ক্যানসারের অ্যাডভান্স স্টেজে রয়েছেন, কেমোথেরাপি চলছে, স্বাভাবিক নিয়মেই তাই চুল উঠে যাবে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাই নিজের চুল নিজের হাতেই কেটে ফেললেন হিনা খান। কাজটা কঠিন, তবু নিজেকে শক্ত রেখে সেই কাজটাই করলেন হিনা খান। চোখের জল বাগ মানল না হিনার মায়ের। নিজেকে সামলে মাকে সান্ত্বনা দিলেন মেয়ে। নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন হিনা খান।
হিনার পোস্টে তাঁকে তাঁর হেয়ার ড্রেসার বন্ধুর সাহায্য নিয়ে চুল কেটে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। হিনার চোখ ছলছল করে ওঠে, তবু মা এবং সকলের জন্য নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখতে দেখা গেল অভিনেত্রীকে। আবেগ সামলাতে পারলেন না হিনার মা, তখন তাঁর এই অসুস্থ মেয়েই তাঁকে আশ্বস্ত্য় করে বলে ওঠেন, ‘এটা শুধু চুলই তো মা, তুমি কখনও নিজের .চুল কাটোনি! মা কেঁদো না, তোমার শারীর খারাপ করবে তো…’। তবু মায়ের মন মেয়ের জন্য কেঁদে ওঠে।
ভিডিয়োটি পোস্ট করে হিনা খান লিখেছেন, ‘কাশ্মীরি ভাষায় আমার মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন (আমাকে আশীর্হাদ করে)। ব্যাকগ্রাউন্ডে বসে তিনি এমন কিছু সাক্ষী হচ্ছেন, যেটা তিনি কখনও কল্পনা করারও সাহস দেখাননি। মন ভাঙলে নিজের আবেগকে পরিচালনা করার জন্য আমাদের সকলের কাছে এটা ছাড়া আর কোনও সরঞ্জাম নেই।’
হিনা লিখেছেন, ‘যে সমস্ত সুন্দর মানুষ এই লড়াই লড়ছেন, বিশেষত মহিলারা, আমি জানি, তাঁদের কাছে এটা কঠিন। আমাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছেই চুল হল একটা মুকুট, এটা আমরা খুলে ফেলতে চাই না। তবে, আপনি যদি এমন কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হন, যে যুদ্ধ আপনাকে আপনার সমস্ত চুল - আপনার সমস্ত গর্ব, আপনার মুকুট হারাতে হবে। আপনি যদি এই যুদ্ধ জিততে চান তহলে আপনাকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আর আমি জিততেই চাই।'
হিনার কথায়, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই যুদ্ধে জেতার জন্য আমি নিজেকে সমস্ত সুযোগ দেব। আমি আমার সুন্দর চুল পড়ে যাওয়া শুরুর আগে এটাকে চলে যেতে দিচ্ছি। কারণ, দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে এই মানসিক ভাঙ্গন সহ্য করতে চাইনা। তাই, আমি আমার মুকুট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার আসল মুকুট হল আমার সাহস, আমার শক্তি এবং আমার নিজের প্রতি আমার ভালবাসা।, আর হ্যাঁ, আমি একটা সুন্দর উইগ তৈরি করতে আমার নিজের চুলই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, 'চুল ফিরে আসবে, ভ্রু ফিরে আসবে, দাগও ম্লান হয়ে যাবে, কিন্তু নিজের আত্মাকে সম্পূর্ণ রাখতে হবে।' হিনার কথায়, ‘এটা আমার গল্প, আমি আমার এউ যাত্রা রেকর্ড করছি, যাতে আমি নিজেকে এটা আলিঙ্গন করার জন্য তৈরি হতে পারি। যদি আমার এই মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প. অভিজ্ঞতা, অন্য কারোর একটা দিন অন্তত ভাল করে তুলতে পারে। এটা মূল্যবান।’
এই বিশেষ দিনটি যাঁদের উপস্থিতি, সমর্থন ছাড়া সম্ভব ছিল না জানিয়ে হিনা তাঁর মা ও প্রেমিক রকি জয়সওয়ালকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি, নিজের হেয়ার ড্রেসারকে সেলুনের ব্যস্ততার শেষে তাঁর সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হিনার কথায়, ‘ঈশ্বর আমাদের কষ্ট লাঘব করুন এবং আমাদের বিজয়ী হওয়ার শক্তি দিন। প্রার্থনা করুন আমার জন্য প্রার্থনা করুন।’
সবশেষে আবেগে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন হিনা খানের মা, চোখের জল সামলাতে পারেননি তিনি। মেয়ের কাছে এসে তিনি তাঁকে চুমুতে ভরিয়ে দেন। চোখের জল সামালানোর জন্য হিনাকেও কখনও কখনও চোখ বুঝে নিতে দেখা যায়। তবে চুল কাটার শেষে হিনাকে বলতে শোনা গেল, ‘মন্দ লাগছে না কিন্তু…’