নতুন বছরের শুরুতেই নক্ষত্রপতন টলিউডে। না ফেরার দেশে পরিচালক অরুণ রায়। বহুদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। বিগত কয়েকদিন ভর্তি ছিলেন আরজি করে। তাঁর এই অকাল প্রয়ানে শোকস্তদ্ধ টলিপাড়া। ভেঙে পড়েছেন তাঁর ছবির 'বাদল' অর্ণ মুখোপাধ্যায়ও। হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে অর্ণ জানান পরিচালকের এই চলে যাওয়া তাঁর 'ব্যক্তিগত স্তরের ক্ষতি'।
১৯১১ সালে মোহনবাগান এবং ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের মধ্যে হওয়া ফুটবল ম্যাচ ভারতের বুকে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তার প্রেক্ষাপটে তৈরি 'এগারো'-এর পরিচালনা দিয়ে বাংলা ছবির দুনিয়ায় পদার্পণ করেন অরুণ রায়। তারপর ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে ‘৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ’, 'হীরালাল', 'বাঘাযতীন'-সহ একাধিক ছবির পরিচালনা করেন তিনি। তাঁর পরিচালিত ছবির হাত ধরেই মঞ্চাভিনয় থেকে বড় পর্দায় অভিনেতা হিসেবে পা রাখেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়।
অরুণ রায় তাঁর কাছে কেবল শিক্ষক নন, তিনি অর্ণর ফিলোজোফার, গাইড। হিন্দুস্থান টাইমস বাংলা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, বিধ্বস্ত অর্ণ ভাঙা ভাঙা গলায় ফোন ধরে বলেন, ‘কী আর বলব? আমার ছবির শুরু ওঁর হাত ধরে। যদিও পর্দায় আগে মুক্তি পেয়েছে দেব ইন্টারটেমেন্টে ভেনচারের সঙ্গে করা আমার ছবি। কিন্তু প্রথম আমাকে থিয়েটার থেকে ছবিতে আনবেন বলে ভেবেছিলেন অরুণ রায়ই। ওঁর কাছেই আমার প্রথম ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের হাতেখড়ি। ফলে অরুণদা শুধু আমার শিক্ষক নন, তিনি আমার ফিলোজোফার, গাইড।’
আরও পড়ুন: প্রয়াত অরুণ রায়! না ফেরার দেশে দেবের বাঘাযতীন পরিচালক, ক্যানসার কাড়ল প্রাণ
অভিনেতার মতে বিনোদন জগতের কতখানি ক্ষতি হল সেটা অনেক পরের কথা। কিন্তু অরুণ রায়ের এই চলে যাওয়া তাঁর ব্যক্তিগত স্তরের একটা ক্ষতি। অর্ণর কথায়, ‘এই ক্ষতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে বিগত কয়েকদিন ধরে একটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই ছিলাম। জীবনে একমাত্র অনিবার্য কিছু যদি থাকে, সেটা তো মৃত্যু। ফলে সেটা মেনে নিতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের তা মানতে শিখিয়েছেন। তাছাড়া আমারা যাঁরা শিল্পচর্চা করি তাঁদের নির্লিপ্ত থাকাও অভ্যাস করতে হয়। ফলে সেটা আমরা নিজের নিজের মতো করে সহ্য করে নেব। আগামীতেও কাজ করব। বৃহত্তর ক্ষেত্রে বা ছবির ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতি হল বা শিল্পের আঙ্গিনায় কতটা ক্ষতি হল তা তো সময় বলবে, ইতিহাস বলবে, বিশেষজ্ঞরা বলবেন। কিন্তু আমার যে ক্ষতি হল তা আমি জানি।’
বেশকিছু দিন ধরে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’তে কাজ করা নিয়ে অরুণ রায়ে সঙ্গে খানিক মনমালিন্য হয়েছিল অর্ণর। সেই প্রসঙ্গ টেনেও অভিনেতা বলেন, ‘তবে আমার অবশ্য ক্ষতি অনেকদিনই হয়েছে। ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক দাদা-ভাইয়ের মতো। কিন্তু 'অরণ্যের দিনরাত্রি'তে কাজ করতে না পারার জন্য ওঁর সঙ্গে আমার একটা মন কষাকষি হয়েছিল। তবে তা পরে মিটেও যায়। আমাদের কথা বার্তাও হত।' অভিনেতা জানিয়েছেন তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিচালকে শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে যাবেন।
আরও পড়ুন: 'বহুবার ভেবেছি নিজেকে শেষ করে দেব', মুখ খুললে ‘মি টু’-র অভিযোগে বিদ্ধ সাজিদ খান
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে অরুণ রায় পরিচালিত ‘৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ’-এ ‘বাদল’-এর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল অভিনেতাকে। পাশাপাশি পরিচালকের আরও একটি বহুল প্রশংসিত ছবি 'হীরালাল'-এও 'অমরেন্দ্র নাথ দত্ত'র চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন তিনি। এই দুই ছবিতেই তাঁর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল কিঞ্জল নন্দাকে। 'হীরালাল'-এ তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ‘৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ’-এ তাঁকে ‘বিনয়’-এর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। পরিচালকের প্রয়ানে খবরে তিনিও সমাজমাধ্যমের পাতায় লেখেন, ‘হীরালালের মতোই, আমার হীরালাল, ভালো থেকো।’
প্রসঙ্গত, ‘এগারো’র হাত ধরেই বড় পর্দায় পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন অরুণ রায়। তাই মোহনবাগানের পক্ষ থেকেও তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে সমাজমাধ্যমের পাতায় একটি পোস্ট করা হয়েছে।
২ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার ভোররারতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পরিচালক। গত এক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে অরুণ হাসিমুখে লড়েছেন। ‘বাঘাযতীন’ মুক্তি পেয়েছিল ২০২৩-এর দুর্গাপুজোয়। তাঁর ঠিক আগেই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানতে পারেন তিনি।