গিটার হাতে সুরের ঝংকার তোলেন তিনি, সঙ্গে থাকে হারমোনিকা। তাঁর লেখনিতে উঠে আসে পৃথিবীর নানান প্রান্তের অবহেলিত মানুষের ভাষা। তাঁর জীবনমুখী নানা গান বুকে আগুনের ফুলকি জ্বালায়। প্রতিবাদের আরেক নাম বব ডিলান। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সংগীত পরিচালক, চিত্রশিল্পী ও লেখক। আজ,(২৪ মে) বব ডিলানের ৮০তম জন্মদিন।
সেভাবে ভারতের সঙ্গে বব ডিলানের কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই। তিনি ঋষিকেষ-হরিদ্বারে ঘুরতে আসেননি।গঙ্গা আরতিতে শামিল হতে তাঁকে দেখা যায়নি তাঁর বহু সমসমায়িক শিল্পীর মতো, কিংবা নিদেন পক্ষে তাঁর সংগীতে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতেরও কোনও ছাপ সেভাবে মেলে না। বরং ডিলানের প্রেরণার উত্স্থল অ্যাপালেশিয়ান বিস্তৃর্ণ অঞ্চল, কিংবা স্কটল্যান্ড, মেক্সিকো, ইংল্যান্ড। কিন্তু তা বলে ভারতীয় উপমহাদেশে বব ডিলানের অনুরাগীর সংখ্যা কম নয়।
ভারতীয় সংগীত শিল্পীরা বছরের পর বছর ধরে অনুপ্রেরণা নিয়ে চলেছেন বব ডিলানের জীবনমুখী গান থেকে। বাংলার পূর্ণ দাস বাউল থেকে তামিল সংগীত শিল্পী সুশীলা রমণ, এঁদের গানে ঘুরে ফিরে এসেছেন ডিলান। যা নিঃসন্দেহে আপনাকে অবাক করবে। তেমনই কিছু গান দেখে নিন-
পূর্ণ দাস বাউলের সঙ্গে ডিলানের ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। ষাটের দশকে আলাপ এই জুটির। দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকলে ১৯৯০ সালে পূর্ণ দাস বাউলের ছোট ছেলের বিয়েতে শামিল হতে কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন বব ডিলান। একতারার সুরে বব ডিলানের ‘ফর্ম অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’-এর এমন রিক্রিয়েশন সত্যি অনবদ্য।
তবে শুধু পূর্ণ দাস বাউল নন, অঞ্জন দত্ত থেকে কবীর সুমন- ডিলন সকলেরই প্রেরণার একটা বড়ো জায়গা জুড়ে রয়েছেন। অঞ্জনের জনপ্রিয় গান ‘পুরোনো গিটার’-এর সেই লাইন, কিংবা কবীর সুমনের ‘বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই’ গানের ভাবনায় তো ধরা দিয়েছেন ডিলন। এই দুই শিল্পী বিভিন্ন সময়ে ডিলানের ঋণ স্বীকার করেছেন।
সুশীলা রমণ-
ইন্ডি-পপ জঁর পরিচিত নাম সুশীলা রমণ।ডিলানের বহু গান নিজের মতো করে তুলে ধরেছেন এই তামিল শিল্পী। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ডিলানের কাল্ট সং ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’-এর এই ভার্সনটি।
‘মানগানিয়ার’-
আশির দশকের শুরুতেই ‘জোকারম্যান’ গানের সঙ্গে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ডিলান। সেই গানের কোনও রিক্রেয়েশনে মিশে যেতে পারে রাজস্থানের মাটির সোঁধা গন্ধ এ কথা বোধহয় কোনও রাজস্থানি ডিলান ভক্তর জন্য মেনে নেওয়া কঠিন। তবে এই কাজটাই খুব সাবলীলভাবে করে দেখিয়েছে একটি রাজস্থানি মিউজিক্যাল ট্রুপ- ‘মানগানিয়ার’ (Manganiyar)।
লু মাজাউ-
শিলিংয়ের এই সংগীত শিল্পীকে অনেকেই ভারতের ‘বব ডিলান’ বলে থাকেন। ডিলানের এই অন্ধভক্ত গত ৫০ বছর ধরে আজকের দিনটা সেলিব্রেট করেন, কারণ আজ তাঁর ঈশ্বরের জন্মদিন। মাজাউ, ডিলানের অজস্র গান লাইভ পারফর্ম করেছেন, রেকর্ড করেছেন। তবে লু-এর কন্ঠে ডিলানের ‘নকিং অন দ্য হেভেনস ডোর’ গানটি মারাত্মক জনপ্রিয়।
সংগীতের বিভিন্ন ধারাকে ঋদ্ধ করেছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। লোকসংগীত থেকে ব্লুজ, রক, পপ, জ্যাজ এমনকি র্যাপ সংগীতের আঙিনাতেও রয়েছে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। যখনই পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে প্রতিবাদের দরকার পড়েছে গিটার হাতে মাইক্রোফোনের সামনে দৃঢ়কণ্ঠে ডিলান গেয়ে উঠেছেন, ‘হাউ মেনি রোডস মাস্ট আ ম্যান ওয়াক ডাউন, বিফোর ইউ কল হিম আ ম্যান?’।