ফলিলসের চন্দ্রমৌলি আর নেই! এই খবরে কার্যত পায়ের নীচের মাটি সরে গিয়েছে বাংলা ব্যান্ডপ্রেমীদের। ফসিলসের সঙ্গে চন্দ্রমৌলির সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে ৭ বছর আগে, তবুও দীর্ঘ ১৮ বছরের সম্পর্ক ফিকে হয়ে যানি। ২০১৮ সালে শারীরিক সমস্যার জেরেই রূপম ইসলামের ব্যান্ড ছেড়েছিলেন চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস। যাঁকে শুধু ফলিসস নয়, বাংলা ব্যান্ডের অন্যতম সেরা বেসিস্ট বলেই সকলে চেনে। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে তিনি! আর সেই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। আরও পড়ুন-ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ফসিলস ব্যান্ডের প্রাক্তন সদস্যের! ভুগছিলেন ডিপ্রেশনে, মিলেছে সুইসাইড নোট:পুলিশ
রবিবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় শিল্পীর ঝুলন্ত দেহ। বর্তমানে ‘গোলক’, ‘জম্বি কেজ কন্ট্রোল’-এর মতো ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রয়াত গিটারবাদক। এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাড়ির বাইরে যান বাবা-মা। সেই সময়ই চরম পদক্ষেপ! তাঁর ঝুলন্ত দেহ প্রথম দেখেন ‘গোলক’ ব্যান্ডের ভোকালস্ট মহুল চক্রবর্তী। তিনিই পুলিশে খবর দেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে অবসাদের শিকার চন্দ্রমৌলি আত্মহত্যা করেছেন।
রবিবার দুপুরে নিজের ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বদলান চন্দ্রমৌলি। তখনও কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি সন্ধ্যায় এমন একটা খবর মিলবে। চন্দ্রমৌলির এ ভাবে আত্মহনেন পথ বেছে নেওয়ায় স্তম্ভিত অনেকেই। প্রাক্তন সহকর্মীর আত্মহত্যার খবর পাওয়ার পরেও রবিবার রাতে মঞ্চে উঠে পারফর্ম করেছে ফলিলস। কান্না চেপে, স্মৃতি আঁকড়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে চন্দ্রকে।
সোমবার দুপুরে ফেসবুকে চন্দ্রমৌলিকে নিয়ে কলম ধরলেন রূপম। প্রকাশ্যে আনলেন তাঁদের শেষ কথোপকথন। রূপম জানান, চন্দ্রমৌলির সঙ্গে নানা দর্শন নিয়ে কথা হত, সে কথা-আলোচনা মূলত শৈল্পিক। যদিও একটা সময় পর সেভাবে যোগাযোগ ছিল না। তবে ফের যখন যোগাযোগ হল কিছু গান নিয়ে বসার কথা হয়েছিল দুজনের, কিছুটা সময় চেয়েছিলেন চন্দ্রমৌলি। অপেক্ষা করতে রাজি আছেন, এই বলে আশ্বস্তও করেছিলেন রূপমও। কিন্তু সেই অপেক্ষা এখন অন্তহীন, কারণ মানুষটাই আর নেই!
শোকস্তব্ধ রূপম লেখেন, ‘আমাদের যখনই কথা হতো সেটা হয় দর্শন ও শিল্প নিয়ে। আমার তেমন কিছু গানই গচ্ছিত করে রেখেছিলাম তোর জন্য। সেগুলোর উদাহরণ হল ‘আদমের সন্তান’, ‘আমি তোমায় ভালবাসি’র মতো গান। গত বছরেও আমাদের আলোচনা হয়েছিল কিছু গান নিয়ে, যা নিয়ে আগে কখনও কাজ হয়নি। আমি জানতাম ওগুলো একমাত্র তুই পারবি। কিন্তু তুই প্রত্যাখান করেছিলি। বলেছিলি নিজেকে গোছানোর জন্য একটু সময় দরকার। আমি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে রাজিও ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই অপেক্ষার কোনও অন্ত নেই, ঠিক যেমন তোর সুরেলা সফর।’
রূপমের চোখে চন্দ্র মানে তাঁর প্রাণ খোলা হাসি। জীবন ভরে বাঁচা। সেই ছবিটাই নিজের হৃদয়ে গুছিয়ে রাখতে চান। তাই রূপ লেখেন, 'আমি মৃতদেহের মুখে তোকে দেখবো না। তোকে চিনব না এ ভাবে। তোর পাঠানো সব ক’টা গানই শুনেছিলাম আমি। মনে হয়েছিলে ফের যেন তুই স্বক্ষেত্রে ফিরে আসছিস।’ রূপম আরও বলেন, হয়ত কোনওদিন প্রাক্তন সহকর্মী, বন্ধুকে নিয়ে তিনি বই লিখবেন। রকের পূজারী তাঁরা, রক সঙ্গীত বেঁধেছিল তাঁদের। শেষবেলাতেও বন্ধুকে একটাই বার্তা রূপমের, রক অন!