরা ভুক্তোভোগাী। কারণ, বেশিরভাগ লোকজনই তো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাচ্ছেন। আমারই এক পরিচিত মহিলা ভয় পেয়ে মেট্রো স্টেশনে আটকে গিয়েছিলেন। এগুলো তো ঠিক নয়।’
শ্রীময়ীর কথায়, 'আসল জিনিসটা হল সাজা। এটা তো বিচারাধীন। এবার কে দোষী, কে দোষী নয়। কার হাত আছে, কার নেই, এগুলো সবটা নিয়েই আমরা নানান কিছু ভেবে নিচ্ছি। আমাদের কারোর কাছেই কোনও প্রমাণ নেই। এই যে নানান রকম মেসেজ আসছে। হয়ত আমাকেও এখন কেউ বলে দেবেন, তৃণমূল বিধায়কের বউ হয়ে এত কথা বলছেন! আমি কিন্তু দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষভাবেই কথাগুলো বলছি। যে আমরা সবাই বিচারের আশায় আছি। ভিতরে কী চলছে, আমরা কেউ জানি না। এখন এটা রাজ্য থেকে কেন্দ্রের হাতে চলে গিয়েছে। সকলেই উদ্বেগে যে কেন এখনও পর্যন্ত বিচার আসছে না। কিন্তু তার জন্য রক্তক্ত শহর, দেশ দেখে কোনও লাভ নেই।'
যাঁরা জুনিয়র ডাক্তার আছেন, তাঁদের মধ্যে হয়ত আরও উথাল-পাতাল হচ্ছে। কারণ, তাঁদের সহকর্মীর সঙ্গেই ঘটেছে বিষয়টা। সেগুলো নিয়ে বিচারের দাবি তোলা হোক। তবে নোংরামো বন্ধ হোক। সুবিচার চাই। আমরা কিন্তু লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছি।'
শ্রীময়ী আরও বলেন, 'আজ এই সরকার, কাল ওই সরকার, ওমুক লোক, তমুক লোককে দোষ দিতেই থাকব আমরা।চেয়ারের দোষ দিতেই থাকব। তবে চেয়ারের মানুষগুলো কিন্তু যাঁরা আজ আছেন, তাঁরা হয়ত কাল বদলে যাবেন। আমার প্রশ্ন, সমাজে যে বিকারগ্রস্ত মানুষ রয়েছেন, তাঁদের চেতনা কি জাগছে? আরজি করের মতো ঘটনা কিন্তু আগেও ঘটেছে অনেক। আগে তো সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। রাস্তাঘাটেও এমন অনেক ঘটনা ঘটে, তখন অনেক মানুষ মুখ ঘুরিয়ে চলে যান। মানুষ তখন সহযোগিতা করেন না। যখন কেউ চলে গেল তখন মোমবাতি নিয়ে বিশাল মিছিল হচ্ছে! তবে তার আগে যখন মেয়েটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তখন কিন্তু কেউ জিগ্গেস করেননি, তোর কী সমস্যা? বা বলেননি চল আমরাও প্রতিবাদ করি। তখন সকলে ক্ষমতার ভয় পেয়ে যায়। সকলে মুখচোরা হয়ে যায়। মানুষ আসলে মধ্যবিত্ত মানসিকতা থেকে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। যখন কিছু ঘটে যায়, বড় ক্ষতি হয়ে যায়, তখন হাহাকার করেন। তখন যে চলে গেল সে আর ফেরত আসবে না। আমার তাই মনে হয় মানুষের মানসিকতাতে বদল আনতে হবে। আসলে কখন সাজা হবে, তার অপেক্ষা না করে, অন্যায় দেখলে আগেই পিটিয়ে দেওয়া উচিত। চতুর্দিকেই এমন অনেক খারাপ মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন।'
কর্মস্থলে এধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক। এমন ঘটনা কিন্তু রাস্তাঘাটেও হতে পারে। ফেসবুকে কী ধরনের আক্রমণ করা হয়, এগুলোও তো নির্যাতন। মানুষ কী শাড়ি পরবে, কী ব্লাঊজ পরবে, ভাই তুমি এত জাজমেন্টাল হয়ে যাচ্ছো কেন! এই মানুষগুলোই যখন কাউকে সামনে পান, তখন কাউকে আক্রমণ করে বসেন। এগুলো যতক্ষণ না বন্ধ হবে, ততক্ষণ আন্দোলন করেও কিছু হবে না।'
শ্রীময়ার কথায়, ‘আমাদের হাতে তো কিছু নেই। আমরা চিৎকার করলে, ভাঙচুর হলে কি দোষী বের হবে! এতে নিজেদের মধ্যে ফেসবুকে কাদা ছোড়াছুড়ি করে কী হবে ভগবান জানেন!’