আরজি কর কাণ্ডের জল অনেক দূর গড়িয়েছে। গত সোমবার, শীর্ষ আদালত জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি মিটিয়ে কাজে ফেরার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করে। আর সেখানেই তাঁদের পাশে দাঁড়াল সাধারণ মানুষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় খাবারের ব্যবস্থা করল।
কী ঘটেছে?
গত সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর ছিল সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর কাণ্ডের শুনানি। সেখানেই শীর্ষ আদালত জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি মিটিয়ে কাজে ফেরার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এক মাস হয়ে গিয়েছে এবার উৎসবে ফিরতে।' এই দুই ঘটনার পরই ক্ষেপে ওঠেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে কপিল সিব্বল শীর্ষ আদালতে অসত্য তথ্য জানাচ্ছেন। তাই তাঁরা মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করেন। বর্তমানে সেখানেই তাঁরা তাঁদের অবস্থান জারি রেখেছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাধারণ মানুষও। সকলের দাবি এক। হয় চিকিৎসকদের দাবি মানতে হবে, নইলে চলবে অচলাবস্থা। তাঁদের প্রতিবাদে কখনও প্রতীকী শিরদাঁড়া নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে, কখনও মস্তিষ্ক, কখনও আবার চোখ। উঠেছে চোখা চোখা স্লোগান।
মঙ্গলবার রাতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে ক্যান্টিন খুলে রান্না করা হয় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের জন্য। সেই ছবি প্রকাশ্যে এনে এক ব্যক্তি লেখেন, 'সাব্বাশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস । সাব্বাশ । প্রতি মুহূর্তে পাশে আছে গোটা কলকাতা । চোখে জল আসুক, আরও আসুক।' শুধুই কী তাই? সল্টলেকের স্থানীয় ব্যক্তিরা নিজেদের উদ্যোগে জলের ব্যবস্থা করেছেন চিকিৎসকদের জন্য।
কেবল রাতের খাবার নয়। বুধবারের দুপুরের খাবারও আসে যাদবপুরের ক্যান্টিন থেকেই। জানা গেছে, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ২০০ টি ডিম দিয়ে গিয়েছেন চিকিৎসকদের জন্য।
রাজারহাটের একাধিক স্থানীয়রাও খিচুড়ি সহ নানা রকম খাবার নিয়ে এসেছিলেন রাতে যাতে চিকিৎসকদের অভুক্ত থাকতে না হয়। এমনকি অনেক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি খাবার ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে সমানে জল, খাবার পাঠিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক এবং যাঁরা সেখানে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন তাঁদের জন্য। এসেছে পেটি পেটি জল।
গতকাল রাতে তুমুল বৃষ্টিতে ডাক্তাররা ভেজার পর এদিন সকলেই ব্যবস্থা হয়ে যায় ত্রিপল, তাঁবু এবং ফ্যানের। বাদ যায়নি ফোন চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা। ওখানকার একাধিক অফিসে বাথরুম ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে আন্দোলনকারীদের।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যাই করেছেন অনিল, দাবি পুলিশের! মালাইকার মা বললেন, 'ওর কোনও সমস্যা ছিল না, তাও কেন...'
এক কথায় বলতে গেলে গোটা সমাজ যেন এগিয়ে এসে স্বইচ্ছায় পাশে দাঁড়িয়েছেন চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরাও আন্দোলনের সঙ্গে সেখানকার পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখছেন।