করোনা আবহেও সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবার্ষিকী নিয়ে বাঙালিদের আবেগে ভাঁটা পড়েনি একটুও। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে পর্দায় নানান অনুষ্ঠানের দ্বারা সাড়ম্বরে করা হয়েছে সত্যজিৎ-স্মরণ। জানিয়ে রাখা ভালো সত্যজিৎ এবং রায় পরিবারের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা 'সন্দেশ' পত্রিকাও সবার অলক্ষ্যে পেরিয়ে ফেলেছে তার শততম জন্মদিন। ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাতে প্রাণ পাওয়া এই পত্রিকা চলতি বছরে পা রেখেছে ১০৮তম বর্ষে। মাঝেমাঝেই আর্থিক আনুকূল্য না থাকার জন্য থেমে গিয়েছে বটে সন্দেশ কিন্তু শিশু ও কিশোর পাঠকদের ভালো লাগার সঙ্গে কোনওরকম আপোষ করেনি এই পত্রিকা। সন্দেশ তো শুধুমাত্র একটি সাহিত্য পত্রিকা নয়, বাঙালির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে 'সন্দেশ'। শিশু ও কিশোরসাহিত্যও যে জনপ্রিয়তায় ছুঁয়ে ফেলতে পারে সমাজের তথাকথিত প্রাপ্তমনস্ক পাঠকদের 'ক্লাসিক' গল্প-উপন্যাসকে তা দেখিয়েছিল এই পত্রিকা। বাংলা ভাষার ছোট্ট ও কিশোর পাঠকদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই 'সব পেয়েছির আসর' নিয়ে হাজির হয়েছিল এই পত্রিকা। যাতে পরবর্তীকালে মজেছে প্রত্যেক বয়সের পাঠক। বাঙালির গত কয়েক প্রজন্মের বড় হয়ে ওঠা যাঁদের লেখা গল্প,কবিতা পড়ে সেই উপেন্দ্রকিশোর,সুকুমার রায়ের লেখা প্রকাশিত হতো এই 'সন্দেশ'-এই। সত্যজিৎ রায়ের লেখকজীবনের শুরু এই পত্রিকার হাত ধরেই। 'ফেলুদা' থেকে 'প্রোফেসর শঙ্কু'-র আবির্ভাব এই পত্রিকার পাতাতেই।
অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কে লেখেননি শতবর্ষ পেরিয়ে আসা এই পত্রিকায়। তাই 'সন্দেশ' একটা আবেগ, একটা যাপনেরও নাম। প্রথমে উপেন্দ্রকিশোর,পরে সুকুমার ও সত্যজিৎ রায় সামলিয়েছেন 'সন্দেশ' -এর সম্পাদকের আসন। ওঁরা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে 'সন্দেশ'-এর সম্পাদকের তালিকায় রয়েছেন সুবিনয় রায়,কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়,লীলা মজুমদার,নলিনী দাশ,বিজয়া রায়ের নামও। বর্তমানে এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সত্যজিৎ পুত্র তথা প্রখ্যাত পরিচালক সন্দীপ রায়। এবার জানা গেল ডিজিট্যাল হচ্ছে 'সন্দেশ'. অর্থাৎ এবার থেকে অনলাইন সংস্করণেও দেখা মিলবে এই পত্রিকার।সত্যজিৎ শতবর্ষে আপামর বাঙালির জন্য এই খবর 'উপহার' পাওয়ার চাইতে কম কিছু নয় তা বলাই বাহুল্য।