নক্ষত্রপতন বাংলা সাহিত্যের জগতে। সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন সাহিত্য়িক সমরেশ মজুমদার। বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন, বাইপাস লাগোয়া এক বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন, তবে সোমবার বিকাল ৫টার পর ফের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় সমরেশ মজুমদারের। শেষরক্ষা হল না, এদিন ৫.৪৫ মিনিটে কালপুরুষের জগতে বিলীন হয়ে গেলেন ‘কালবেলা’র স্রষ্টা।
সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক গত ২৫শে এপ্রিল থেকে ভর্তি ছিলেন অ্যাপেলো হাসপাতালে। এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে, দীর্ঘদিন ধরেই সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ)-র সমস্যা ছিল তাঁর। সেটিই কাল হয়ে দাঁড়ালো! তাঁর মৃত্যুতে মনভার গোটা বাংলার। সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক শোকবার্তায় জানান, 'বিশিষ্ট সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
বাংলা সাহিত্যের লব্ধপ্রতিষ্ঠ কথাকার সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল: দৌড়, কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী, উত্তরাধিকার, অর্জুন সমগ্র, সাতকাহন ইত্যাদি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি সাহিত্য অকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কারসহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি সমরেশ মজুমদারের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।'
সমরেশ মজুমদারের শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছিল। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তবে শনিবার ফের আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। দু-দিনের মধ্যেই ঘটে গেল অঘটন। দুই বাংলাতেই সমরেশ মজুমদারের জনপ্রিয়তা সীমাহীন।
১৯৪২ সালে উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম প্রয়াত কথা সাহিত্যিকের। প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে। তাই তো আজীবন উত্তরবঙ্গের প্রতি আলাদাই টান ছিল সমরেশবাবুর। ষাটের দশকের গোড়ায় কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন, বাংলায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন।
চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেররা তাঁর কলমে উঠে এসেছে। গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুন তাঁর সৃষ্টি। 'উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ' বাংলা সাহিত্য জগতের অনন্য সম্পদ। এর বাইরেও ‘উত্তরাধিকার’, ‘সাতকাহন’, ‘তেরো পার্বণ’, ‘স্বপ্নের বাজার’-এর মতো উপন্যাস তাঁর অনন্যা সৃষ্টি। তাঁর মৃত্যু নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যজগত ও সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে এক অপূরণনীয় ক্ষতি।