ফারহা খান ও সাজিদ খানের মা মানেকা ইরানি শুক্রবার মুম্বইয়ে মারা যান। যদিও তিনি সরাসরি হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের অংশ ছিলেন না, তবে জীবনের ভাঙা-গড়ার গল্প কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যের চেয়ে কম নাটকীয় নয়। বিশেষ করে নিজের ঘর ও কেরিয়ার ছেড়ে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে দুই সন্তানকে বড় করার সময়টা।
স্বামীর ফিল্মি কেরিয়ারে ফ্লপ
মানেকার স্বামী কামরান ছিলেন স্টান্টম্যান। তারপর শুরু করেন জার্নি ফিল্মমেকার হিসেবে। তিনি সিনেমার জগতে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করলেও, শেষের দিকে কেবল বি-গ্রেড সিনেমাই তৈরি করতেন। দারা সিং অভিনীত তাঁর অনেক স্বপ্ন নিয়ে তৈরি সিনেমা ইলঝাম (১৯৭০) বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। যেহেতু নিজের সব অর্থ এই সিনেমায় ঢেলেছিলেন, তাই সর্বশ্রান্ত হয়ে পড়েন। যার ফলে মেনকার গয়না, মূল্যবান গ্রামোফোন এবং মুম্বইয়ের দুটি ফ্ল্যাটও হাতছাড়া হয়। অবশেষে তাঁরা গিয়ে জুহুর নেহরু সোসাইটিতে তাঁদের ছোট্ট ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন।
স্বামীর মদ্যপানের নেশা
কামরান কেরিয়ারের এই অবস্থা ও আর্থিক ক্ষতি সামলাতে পারেননি। ক্রমশ মদ্যপানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সম্প্রতি ভারতী টিভির একটি পডকাস্টে ফারহা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার বাবা সকাল থেকে মদ্যপান করতেন। কারণ সে (ব্যর্থতা) সামলাতে পারেনি। এটা খুবই কঠিন। তাদের জন্য আরও কঠিন, যারা সাফল্যের মুখ দেখেছে। যে লোকটা ইম্পালা গাড়ি চালাচ্ছে, সে বাসের লাইনে দাঁড়াবে না কখনো। এই সংগ্রাম জীবনের শুরুতে হওয়া ভালো, শেষে নয়।’
‘ঘড়ির কাঁটা যখন সন্ধ্যা সাতটা বাজত, তখন আমরা ভিতরে ভিতরে ভয় পেতে শুরু করতাম। কথায়-কথায় তর্ক হত। এমনকী ডালে কম নুন দেওয়ার মতো বিষয় নিয়েও। আমরা ট্রমায় ভুগতাম। এখন আমরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করি, আমাদের বাবা কীভাবে এটা করতেন, কীভাবে সাজিদ ভয় পেয়ে খাটের নীচে লুকিয়ে পড়ত। এবং কখনও তিনি তাঁর কোমরের ডাবল ব্যারেল রাইফেলটি বের করতেন। এবং যদি এটি আয়নায় সেই সময় একটি গর্ত সৃষ্টি করত, তবে গর্তটি বছরের পর বছর ধরে সেখানেই থাকত, কারণ এটি মেরামত করার জন্য আমাদের কাছে অর্থ ছিল না।’, যোগ করেছেন ফারহা।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ
অবশেষে স্বামীর এই বদভ্যাসের কারণে দুই সন্তানকে নিয়ে মদ্যপ স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। নিজে কোনও কাজ করতেন না। তাই অভিনেতা-চলচ্চিত্র নির্মাতা বোন হানি ইরানির সঙ্গে থাকা শুরু করেন। সেই সময় হানির সদ্য বিচ্ছেদ হয়েছিল ফারহান ও জোয়া আখতারের বাবা জাভেদ আখতারের সঙ্গে। হানিও সেই সময় একাই বড় করছিলেন ফারহান ও জোয়া আখতারকে। ১৯৯০ এর দশকে সেরা কোরিওগ্রাফার হওয়ার আগে ফারহা দীর্ঘসময় ব্যাকগ্রাউন্ড নৃত্যশিল্পী হিসাবে কাজ করেছেন।