আরজি কর কাণ্ডের পর সোমবার প্রেস কনফারেন্স থেকে মমতার বলা, ‘১ মাস ১ দিন হয়ে গেল, এবার উৎসবে ফিরুন’ মন্তব্য নিয়ে চারদিক তোলপাড়। এরই মাঝে ফেসবুকে নজিরবিহীন পোস্ট, তৃণমূল ঘনিষ্ট, প্রাক্তন টিএমসি সাংসদ কবীর সুমন। তিনি মমতার বলা ‘উৎসবে ফিরুন’ কথার সমালোচনা করলেন প্রকাশ্যে।
বর্ষীয়ান গায়ক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি সম্মান করি, কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক একটি উক্তির আমি বিরোধিতা করছি-- 'উৎসবে ফিরুন।' ’
সুমন আরও লিখলেন, ‘অভয়া বা তিলোত্তমার ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে যে ব্যাপক আন্দোলন চলছে, মাননীয়া মমতা যদি তার খবর সম্যক রেখে থাকেন ( যা তিনি রাখেন বা তাঁর রাখা উচিত বলে আমার ধারণা) তাহলে ঐ উক্তিটি করা তাঁর একেবারেই উচিত হয়নি। এই দেশে আর কোন কোন নৃশংস কাণ্ড ঘটছে,তার প্রসঙ্গ না টেনেও বলব আরজি করের ঘটনায় অনেকেই রুষ্ট, অনেকেই আন্দোলনে নেমেছেন।’
তিনি আরজি কর নির্যাতিতাকে নিয়ে গোটা বাংলা জুড়ে যে আন্দোলন চলছে, তা নিয়েও লিখেছেন এই পোস্টে। কবীর সুমনের কথায়, ‘এই আন্দোলন এখন বিচিত্র রূপ ধারণ করেছে, করে চলেছে। গান লেখা, গান গাওয়া কবিতা লেখ-বলা, শাঁখ বাজানো, রাস্তায় হৈ হৈ করে উদ্দীপক গানের সঙ্গে নৃত্য করা, রাস্তা জুড়ে ছবি আঁকা লেখা ইত্যাদি। সকলেই নিশ্চই মনপ্রাণ দিয়ে করছেন সবকিছু। আন্দোলনমুখী কর্মকাণ্ড কোথাও কোথাও উৎসবের রূপ নিয়ে ফেলছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে কি? কেউ কেউ আবার মহামতি লেনিনের উদ্ধৃতি দিচ্ছেন যদিও কলকাতায় যে আন্দোলন আমি দেখছি তাতে নাগরিক উচ্চমধ্যবিত্ত হিন্দুদেরই দেখছি বেশি , আর লেনিন বেশি চিন্তিত ছিলেন শ্রমজীবীদের নিয়ে। কেউ কেউ এই আর জি কর আন্দোলনকে লেনিনিস্ট বিপ্লব পর্যন্ত বলে ফেলেছেন। এরকম অবস্থায় ‘উৎসবে ফিরুন’ বলা খুবই কাঁচা কাজ, হৃদয়হীনতার পরিচয়। আন্দোলনকারীরা স্বাভাবিকভাবে রেগে গিয়েছেন। এমনিতে আমি মাননীয়া মমতার ভোটার ও প্রগ্রেসিভ বিপ্লবী মধ্যনাগরিক বাঙালিদের কাছে এক নিবেদিতপ্রাণ ‘চটিচাটা’। এ হেন আমিও মনে করছি ‘উৎসবে ফিরুন’ কথাটা বলা অন্যায় হয়েছে।’
তবে রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণেরও বিরোধিতা করলেন তিনি। নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘একই সঙ্গে দেখেছি দেখছি আমায় যাঁরা ঘৃণা করেন সেই বঙ্গবানরা মাননীয়া মমতাকে ‘চটিপিসি’, ‘চটিবুড়ি’ ইত্যাদি নামে ডেকে চলেছেন। এঁরা নাকি এক মহিলাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে আন্দোলনে নেমেছেন। এঁরাই আবার প্রায় সোত্তর বছর বয়সী এক মহিলাকে এইভাবে অপমান করছেন।’
এরপরই সুমনের পোস্টে বিজেপি ও সিপিএমকে নিয়ে সমালোচনা। তিনি লেখেন, ‘যদিও, যা দেখলাম, তাঁকে ও তাঁর দলকে ভোটে হারিয়ে সরকার গঠন করার ক্ষমতা কারুরই নেই। CPIM উঠেই গিয়েছে বলা যায়। তাঁরা আছেন ফেসবুকে আর, মনে হচ্ছে অভয়া-আন্দোলনের কোথাও কোথাও। কিন্তু ভোট হলে আবার তাঁরা শূণ্যে বিলীন হবেন বলেই অনেকে মনে করেন। বিজেপি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে ক্রনিক আমাশায় ভোগা রুগীর মতো।’
নিজের এই পোস্টের শেষে সুমন যোগ করেছেন, ‘অভয়ার জন্য বিচার চেয়ে রাস্তায় নামা এবং আর-একজন মহিলাকে সমানে কুৎসিৎ গালাগাল দিয়ে যাওয়া একই সঙ্গে চালানো যায় কি? 'উৎসবে ফিরুন' অন্যায়, হৃদয়হীন উক্তি। আলবৎ। এক বর্ষীয়সী মহিলাকে কদর্য ভাষায় অভিহিত করা, আক্রমণ করা?’