ইরফান খানের মৃত্যুর শোক সামলে উঠবার আগেই ২০২০ সালের ৩০শে এপ্রিল সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান ঋষি কাপুর। বলিউডের প্রিয় ‘চিন্টুজি’ এদিন ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ দু বছরের লড়াইয়ে ইতি টানেন। এরই সঙ্গে অল্প-বিরাম পড়ে ৫৬ বছর দীর্ঘ ঋষি-নীতুর প্রেম কাহিনিতে। যদিও এই প্রেমের গল্প কিন্তু এখনও জারি রয়েছে।
দেখতে দেখতে ১১ মাস অতিক্রান্ত। ঋষিহীন নীতু এখন দুই সন্তানকে আগলে নিজের মতো করে জীবন গুছিয়ে নেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চলতি সপ্তাহে ইন্ডিয়ান আইডল ১২-এর মঞ্চে হাজির হয়ে ঋষির স্মৃতিচারণায় ডুব দেন নীতু। টেলিভিশনের পর্দায় এর আগে বহুবার ঋষির হাত ধরে হাজির হয়েছেন অভিনেত্রী। তাঁদের অন্যতম চর্চিত টেলিভিশন অ্যাপিয়ারেন্স ‘দ্য কপিল শর্মা শো’। যেখানে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের বহু রহস্য খোলসা করেছিলেন নীতু।
৪৬ বছর একসঙ্গে কাটিয়েছেন ঋষি-নীতু। নীতু সিনহা থেকে নীতু কাপুর হয়ে উঠবার আগে ৬ বছর প্রেম করেছেন। তাঁদের প্রথম আলাপ ১৯৭৪ সালের ‘জহরিলা ইনসান’ ছবির সেটে।ঋষি কাপুর তখন সবে ১৯, আর নীতু তিনি তো ১৪ বছরের কিশোরী। বন্ধুত্ব জমেছিল ঠিকই, তবে ঋষি কাপুর ভীষণ জ্বালাতন করতেন নীতু সিংকে। ঋষির আচরণে কার্যত বিরক্ত নীতু ভাবতেও পারেননি একদিন এই ছেলেটার প্রেমেই দুনিয়াকে ভুলে যাবেন তিনি।
১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে বিয়ের পর্ব সারেন ঋষি-নীতু। তবে দাম্পত্য জীবনের সফরে চড়াই-উতরাই জারি ছিল। ৩৭ বছরের বিবাহিত জীবনে প্রতিদিন ঋষি কাপুরকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতেন নীতু। তিনি কপিল শর্মার শো-তে বলেন, ‘৩৭ বছর হল, প্রতিদিন আমি মনে মনে ভাবি, আর নয়… এবার আমি চলে যাব। মুহূর্তটা রোজ আসে। কিন্তু তারপর ভাবি এই মানুষটার মধ্যে অনেক ভালো গুণও তো আছে। তাই থেকে যাই’। যদিও স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে ঋষি প্রশ্ন করতে থাকেন, ‘আরে কব?’
বিয়ের পর অভিনয় কেরিয়ারকে কার্যত বিদায় জানিয়েছিলেন নীতু। স্বামী-সন্তানদের দায়িত্ব পালনে চিরকাল অবিচল থেকেছেন। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন,' সব সম্পর্কের চড়াই-উতরাই থাকে, ভুল বোঝাবুঝি থাকে। তবে সব ঝামেলা মিটিয়ে ভালোবাসার মানুষটার পাশে থাকাটাই তো আসল ভালোবাসা'।
নব্বইয়ের দশকে বি-টাউনে জোর গুঞ্জন শোনা যায় চিড় ধরেছে ঋষি-নীতুর সম্পর্কে।অভিনেতার মাদকাসক্তিতে বিরক্ত নীতু। কোন কোনও রিপোর্টে ঋষির বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসারও অভিযোগ উঠেছিল। এর বাইরে আর এই জুটিকে নিয়ে কোনও গুঞ্জন শোনা যায়নি।
২০১৮ সালে ঋষি কাপুরের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে। এরপর একটানা একবছর নিউ ইয়র্কে চিকিত্সা চলেছে তাঁর। আর মারণরোগ ক্যানসারের সঙ্গে এই লড়াই সারাক্ষণ তাঁর পাশে থেকেছেন নীতু। এই সুদীর্ঘ সময়ে মৃত্যু আর ঋষি কাপুরের মাঝে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নীতু। প্রয়াত অভিনেতা নিজের মুখে মেনে নিয়েছিলেন, 'আমি তো এখন ওর সন্তান।মায়ের মতো আমাকে আগলে রাখে'।