স্ত্রীর হাতে হেনস্থার শিকার দীর্ঘদিন ধরে। ২৪ পাতার সুইসাইড নোটে এমনই অভিযোগ এনে আত্মহত্যা করেছেন ৩৪ বছরের আইটি কর্মী অতুল সুভাষ। উত্তরপ্রদেশের ছেলে অতুল বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি সংস্থায় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন। বিচ্ছেদ মামলায় খোরপোশ-সহ নানান বিষয়ে স্ত্রী ও তার পরিবারের উপর থেকে চাপ আসছিল, সুইসাইড নোটে লিখেছেন অতুল। সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল এই ঘটনায়। আরও পড়ুন-বউকে দুষে আত্মহত্যা অতুল সুভাষের, মহিলাকে চাকরি থেকে তাড়াতে আর্জি নেটপাড়ার, বড় পদক্ষেপ Accenture-র
অভিনেত্রী তথা বিজেপি সাংসদ রানাওয়াত বুধবার এই আত্মহত্যার ঘটনায় মুখ খুলেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মান্ডির সাংসদ বলেন, স্ত্রী এবং তার পরিবারের তরফে হয়রানির কারণে বেঙ্গালুরুতে যে প্রযুক্তিবিদ আত্মহত্যা করেছেন, তা ‘হৃদয়বিদারক’ ঘটনা। আইনের অপব্যবহার করে ‘ভুয়ো নারীবাদ’কে হাতিয়ার করে যে সব মহিলা স্বামীর থেকে টাকা হাতানোর চেষ্টা করেন, তাদের কড়া সমালোচনা করেন অভিনেত্রী।
কঙ্গনা বলেন, ‘গোটা দেশ স্তম্ভিত। তার ভিডিও হৃদয়বিদারক। ভুয়ো নারীবাদ নিন্দনীয়। কোটি কোটি টাকা তোলাবাজি করা হয়। কিন্তু ৯৯ শতাংশ বিয়ে ভাঙার মামলায় দোষ পুরুষদেরই।’
পুরুষদের 'সুরক্ষা' নেই'
বেঙ্গালুরুর মৃত প্রযুক্তিবিদ অতুলের ভাই দাবি করেছেন যে স্ত্রীর দ্বারা হয়রানির ক্ষেত্রে এদেশে পুরুষদের আইনি সুরক্ষার অভাব রয়েছে। আশি মিনিটের ভিডিয়ো আর ২৪ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট- বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তিবিদের মৃত্যুর ঘটনায় যত তথ্য সামনে আসছে, তত নড়ে যাচ্ছে দেশ।
স্ত্রী নিকিতা সিংহানিয়া, শাশুড়ি নিশা-সহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। অতুলের ভাই বলেন, ‘আমি আমার ভাইয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাই। পুরুষদের জন্যও আইন তৈরি করা উচিত কারণ তারাও হয়রানির শিকার হচ্ছে। ভারত সরকারকে এটা বুঝতে হবে। একজন পুরুষের জীবন একজন নারীর জীবনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।’
আইন সংস্কারের দাবি
দিল্লির এক প্রবীণ আইনজীবী বিকাশ পাহওয়া সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন যে ৪৯৮এ ধারার সম্ভাব্য অপব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কারের আহ্বান জানানো উচিত। তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন যে এই ধারা কয়েকজন মহিলার কাছে অর্থ আদায়ের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন,'শুধু স্বামীর বিরুদ্ধেই নয়, আত্মীয়স্বজন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এগুলি সবই এর সাথে জড়িত এবং সেগুলির বেশিরভাগই মিথ্যা। আমি বলছি না যে প্রকৃত মামলা নেই, তবে বেশির ভাগ মামলাই দায়ের করা হয়েছে স্বামীর থেকে টাকা আদায় করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে রাজি করানোর জন্য'।
অতুল অভিযোগ করেন, একটা সময় নিকিতা তাঁকে বলেছিলেন যে কেন আত্মহত্যা করছেন না ৩৪ বছরের ইঞ্জিনিয়ার। আর সেই কথা শুনে বিচারকও হেসেছিলেন। আর নিকিতাকে আদালতকক্ষ ছেড়ে যেতে বলেছিলেন।
একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃত্যুর পরে যে যে জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে যে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করেছেন অতুল। আত্মহত্যার আগে কী কী করবেন, কবে কী কাজ করবেন, সেটার তালিকা তৈরি করে বেঙ্গালুরুর বাড়িতে দেওয়ালে আটকে রাখা ছিল। সঙ্গে একটি পৃষ্ঠায় লেখা ছিল, ‘ন্যায়বিচার বাকি আছে।’ ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর বিচার চেয়ে ও স্ত্রীকে চাকরি থেকে তাড়াতে আর্জি জানাচ্ছে নেটপাড়া।