ভোপালের প্রাক্তন শাসকদের মালিকানাধীন এবং অভিনেতা সাইফ আলি খান ও তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ১৫,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তির ভাগ্য এখন অনিশ্চিত। ১৯৬৮ সালের 'শত্রু সম্পত্তি' আইনে কেন্দ্রের তরফে যে সম্পত্তি অধিগ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে জানা যাচ্ছে, চাইলেই সেই সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আবেদন করতে পারেন শর্মিলা ঠাকুর। তাই পতৌদিদের ভোপালের পারিবারিক সম্পত্তির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
আইন অনুসারে, ভোপাল নবাবের উত্তরসূরিরা যদি অফিস অফ দ্য কাস্টোডিয়ান অফ এনিমি প্রপার্টি ফর ইন্ডিয়ার নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল না করেন, তাহলে সম্পত্তিগুলি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের নির্দেশের পরে পতৌদি পরিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা মুম্বই-এর শত্রু সম্পত্তির কাস্টডিয়ান অফিসে আবেদন করেছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সইফ আলি খানের মা তথা প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর এবং পরিবারের অন্যান্যরা ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের ‘শত্রু সম্পত্তি রক্ষক’-এর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। যেহেতু ভোপাল নবাবের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত ১৯৬৮ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন অনুযায়ী, দেশভাগের পরে যাঁরা পাকিস্তান চলে গিয়েছেন, তাঁদের সম্পত্তি নিজেদের হাতে নিয়ে নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।
ইতিহাস অনুযায়ী, ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের তিন মেয়ে ছিলেন। বড় মেয়ে আবিদা সুলতান ১৯৫০ সালে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। মেজো মেয়ে সাজিদা সুলতান সাজিদা সুলতান থেকে গিয়েছিলেন ভারতেই। বিয়ে করেছিলেন নবাব ইফতিকার আলি খান পতৌদিকে। হয়ে উঠেছিলেন আইনি উত্তরাধিকারী। সেই সাজিদার নাতি হলেন সইফ। সাদিদার মৃত্য়ুর পরে সাজিদার ছেলে মনসুর আলি খান পতৌদি (টাইগার পতৌদি) এই সম্পত্তিগুলির উত্তরসূরি হন। তাঁর পর সইফ আলি খান এই সম্পত্তিগুলির মালিক হন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা।
উত্তরাধিকার সূত্রে সইফের নামেও সম্পত্তি থাকার কথা আছে। ২০১৯ সালে সাজিদাকে পতৌদি পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল আদালত। কিন্তু আবিদা যে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। ফলে একটা সংঘাত ও বিতর্কের জায়গা থেকেই গিয়েছে।
তবে প্রবীণ আইনজীবী এবং নবাব সম্পত্তির সংযুক্তিকরণের বিশেষজ্ঞ জগদীশ ছাভানি পিটিআইকে ১৯৬২ সালের ১০ জানুয়ারি একটি আদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে ১৯৬০ সালে হামিদুল্লাহ খানের মৃত্যুর পরে ভারত সরকার সাজিদা সুলতান বেগমকে নবাব হামিদুল্লাহর অধীনে থাকা সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর ব্যক্তিগত সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এ ধরনের সম্পত্তি সাজিদা সুলতান বেগমের কাছে হস্তান্তরে ভারত সরকারের কোনো আপত্তি নেই।
কিন্তু শত্রু সম্পত্তি তত্ত্বাবধায়কের আদেশের পরে, মালিকানা স্বত্ব বিতর্কিত হয়ে ওঠে। পরে ২০১৫ সালে শর্মিলা ঠাকুর (সইফের মা এবং মনসুর আলী খান পতৌদির স্ত্রী) হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানান। ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর শুনানির সময় সরকারি আইনজীবী জানান, ২০১৭ সালে, শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৮ নামে এই আইনটি পূর্ববর্তী তারিখ থেকে বাতিল করা হয়েছে এবং শত্রু সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আপিল কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল তাঁর আদেশে বলেছিলেন, 'এই জাতীয় তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে, যেহেতু প্রতিনিধিত্ব দাখিলের একটি বিধিবদ্ধ প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাই পক্ষগুলিকে এই জাতীয় প্রতিকার পেতে বাধ্য। তবে সময়ের এই দূরত্বে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠতে পারে। অর্থাৎ, নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে যদি আজ (১৩ ডিসেম্বর) থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে আবেদন করা হয়, তবে আপিল কর্তৃপক্ষ সীমাবদ্ধতার দিকটি অবহিত করবে না এবং আপিলটি তার নিজস্ব যোগ্যতার ভিত্তিতে মোকাবেলা করবে। এতে আরও বলা হয়, উপরোক্ত শর্তে আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করা হলো।
এবিষয়ে ভোপালের কালেক্টর কৌশলেন্দ্র বিক্রম সিং বলেছেন যে তিনি হাইকোর্টের আদেশ দেখেননি এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিবরণ পাওয়ার পরেই মন্তব্য করবেন। আইনজীবী ছাভানি বলেন, যদি সইফ আলি খানের পরিবার আদেশের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনও আবেদন না করে থাকেন, তবে তাঁরা এখন (সইফ পরিবার) কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে পারেন। সাম্প্রতিক (মুম্বইয়ে সইফ আলি খানের উপর হামলা) সহ বিভিন্ন জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারেন। তিনি বলেন, যতদিন এই বিভ্রান্তি দূর না হবে, ততদিন মালিক ও ভাড়াটিয়া হিসেবে এসব সম্পত্তি দখল করে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে।
প্রসঙ্গত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের (১৯৬৫) পর সংসদে শত্রু সম্পত্তি আইন পাস করা হয়, যাতে ভারতে অভিবাসীদের ফেলে আসা সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।