সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের জেরে কার্যত স্তব্ধ বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা-সহ ওপার বাংলার একাধিক শহরে বনধের চেহারা নিয়েছে। সংরক্ষণ বিরোধী পড়ুয়াদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও আধাসেনার হামলার জেরে মৃত্যু, এর জেরেই ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশ। খুনিদের যোগ্য শাস্তি, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থার অবসানের দাবি তুলে বৃহস্পতিবার ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ পালন করছেন আন্দোলনকারীরা।
সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৬ জন! অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। এই পরিস্থিতিতে সবপক্ষকে শান্তির বার্তা দিলেন দুই বাংলার অতি জনপ্রিয় এবং খ্যাতনামী শিল্পী কবীর সুমন। যিনি মনেপ্রাণে শুধু সে দেশকে ভালোবাসেন তা নয়, সম্পর্কে তিনি বাংলাদেশের জামাইও বটে। আসলে সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে সংসার না করলেও কাগজে কলমে আলাদা হননি দুজনে।
বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে কলম ধরলেন সুমন। দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট তিনি লেখেন, 'আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয় আসয়ে নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালবাসা আমি পেয়েছি তা ভুলে থাকতেও পারছি না। ভুলবই বা কেন।
ছবি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটু আগেই দেখলাম। মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে কাজি নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল্ কর রে লোপাট'! মনে হচ্ছে গানটি এডিট করে বসানো হয়েছে ভিডিওর সঙ্গে। ঠিক কাজই করা হয়েছে।
কত সময়ে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমার গানের লাইন লিখে দিয়েছেন দেয়ালে। পশ্চিমবঙ্গে সে তুলনায় কিছুই দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই মনে মনে আমি বাংলাদেশেরও নাগরিক।'
তিনি আরও যোগ করেন, 'আমার জীবনসায়াহ্ন কাটছে আমার মাভাষায় খেয়াল রচনা করে, গেয়ে, শিখিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের সরকার আমার বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন যদিও তাঁদের পেটোয়া এক শিল্পী বাংলা খেয়াল নিয়ে এবং সেই সঙ্গে আমায় বিদ্রুপ ক'রেছেন এবং এই রাজ্যের সরকারঘনিষ্ঠ একটি পত্রিকা সেই বিদ্রুপ ও মগজহীন উদ্ভট বক্তব্য ঘটা করে ছাপিয়েছেন - আমার একটি ব্যঙ্গচিত্র সমেত।
আমার জীবনের সেরা কাজ এবং আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান কাজ বাংলা খেয়াল বাংলাদেশে চর্চা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী মরহুম আজাদ রহমান বেশ কিছু বাংলা খেয়াল রচনা করে গিয়েছেন বিভিন্ন রাগে।
বাংলা ভাষা আর বাংলা খেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমি বাঁধা - ভালবাসার বন্ধনে। গতবার ঢাকায় গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যে সম্মান ও ভালবাসা পেয়েছি তা ভারতে পেয়েছি কবার?'
কবীর সুমনের কাতর আর্জি, 'অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে যে এমন হলো এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত তাও তো ঠিকমতো জানি না। তাও পঁচাত্তর উত্তীর্ণ এই বাঙলাভাষী করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি: অনুগ্রহ করে হিংসা হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি: বাংলা ভাষার কসম শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন। আর কী বলি। আমি তো সশরীরে যেতে পারছি না ঢাকায়। পারলে যেতাম। রাস্তায় বসে পড়ে সকলকে শান্তিরক্ষার জন্য আহবান করতাম।
হানাহানি বন্ধ হোক। বন্ধ হোক উল্টোপাল্টা কথা বলে দেওয়া। বাঁচুক বাংলাদেশ।বাঁচুন বাংলাদেশের সকলে। জয় বাংলাদেশ। জয় মুক্তিযুদ্ধ…'।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি কবিতাও লিখেছেন কবীর সুমন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বিরোধী হলেই রাজাকার!/ বলে দাও তবে দেশটা কার/ দেশটা কার দেশটা কার! ….বাংলা আমার একাত্তরের, মুক্তির গান রক্তপাত/বঙ্গবন্ধু আমারও নেতা….কাঁদছে দিন কাঁদছে রাত’।
একদম শেষ স্তবকে কবীর সুমন লেখেন— 'বাংলা ভাষা যে তোমাকে আমাকে/ সকলকে দেয় এক ক’রে/ বাংলাদেশের সবাই বাঁচুক/ নি:শ্বাস নিক প্রাণ ভ’রে।'