শুধু হাসপাতালে নয় থ্রেট কালচার চলে বাংলা ফিল্ড ইন্ডাস্ট্রিতেও। সেই থ্রেট কালচারের ভয়ঙ্কর ছবিটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এক কেশসজ্জা শিল্পীর আত্মহত্যার চেষ্টা। আর এই ঘটনায় রাগে ফুঁসছেন টলিপাড়ার অনেকেই। এদিন ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায়, অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, মানালি দে, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা।
ঠিক কী ঘটেছিল ওই কেশসজ্জা শিল্পীর সঙ্গে? সেবিষয়টি তিনি নিজেই গিল্ডের গ্রুপে ভয়েস নোটের মাধ্যমে জানান। আর সেই ভয়েস নোটটিই উঠে এসেছে অরিত্র দত্ত বণিকের ফেসবুকে। সেটি শেয়ার করে অরিত্র লেখেন, ‘জুলুমবাজি করে গিল্ড থেকে জোর করে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছিলো। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে অর্থনৈতিক চাপে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আমাদের ফিল্মের সহকর্মী হেয়ার স্টাইলিস্ট… (নাম গোপন রাখা হল)। আপাতত তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের উচিৎ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার হিসেবে জামিন অযোগ্য ধারায় ইমিডিয়েটলি মামলা শুরু করে এসব গিল্ডওয়ালাদের এরেস্ট করা। আত্মহত্যার চেষ্টার আগে শিল্পী … (নাম গোপন রাখা হল) এই ভয়েস নোট গিল্ডের গ্রুপে দিয়েছেন।’
(আরও পড়ুন: 'কোনও হল মালিক পাকিস্তানি ছবি দেখালে, তার মূল্য চোকাতে হবে', ফাওয়াদের ছবি নিয়ে হুঁশিয়ারি রাজ ঠাকরের)
কেশসজ্জা শিল্পীর ভয়েস নোটটি শেয়ার করে ক্ষুব্ধ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় লেখেন, ‘ছাড়া হবে না। কর্মক্ষেত্রে কোন রকম হেনস্থা আর হজম করা হবে না। ফিল্ম ইনডাস্ট্রি থেকে জমিদারী প্রথা বিলোপের সময় হয়েছে। ইনি হলেন …(নাম গোপন রাখা হল), আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হেয়ার ড্রেসার যিনি নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছিলেন এবং সময়মতো তাঁর মেয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচায়। লজ্জিত ফেডারেশন, এভাবেই জীবন ধ্বংস করছ।’
ভয়েস নোটে ঠিক কী বলেছেন ওই শিল্পী?
(আরও পড়ুন: নাতাশার সঙ্গে ডিভোর্সের পর ছেলে অগস্ত্যর সঙ্গে প্রথমবার দেখা হার্দিকের, কোথায় গেলেন, কী কী করলেন বাপ-বেটায়?)
ভয়েস নোটে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘সবাই জানো আমাকে তিনমাস সাসপেন্ড করা হয়েছিল। যদিও আমি জানি না আমি কী করেছি! তাও অন্যায় স্বীকার করে নিয়ে তিনমাস ঘরে বসেছিলাম। তাতে আমার প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছে। আমার বাড়ির লোন চলে। আমার বর অসুস্থ। আমার মেয়ের পড়াশোনা… (কাঁদতে কাঁদতে) এরপর আমি টুকটাক কাজ করছিলাম, নিজে কাজ ধরেছি ২টো। কিন্তু আমাকে সেক্রেটারি করতে দেয়নি। বলেন., নিজেরা কাজ ধরে কাজ করতে পারবে না। আমি বলেছিলাম, আমার তো বাইরের কাজ হয়, আমি কি কাজ করতে পারব না? সেক্রেটারি বলেছিল, ফোন কোরো। আমি ফোন করেছিলাম কিন্তু আমায় কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তাই আমি আজ অনেক কষ্টে সবাইকে বিষয়টা গ্রুপে জানাচ্ছি। কাল থেকে আমার কাজ শুরু ছিল। কিন্তু আমায় আজ হঠাৎ ফোনে ম্যানেজার বলছে, তুমি ওখানে কাজ করতে পারবে না। গিল্ড (হেয়ার ড্রেসার গিল্ড) থেকে ফেডারেশনকে জানিয়েছে। আমি অরিজিতদাকে ফোন করতে উনি বললেন, হ্য়াঁ, এটা বলেছে তোমায় যেন কাজে না নেওয়া হয়। গিল্ড (হেয়ার ড্রেসার গিল্ড) তোমায় যা কাজ দেবে তাই করবে। এবার তোমরা বলো, আমি কী করব? আমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছি। আমার সুইসাইড করা ছাড়া আর উপায় নেই। আমি অনেক দেনা করে ফেলেছি। এক শিফট করে কাজ করলে আমার দেনা মিটবে না। আমি অনেক কাকুতি মিনতি করেছি, কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি। তাই আমি জেনারেল মেম্বারদের কাছে সবকিছু বললাম। এবার তোমরা বিচার করো যে আমি কী করব? আমি যদি কিছু করি, তার জন্য দায়ী এই কমিটির লোকরাই হবে।’
এদিকে এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই হরিদেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কেশসজ্জা শিল্পীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। তাতে ১০জনের নামও রয়েছে বলে খবর। ওই কেশসজ্জা শিল্পী এই মুহূর্তে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।