বর্তমানে সে টি আর পি টপার মেগা ‘পরিণীতা’র অন্যতম প্রধান মুখ। ছোট পর্দার দৌলতে সে এখন সকলের ঘরের মেয়ে ন্যাড়াগোয়ালের 'পারুল'। কিন্তু পর্দার 'পারুল'-এর মতো ঈশানী চট্টপাধ্যায় বাস্তব জীবনেও যথেষ্ঠ মেধাবী। তাঁর জীবনের গল্প সিরিয়াল-সিনেমার গল্প থেকে কোনও অংশে কম না। মেগায় সুযোগ পাওয়ার বহু বছর আগে মায়ের হাত ধরে জি বাংলার জনপ্রিয় শো দিদি নম্বর ওয়ানের মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন ঈশানী, সেখানেই নিজের জীবন সংগামের কথা তুলে ধরেছিলেন নায়িকা।
সেলাইয়ের কাজ করে অনেক কষ্ট করে ঈশানীকে বড় করেন তাঁর মা সংঘমিত্রা চট্টপাধ্যায়। দিদি মঞ্চে নায়িকার মা বলেন, 'সেলাইয়ের কাজ করে মেয়েকে বড় করেছি। আমার স্বামী কন্টাক্টর হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে প্রতি মাসে কাজও হত না। কখনও বন্ধ থাকত। তাই আমি সেলাইয়ের কাজ করে আমার স্বামী আর মেয়েকে দেখতাম।' তারপরই নায়িকার মা জানান, তিনি তাঁর মেয়েকে ডাক্তার করতে চান।
আরও পড়ুন: 'যিশুদার মুখে পজিটিভই শুনেছি...,' চৈতন্য নিয়ে তুলনা, কী বলছেন 'লহ গৌরাঙ্গের’ নায়ক দিব্যজ্যোতি?
এরপর শোয়ের সঞ্চালিকা রচনা বন্দোপাধ্যায় সরাসরি ইশানীর থেকে জানতে চান তাঁর ছোটবেলা সম্পর্কে। তখন নায়িকা বলেন, 'আমার ছোট বেলাটা একটু কঠিনই কেটেছে। ছোটবেলায় যখন থেকে জ্ঞান হয়েছে তখন থেকেই দেখেছি বাবার সব সময় কাজ থাকত না। যখন যখন কাজ পেতেন তখন সেরকম আয়ও হত না। মাকে দেখেছি, মা সেলাইয়ের কাজ করে যা উপার্জন করতেন, তা দিয়েই সংসারের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু মা সকাল থেকে উঠে অনেক পরিশ্রম করতেন। সকালে উঠে রান্না করা, আমাকে স্কুল নিয়ে যাওয়া। তাছাড়াও সব কিছু করে যে ভাবে আগলে রেখেছিলেন আমাদের সেটা খুবই মুগ্ধ করত আমাকে।'
তারপর অভিনেত্রী তাঁর বাড়ির অবস্থার কথাও জানান। নায়িকার কথায়, 'আমি দেখেছি আমাদের একটা দোকান ছিল, আর তার পিছনের আমাদের ঘর ছিল। উপরে ফাটা অ্যাসবেটর ছিল। বৃষ্টির সময় ওই সব জায়গা দিয়ে জল পড়ত। তখনই দেখতাম বাবা আর মা কোথায় কোথায় জল পড়ছে সেখানে বালতি নিয়ে দিত। তখন ছোট ছিলাম ওতো বুঝতাম না। তখন বলতাম আমি কি কোনও সাহায্য করব? তখন মা বলতেন, 'তোকে আমাদের পরিস্থিতিটা দেখতে হবে না। তোকে যেটা পড়াশোনা করানো হচ্ছে তুই সেই দিকে এগিয়ে যা।'
আরও পড়ুন: 'দাগি'র প্রথম গানে রোম্যান্টিক মুডে নিশো–তমা! প্রকাশ্যে ‘একটুখানি মন'
নায়িকা আরও বলেন, অনেক সময় এটাও হত মা সেলাইয়ের কাজ করছেন, আমি মায়ের পাশে বসে পড়াশোনা করছি, দোকানে অনেকেই এসে জিজ্ঞাসা করতেন, 'তোর মেয়েকে কবে কাঁচি ধরাবি?' তখন আমার মা একটা উত্তর দিতেন সেটা শুনে খুব ভালো লাগত আমার, আমি অনুপ্রেরণাও পেতাম। মা বলতেন, 'কাঁচি কেন ধরবে না, কিন্তু সার্জারির রুমে ধরবে।' তবে আমি সব সময়ই টপার ছিলাম।'
এরপর ঈশানী তাঁর বাবার অসুস্থতা ও মৃত্যু নিয়েও নানা কথা জানান। তিনি বলেন, 'শেষ দিকে বাবা একদমই কাজ করতেন না। আসতে আসতে কিডনির সমস্যা বাড়তে শুরু করে। শেষের দিকে ওঁর কিডনি আর কাজই করতে পারছিল না। তাঁর সঙ্গে আবার হার্ট অ্যাটাক। পাশাপাশি বাবার করোনারি আর্টারিও ব্লক হয়ে গিয়েছিল। সেটার চিকিৎসা করাতেই বাবা বেঙ্গালোরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার সময় রাস্তাতেই ওঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। তিনি মারা যান। তবে মারা যাওয়ার আগে থেকেই বাবা বেড রেস্টে থাকতেন। তখন মা টাকা জমিয়ে একটা অন্য দোকানে এই সেলাইয়ের কাজটা শুরু করেন। ফলে সেই সময় আমাদের ঘরের সামনের দোকানটা ফাঁকা পড়ে থাকে। তখন মা সেখানে মুদির দোকান খোলেন। বাবা যেহেতু অসুস্থ তাই আমি দোকানে বসতাম। কেউ এলে তাঁকে জিনিস দিতাম আর ওখানে বসেই পড়াশোনা করতাম।' তবে কেবল এটুকুই নয়। বাবাকে ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে তাঁর যাবতীয় সেবা যত্নের পুরো ভারই থাকত ঈশানীর উপর। বাবাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে সবটাই সামলাতেন নায়িক।
কিন্তু ডাক্তারি পড়া তো বেশ খরচসাপেক্ষ কীভাবে সবটা সামাল দিতেন ঈশানীর মা? রচনার প্রশ্নে সংঘমিত্রা বলেন, ‘আমি সেলাইয়ের কাজ করে যতটা পারি চেষ্টা করি। ওঁর বাবা ওঁকে খুব ভালোবাসতেন। যেখানেই আমার মেয়ে যেত কোনও না কোনও পুরস্কার পেত। তখন ওঁর বাবা খুব খুশি হয়ে সবাইকে দেখাতেন, বলতেন, ’দেখ আমার মেয়ে কত পুরস্কার পেয়েছে'। কিন্তু আজ ওঁর বাব নেই।' তারপরই রচনা ঈশানীর থেকে জানতে চান তিনি কী কী ক্ষেত্রে পুরস্কার পেতেন? এই প্রশ্নে নায়িকা জানান আঁকা থেকে নাচ সব ধরনের প্রতিযোগিতায় তিনি অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেতেন।