দেখতে দেখতে দুঃস্বপ্নের একমাস। ৯ই অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল তরুণী চিকিৎসকের ‘অর্ধনগ্ন’ মৃতদেহ। ছিন্নভিন্ন দেহ, ৯০ ডিগ্রি কোণে রাখা ছিল দু-পা। যৌন নির্যাতনের চিহ্ন ছিল স্পষ্ট।
এই মর্মান্তিক মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। প্রতিবাদের একমাস পূর্তির দিনই সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হল। সিবিআই স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিল। সঙ্গে একগুচ্ছ প্রশ্ন রাখল। রাজ্যের তরফে সেইসব প্রশ্নের জবাব দিতে খানিক হিমসিম খেলেন কপিল সিব্বল। কিন্তু শুনানির শেষলগ্নে জুনিয়র চিকিৎসকদের মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে কাজে ফেরার কথা বলল সর্বোচ্চ আদালত।
এর কয়েকঘণ্টার মধ্যেই নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা- ‘পুজোয় ফিরে আসুন। উৎসবে ফিরে আসুন।’ মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জানান, বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো! সেই নিয়ে কোনওরকম ‘ভুলভ্রান্তি, ষড়যন্ত্র, কুৎসা, অপপ্রচার, চক্রান্ত’ বরদাস্ত করা হবে না রাজ্য সরকারের তরফে। একইসঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে বলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফেরার বার্তায় স্তম্ভিত অনেকেই। এবার এই মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ। যিনি শুরু থেকে আরজি করের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। কিঞ্জলের কণ্ঠে এদিন ক্ষোভ, হতাশা আর অভিমান। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকে অস্বীকার করা, আমাদের আন্দোলনকে অসম্মান করা এটা মনে হয় সাধারণ মানুষ খুব ভালোভাবে মেনে নেবে না। উৎসব হবে কী হবে না, সেটা মানুষ ঠিক করবে, মানুষ সেই বিচার করবে উৎসব হবে নাকি পুজো হবে’।
মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফেরার বার্তা প্রসঙ্গে কিঞ্জল স্পষ্ট জানান, ‘এই কথাগুলো শোনা এবং এগুলোকে গ্রহণ করা খুবই কষ্টের। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার কিছু বলাটা নিষ্প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি। কারণ সাধারণ মানুষ সবটা দেখছেন এবং বুঝতে পারছেন।’
এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে আপনারা যদি রাস্তায় থেকে.....অনেক মানুষ তো ডিস্টার্বডও হন। অনেক বয়স্ক মানুষও আছেন। মাইক লাগালে তাঁদের ঘুমেরও অসুবিধা হয়। সেজন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মও আছে যে রাত ১০ টার পরে মাইক বাজানো যাবে না বা এত সীমার মধ্যে মাইক বাজাবেন। তার থেকে জোরে বাজাবেন না। তা সত্ত্বেও আমরা সব ছেড়ে দিয়েছি।’
মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফেরার বার্তা নিয়ে কড়া জবাব দিয়েছেন নিহত তরুণী চিকিৎসকের মা-ও। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রদীপ আর কোনও দিন জ্বলবে না। মানুষ যদি মনে করে উৎসবে ফিরবে, তাহলে ফিরবেন। যা গিয়েছে আমার গিয়েছে। কিন্তু গোটা দেশ আমার মেয়েকে পরিবার মনে করছে। তারা যদি মনে করে উৎসবে ফিরবেন তাহলে ফিরবেন’।