প্রথম দিনটির কথা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। আমি একটি ছবির সম্পাদনার কাজ করছি। তপনবাবু বলে একজন এডিট করছেন। আমি পাশে বসে আছি। তখন ছেলেটি এল। ফুটেফুটে চেহারা। একদম নায়কের মতো দেখতে। প্রথম দিনই দেখলাম, বেশ হাসিখুশি।
কীভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে এসে পৌঁছোল ছেলেটি? সেই গল্প বলতে গেলে, একটু পুরনো কথায় ফিরে যেতে হবে।
আমাদের ইন্ড্রাস্টির অনেক পুরনো শিল্পী ছিলেন প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। উত্তম কুমারের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন প্রশান্তবাবু। একটু নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতেন। আমার পরিচালনাতেও কাজ করেছেন। শুনেছিলাম, প্রশান্তবাবুর একটি ছেলে আছে। প্রশান্তবাবু তাকে অভিনয় জগতে নিয়ে আসতে চান। তপনবাবুও তার কথা আমায় বলেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই ফুটফুটে ছেলেটি সেদিন হাজির স্টুডিয়ো পাড়ায়।
তখন তরুণবাবু (মজুমদার) ‘পথভোলা’ নামে একটি ছবির শ্যুটিং শুরু করছেন। তার জন্য অভিনেতা খুঁজছিলেন। আমি ছেলেটিকে দেখার পরে, তার কথা তরুণবাবুকে বলি। ছবির আর এক অভিনেত্রী নয়নার (দাস) কথাও বলেছিলাম। সেই শুরু হয় এই দু’জনের বাংলা ছবির জগতে যাত্রা।
একটা সময়ে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়কে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পর পর কাজ করে গিয়েছে, হিট ছবি দিয়ে গিয়েছে আমাদের মিঠু। যেমন ভালো নাচতে পারত, তেমনই ভালো ছিল অ্যাকশনের দৃশ্যেও। তার সঙ্গে ছিল খুব সুন্দর চেহারা। সব মিলিয়ে হিরো হওয়ার সব উপাদানই ছিল ওর মধ্যে। আর সেটির পূর্ণ সদ্ব্যবহারও করতে পেরেছিল মিঠু।
যখনই ওর সঙ্গে দেখা হত, ও আমাদের মন ভালো করে দিত। আনন্দে ভরিয়ে রাখত সকলের মন। ওর মতো হাসিখুশি মানুষ খুব কমই দেখেছি আমরা।
কিন্তু সকলের সময় এক রকম যায় না। যে কোনও শিল্পের জগতেও টিকে থাকতে গেলে, নিজেকে সময়ের সঙ্গে বদলাতে হয়। মিঠু হয়তো সেভাবে নিজেকে বদলাতে পারেনি। তাই একটা সময়ে ওর হাতে সিনেমার কাজ কমে যায়। কিন্তু তা বলে ও অভিনয় জগত থেকে সরে যায়নি। যাত্রা আর নাটকে পুরোদস্তুর অভিনয় করে গিয়েছে।
আবার যখন সুযোগ পেয়েছে, ফিরে এসেছে ছোটপর্দায়। সেখানেও মিঠু পুরোপুরি সফল।
আজ মিঠু নেই। কিন্তু বাংলা ছবির জগত যত দিন থাকবে, তত দিন মনে থাকবে মিঠু ওরফে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। যে নায়কদের পর্দায় দেখতে এক সময় বাংলা ছবির দর্শক বারবার সিনেমাহলে ফিরে যেতেন, মিঠু সেই সময়ের নায়ক, সেই সময়ের অন্যতম সফল নায়ক। বাংলার ছবির ইতিহাস লেখা হলে, ওর নাম তা থেকে বাদ তো যাবেই না, বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবেই লেখা হবে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের কথা।
আমাদের মিঠুর কথা।