১২ জানুয়ারি আচমকাই এল এই দুঃসংবাদ। যা হয়ত এখনও মানতে পারছেন না ফসিলস-এর অনুরাগীরা। ব্যান্ডের প্রাক্তন সদস্য চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস আর নেই! এদিকে বন্ধুর মৃত্যু খবর যখন রূপম ইসলামের কানে গেল তখন তিনি কল্যাণীতে বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসবে পারফর্ম করতে চলেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই পুরনো ও কাছের বন্ধুর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েন রূপম।
এদিকে কথা দেওয়া আছে, তাই বঙ্গ সংস্কৃতির মঞ্চে তাঁদের পারফর্ম করতেই হবে ফসিলসকে। পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতোই তাই মঞ্চে উঠলেন রূপম ও তাঁর ফসিলস-এর সদস্যরা। দর্শক আসন থেকে তখনও ‘ফসিলস ফসিলস’ বলে চিৎকার শোনা যাচ্ছে। কারণ, খবরটা তখনও বেশিরভাগ অনুরাগীর কাছে পৌঁছয়নি। এরই মাঝে মঞ্চে উঠে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন রূপম ইসলাম।
পিছনের পর্দায় ফুটে উঠল চন্দ্রমৌলি বিশ্বাসের ছবি। রূপম ইসলাম বললেন, ‘এই নিয়ে ২১বার বঙ্গ-সংস্কৃতি উৎসবে তার মধ্যে ১৬বার আমাদের সঙ্গে যিনি ছিলেন তাঁর ছবি পিছনে ফুটে উঠেছে। আমরা আসবার সময় গাড়িতে একটা খবর পেয়েছি। সেই খবরটা বজ্রাঘাতের মতোই আমাদের মাথায় এসে পড়েছে। এই পরিস্থিতি কেউই গান গাইতে পারে না, কারোর হাতে বাদ্যযন্ত্র বেজে ওঠে না। কিন্তু বাংলা রক জনতা আমাদের সামনে উপস্থিত। যাঁদের খোঁজ আমরা একসঙ্গেই করেছিলাম, চন্দ্র তখন আমাদের সঙ্গেই ছিল, একটা বিরাট সময়। আমি কখনও বিশ্বাস করিনি, চন্দ্রকে ছাড়া এই ব্যান্ড কোনওদিন পারফর্ম করবে। ওর সঙ্গেই আমার বেশি বন্ধুত্ব ছিল। গত বছর পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল। নানান দার্শনিক বিষয়ে কথা হত। কিছু কিছু গান নিয়ে আমাদের বসার কথা ছিল। তবে ওর জীবন আলাদা করে চলছিল। আমার মনে হয়না সেই সব গান আমি কোনওদিনই প্রকাশ করতে পারব…।’
রূপম ফের বলেন, ‘ব্যান্ড জীবনে একটা কথা মাথায় রাখতে হয়। গরিষ্ঠতা কী বলছে? সেই হিসাবেই পথ চলতে হয়। এখানে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কোনও জায়গা নেই। সেই গরিষ্ঠতা থেকেই অনেকের সঙ্গেই আমাদের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছে আমাদের সফর চালিয়ে নিয়ে যেতে। আমাদের অডিয়েন্সের সবসময়ই চেয়েছে যে আমরা গান বাজানা চালিয়ে যাই। সেই পথ চলা যে আমাদের এমন একটা সন্ধ্যায় আমাদের এনে দেবে, যেদিন আমাদের এক সঙ্গীর ছবি এভাবে পিছনের পর্দায় রেখে আমাদের মঞ্চে উঠতে হবে! ভাবিনি যে বলতে হবে আজকের অনুষ্ঠান কী করে করব জানিনা, কখনও ভাবি নি! তবে এটাই জীবন।’
রূপমের কথায়, ‘এমন আকষ্মিকতা আছে বলেই জীবন অভূতপূর্ব। এই অভূতপূর্বতাই এই সময় এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি সবথেকে বেশি উপলব্ধি করছি। আমরা আজ গানবাজনা সেভাবেই পরিবেশন করব, যেভাবে সবথেকে বেশি স্মৃতিচারণ করা যায়। তবে আপনাদেরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি হয়ত গানের মাঝে যেসব কথা বলি, আজকে স্বাভাবিকভাবেই সেসব কথা বলতে পারব না। বলার মানসিকতাও নেই। যেভাবে শো করি, সেভাবে সম্ভব নয়। গানটা আজ করে দেব এই মাত্র। আপনারা বুঝতে পারছেন কী বলছি। এই আঘাত অনেক বড়। কাজেই আপনাদের সহযোগিতা চাই। তাহলে হয়ত উতরে যাব। সকলকে গুরুত্ব বুঝে আমাদের সঙ্গে থাকার অনুরোধ করব।’
প্রসঙ্গত, মধ্য কলকাতার ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস। রবিবার সেখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন চন্দ্রমৌলি। গত কয়েক বছর ধরেই হাতে তেমন কাজ ছিল না। অর্থনৈতিক সংকটে ছিলেন তিনি। ডিপ্রেশনের জন্য চলছিল চিকিৎসাও।