প্রিয় জলের গানের বাড়িটি আর নেই…নেই রাহুল আনন্দের সন্তান-সম ত্রিশ হাজার বাদ্যযন্ত্র। অশান্ত, জ্বলন্ত বাংলাদেশে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে রাহুল আনন্দের স্বপ্নের বাড়ি। চোখের সামনে সেই ধ্বংসলীলা দেখেছেন। স্ত্রী ও ১৩ বছরের সন্তানকে নিয়ে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে কোনওক্রমে পালিয়ে বেঁচেছেন রাহুল, তবুও বাংলাদেশের প্রতি ক্ষোভ নেই। আছে ভালোবাসা।
বিক্ষুব্ধ জনতা ৩২ নম্বর ধানমণ্ডি রোডে অবস্থিত রাহুলের সাধের বাড়িতে হামলা চালায় গত সোমবার। চোখের সামনে নিমেষের মধ্যে পুড়ে ছাই লক্ষ লক্ষ টাকার বাদ্যযন্ত্র। আপতত অজ্ঞাত ঠিকানায় রয়েছেন রাহুল। শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেই অজ্ঞাত ঠিকানা থেকেই বাংলাদেশের এক প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমকে রাহুল বলেন, ‘তবু শান্তি আসুক আমার সোনার দেশে, যে কোনও মূল্যে। সে মূল্য যদি হয় আমার সোনার সংসারের পোড়া ছাই অথবা বাদ্যযন্ত্র পোড়া কয়লার বিনিময়ে, তাতেও দুঃখ নেই। ভালবাসি বাংলা আর বাংলার মানুষকে, আমি বাংলায় গান গাই।’
রাহুলের বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গানটিও তাঁর দলের তরফে পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে বাসভবনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে টুকরো চিত্র। দলের সকল বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্র ছাড়াও, সঙ্গীতশিল্পীর ঘরের খাট-আলমারি থেকে সকল জিনিসপত্র এখন ছাই।
আরও পড়ুন-ফ্রক পরা বাচ্চা মেয়েটিকে আদরে ভরাচ্ছেন ‘মামা’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য,খুদেকে চিনলেন?
এই ঘটনা নিয়ে জলের গানে-র তরফে জানানো হয়, ‘এতদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে! কেন আমরা ভালবাসা আর প্রেম দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে- 'কোন্ ছোবলে স্বপ্ন আমার হলো সাদা কালো? মার বসত অন্ধকারে; তোরা থাকিস ভালো!’
রাহুল আনন্দ বরাবরই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে সরব। কোটা আন্দোলন নিয়েও ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে ঢাকার রবীন্দ্রসরোবরে গান গেয়েছিলেন। কে জানত সেই আন্দোলনের জয়ের পরেই সর্বহারা হবেন রাহুল। পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সবকিছু, বউ-ছেলে নিয়ে কার্যত পথে বসেছেন রাহুল আনন্দ। তবু তাঁর একটাই চাওয়া- ‘সবার ভাল হোক। ভাল থাকুক আমার বাংলাদেশ।’