সোমবার দিনভর বড়ই বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হল তৃণমূলের বিধায়ক, অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিককে। তাঁর ডাক্তারদের ‘ধমক দেওয়া’ ভালোভাবে নেয়নি জনগন। সোজাসুজি তাঁর সঙ্গে আর কাজ করবেন না বলে জানিয়ে দেন ইন্ডাস্ট্রিরই কিছু তারকা। এখানেই শেষ নয়, রাতে স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না নিয়েই, সাবধান করে দেন তাঁকে। ব্যস, তারপর আর কী! ক্ষমা চাইতে চলে আসেন সরাসরি। একা ভিডিয়োও পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর আগেই অবশ্য কাঞ্চনের হয়ে ক্ষমা চাওয়ার কাজটা শুরু করে ফেলেছিলেন তাঁর সদ্য বিবাহিত তৃতীয় স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টোরাজ।
ক্ষমা চাইলেন কাঞ্চন মল্লিক:
‘গতকাল একটি ধর্না মঞ্চে কিছু মন্তব্য আমি করে ফেলি। যা খুব সমালোচিত হয়। সেই কারণেই এই ভিডিয়োটা আমি করছি। প্রথমেই আমি আপনাদের জানাই যে, যা করেছি তাে অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত। আমি কোনও সাফাই গাওয়ার জন্য আসিনি। বিশ্বাস করুন, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বলছি, আমার বাড়িতেও বয়ষ্ক মা ছিলেন, একজন আছে যাকে লাইফসাপোর্টে রাখতে হয়। আমি জানি ডাক্তারদের গুরুত্ব কতটা।’
এরপরই নিজের সাফাই গেয়ে (যদিও বলেছিলেন সাফাই দিতে চান না) কাঞ্চন বলেন, তাঁর এক বন্ধুর মা নাকি আইএমএ (ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) থেকে ডাকা ডাক্তারদের কর্মবিরতির ডাকের দিন (১৭ অগস্ট) তাঁর এক খুব কাছের বন্ধুর মা, যাকে তিনিও মাতৃস্থানেই রাখতেন, তাঁর সেরিব্রাল হ্যামেজ হয়। দু তিনটে জায়গায় ঘুরেও নাকি সঠিক চিকিৎসা পাননি। ফলে সেই বয়ষ্কা বৃদ্ধাটি মারা যান। যা খুব কষ্ট দেয় কাঞ্চন মল্লিককে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, এদিন আউটডোর বন্ধ রাখা হলেও, সব হাসপাতালেই এমার্জেন্সি বিভাগ খোলা রাখা হয়েছিল। শিডিউল অপারেশন বন্ধ রাখা হলেও, জরুরি ব্যবস্থার কাজ চলছিল পুরোদমে, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই।
‘ডাক্তার আমার কাছে ভগবান স্বরূপ। আমি জুনিয়র সিনিয়র কোনও ডাক্তারের মধ্যে ভেদাভেদ করতে চাইনি। এই আন্দোলন ও আন্দোলনকারী ২০০০ শতাংশ যুক্তিসঙ্গত। তাঁদের এই আন্দোলনকে কোনওভাবে খাটো করতে চাই না। আমার স্বপ্নেও আসে না এই ধরনের বিষয়। আমি কোনও নেতা-অভিনেতা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, একজন পিতা হিসেবে চাইছি দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক।’, বলতে শোনা যায় কাঞ্চনকে তাঁর ভিডিয়ো বার্তাতে।
ডাক্তারদের নামে ঠিক কী বলেছিলেন কাঞ্চন মল্লিক?
আন্দোলনে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের কাঞ্চন রবিবার বলেছিলেন, ‘যাঁরা কর্মবিরতি করছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে। ভাল। তাঁরা সরকারি বেতন নিচ্ছেন তো নাকি নিচ্ছেন না? এটা আমার প্রশ্ন। বোনাস নেবেন তো? না নেবেন না? এটা আমার প্রশ্ন।’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা:
তৃণমূল নেতা সোমবার রাতে বলেন, ‘দল নির্বিশেষে জনপ্রতিনিধিদের আরও নম্র এবং সহানুভূতিশীল হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রত্যেকের কাছে আমি আর্জি জানাব যে তাঁরা যেন স্বাস্থ্য সমাজ বা নাগরিক সমাজের কারও বিরুদ্ধে আজেবাজে মন্তব্য না করেন। প্রত্যেকের প্রতিবাদ এবং মতপ্রকাশের অধিকার আছে।’
সঙ্গে তিনি নিজের বক্তব্যে জুড়েছিলেন, ‘প্রত্যেকের প্রতিবাদ এবং মতপ্রকাশের অধিকার আছে - এই বিষয়টাই বিজেপি-শাসিত রাজ্যের থেকে বাংলাকে আলাদা করে তোলে। আমরা নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে বুলডোজার মডেল এবং দমিয়ে রাখার রাজনৈতিক কৌশলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।’