শনিবার সন্ধ্যতেও কাটল না জট! যার ফলে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হতে চলেছে টলিউডে। আগামী ২৪ ঘন্টায় যদি দু-পক্ষের রফা না হয়, তাহলে সোমবার থেকে টলিগঞ্জের শ্যুটিং ফ্লোরে থাকবেন না পরিচালকরা! এদিন সকালে স্টুডিওপাড়া উত্তাল পরিচালকদের বিস্ফোরণ ঘিরে।
ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়রা। সকালেই ‘অপমানিত’ পরিচালকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর থেকে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরেও টেকনিশিয়ানরা ফ্লোরে পৌঁছাননি। ফেডারেশনের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য রাখেন তাঁরা। বিকাল গড়াতেই মুখ খুললেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। মন্ত্রী, অরূপ বিশ্বাসের ভাই এদিন জানান, ‘বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে’। রাহুল পরিচালকের আসনে থাকলে টেকনিশিয়ানরা শ্যুটিং করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে স্বরূপ বিশ্বাস জানান, তাঁদের কাছে যে নথি আছে, সেখানে এসভিএফের ছবির পরিচালক সৌমিক হালদার, রাহুল মুখোপাধ্যায় নন। অর্থাৎ রাহুলকে বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরল না ফেডারেশন।
ফেডারেশনের আওতায় থাকা ২৬টি ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা এদিন নিজেদের রুজিরুটির প্রশ্ন তুলে পরিচালকদের পালটা জবাব দিলেন। দৈনিক ৭ থেকে ৮ হাজার কলাকুশলী ‘দিন আনি দিন খাই’ পরিস্থিতিতে টলিপাড়ায় কাজ করেন, কাজ বন্ধ হোক এটা কেউ চান না। বরং টেকনিশিয়নারা জানান, রাহুলের জন্য নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা! ফেডারেশনকে না জানিয়ে কাজ করলে অসহযোগিতার অধিকার রয়েছে টেকনিশিয়ানদের। আইন মেনে প্রযোজনা সংস্থা শ্যুটিং করলে টেকনিশিয়ানরা কাজে যোগ দেবে।
কেন রাহুলের সঙ্গে ফেডারেশনের এই ঝামেলা?
বাংলাদেশি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম 'লহু'র শ্যুটিং কলকাতায় শুরু করেন রাহুল। চারদিন কাজ হওয়ার পর শ্যুটিং বন্ধ হয়। ফেডারেশনের নিয়মের সঙ্গে মতের মিল হয়নি প্রযোজকদের। এরপর ফেডারেশনকে কিছু না জানিয়ে শুধুমাত্র ডিওপি নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে ছবির বাকি কাজ শেষ করেন রাহুল। সেই নিয়েই যত্ত ঝামেলা।
সেই ইউনিটের সঙ্গে প্রায় ৪০-৪৫ জনের রুজিরুটি জড়িয়ে। কারুর কথা ভাবেননি রাহুল, অভিযোগ তেমনই। গিল্ডের তরফে পরবর্তীতে রাহুলকে চিঠি ধরানো হলে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। টেকশনিয়ানরা শনিবার প্রশ্ন তোলেন, 'রাহুল অন্যায় না করলে অপরাধ স্বীকার করলেন কী করে?
সংবাদমাধ্যমকে রাজ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ফেডারেশন রফায় না এলে সোমবার থেকে শ্যুটিং ফ্লোরে যাবেন না পরিচালকরা। সেই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বরূপ বিশ্বাস। বলেন, মিডিয়ার মারফত কোনো মন্তব্য এলে তিনি জবাব দিতে পারবেন না। শ্যুটিং বন্ধ নিয়ে তাঁর কাছে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।
শুক্রবার পরিচালক সংগঠনের তরফে বৈঠকের পর দীর্ঘ বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছিল পরিচালকের আসনে ফিরতে পারবেন রাহুল। কিন্তু বাধ সাধল ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। বর্তমানে টলিউডের যা পরিস্থিতি তাতে শুধু এসভিএফের পুজোর ছবি নয়, ঘরো সংকট গোটা ইন্ডাস্ট্রির উপর। সত্যি কি কাজ বন্ধ করবেন পরিচালকরা? নাকি মুখ্যমন্ত্রী দুই পক্ষের মধ্যে সমাধানসূত্র খুঁজে দেবেন? আপাতত সমস্যার কালো মেঘ টলিগঞ্জ জুড়ে।