প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর মালায় নয়া মোড়। সুশান্ত মামলার সঙ্গে যুক্ত মাদককাণ্ডে বুধবারই শর্তসাপেক্ষ জামিন পেয়েছেন রিয়া, আর এইদিনই সামনে এল আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মিডিয়া রিপোর্টে ফাঁস হয়েছে সিবিআই নিযুক্ত এইমস-এর চিকিৎসকদের প্যানেল ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে- খুন নয়,আত্মহত্যাই করেছিলেন সুশান্ত । তাছাড়া তদন্তে নেমে ঘটনার পুনর্নির্মাণের পরেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে এমন কোনও তথ্য আসেনি যা এইমস এর রিপোর্টের বিরোধী, তাই সুশান্তের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসাবে মেনে নিয়েই নাকি তদন্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সিবিআই। তাছাড়া অভিনেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ফরেনসিক অডিট করেও এমন কোনও প্রমাণ হাতে আসেনি যাতে বলা যেতে পারে অভিনেতার টাকা আত্মসাৎ করে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন বান্ধবী তথা মূল সুশান্তের মৃত্যু মামলার মূল অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তী।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে , সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে বলিউডে পেশাদারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি মানসিক অবসাদ, রিয়ার প্রত্যক্ষ কোনও ভূমিকা অথবা ইন্ডাস্ট্রির নেপোটিজম- ঠিক কী কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন সুশান্ত তাই আপতত খতিয়ে দেখবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ।
জানা গিয়েছে গত পাঁচ বছরে রাজপুতের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৭০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৫৫ লক্ষ টাকাই খরচ হয়েছে রিয়ার খাতে। বিশেষ সূত্রে খবর- এই টাকার বেশিরভাগই ভ্রমণ, স্পা এবং উপহার সামগ্রী কিনতে ব্যয় করা হয়েছিল। তবে রিয়ার বিরুদ্ধে এখনও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা জারি থাকলেও অভিনেতার আর্থিক সম্পত্তি নয়-ছয়ের তেমন কোনও প্রমান এখনও মেলেনি। আপাতত সুশান্তের আত্মহত্যার একাধিক কারণগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, জানিয়েছেন তদন্তের সাথে যুক্ত এক আধিকারিক। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে বিহার পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআরে প্রয়াত অভিনেতার বাবা কেকে সিং দাবি করেছিলেন সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা গায়েব। যা কোনও খাতে গিয়েছে তার হদিশ জানা নেই পরিবারের।
গত ৮ সেপ্টেম্বর সুশান্ত মামলার সঙ্গে জড়িত মাদককাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন রিয়া চক্রবর্তী, বুধবার বাইকুল্লা জেল থেকে ছাড়া পেলেন অভিযুক্ত নায়িকা। এক লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে শর্তসাপেক্ষ জামিন পেয়েছেন রিয়া । এছাড়া সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের আত্মহত্যার সাথেও অভিনেতার মৃত্যুর যোগসাজশও খতিয়ে দেখছে সিবিআই । উল্লেখ্য 'আত্মহত্যার' পূর্বে গুগলে দিশার মৃত্যু নিয়ে সার্চ করেছিলেন সুশান্ত । তাছাড়া জানা গেছে তাঁর আর্থিক লেনদেনের একটা বড় অংশই খরচ হয়েছে একাধিক সম্পত্তি কেনা , বাইক কিংবা পছন্দের গাড়ি কেনা, কর্মচারীদের বেতন দেওয়া এবং বিভিন্ন কর মেটানোর উদ্দেশ্যে। নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস পরিবর্তনের জন্য মৃত্যুর সপ্তাহখানেক আগেই ব্যাঙ্ক কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সুশান্ত, সেই কারণ অবশ্য এখনও জানা যায়নি। উল্লেখ্য বান্দ্রার সেই বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টিতে সুশান্তের সঙ্গে যৌথভাবে নাম রয়েছে তাঁর দিদি প্রিয়াঙ্কা সিংয়ের।
অভিনেতার আত্মহত্যার পিছনে বলিউডের নেপোটিজম সংক্রান্ত জল্পনাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখলেও এখনও কোনও বলি পরিচালক বা প্রযোজককে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি গোয়েন্দারা। তাছাড়া অভিনেতার মানসিক সমস্যার ওষুধ সেবনের বিষয়টিও স্বতঃপ্রণোদিত ছিল নাকি অন্য কারুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো ,সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে সিবিআই। তবে ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন সুশান্ত এব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনও বয়ান দেওয়া হয়নি সিবিআই বা এইএমসের তরফে।