শাহরুখ খান এবং করণ জোহরের দোস্তির কথা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গত দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁদের জমাটি বন্ধুত্বের কথা বলিউডে সর্বজনবিদিত। করণের পরিচালনায় 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়','কভি খুশি কভি গম','কভি আলবিদা না কহেনা','মাই নেম ইজ খান', 'অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল' এর মতো সব ব্লকব্লাস্টার ছবিতে অভিনয় করার পাশাপাশি এই পরিচালকের সঙ্গে 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' ছবিতে স্ক্রিন শেয়ারও করেছিলেন 'কিং খান'। তবে জানেন কি এই শাহরুখকেই একসময় বেজায় উদ্ধত ও অহংকারী হিসেবে মনে করতেন করণ! পরে অবশ্য সে ধারণা তাঁর পাল্টেছিল। কীভাবে? সে জবাবও করণ দিয়েছেন তাঁর আত্মজীবনী ' দ্য আনস্যুটেবল বয়'-এ। সেই বইয়ে এক জায়গায় এই বিখ্যাত বলি-পরিচালক লিখেছেন যখন তিনি 'বাদশাহ'-কে চিনতেন না তখন শাহরুখের বিষয়ে মোটামুটি তাঁর ধারণা ছিল যে অত্যন্ত এক 'নাকউঁচু' মানুষ শাহরুখ। তবে মুম্বইয়ের ফিল্ম সিটিতে আলাপ হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বিলকুল বদলে যায় করণের ধারণা।
তাঁর আত্মজীবনীর এক অধ্যায়ে করণ লিখছেন," একবার ফিল্ম সিটিতে আমি আর বাবা শাহরুখের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। আমাদের গাড়ি দেখতে পেয়ে শাহরুখকে নিজে এসে গাড়ির দরজা খুলে বাবাকে নামতে সাহায্য করেছিলেন। বাবার সঙ্গে শাহরুখের আলোচনার সময় বরাদ্দ ছিল মিনিট দশেকের জন্য। কিন্তু সেই আড্ডা গড়ায় ঘণ্টা দুয়েক পর্যন্ত! মুগ্ধ হয়েছিলাম শাহরুখের উষ্ণ ব্যবহার ও বাকচাতুর্যে। প্রথম আলাপেই বুঝেছিলাম শাহরুখের বিষয় যা শুনেছিলাম তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রকমের মানুষ ও।' এখানেই না থেমে করণ আরো লিখেছেন,' আসলে একজন ছবি প্রযোজক হিসেবে আমার বাবা যখন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন তখন ওঁর অনেক কাছের মানুষও তাঁর পাশে দাঁড়াননি। তাই আমি খুব সাবধান থাকতাম যে আমার বাবার সঙ্গে কোন মানুষ কেমন ব্যবহার করেন, সেই ব্যাপারে। আর্থিক সেই জায়গাতেই শাহরুখের সম্মান দিয়ে কথা বলার রীতি ও ভঙ্গিমায় চমৎকৃত হয়েছিলেন বাবা। এবং অবশ্যই আমি।নতুন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার ব্যাপারে শাহরুখের ব্যাবহার যারপরনাই মনোমুগ্ধকর। তার ওপর ওঁর ওরকম রসবোধ! বৈঠক শেষে শাহরুখের সুখ্যাতিতে ফেটে পড়েছিলেন বাবা।' লেখার শেষদিকে করণের সংযোজন, ' সেই সময় আমি আমির খানের বিরাট ভক্ত ছিলাম। কিন্তু ওই দু'ঘণ্টা শাহরুখের সঙ্গে কাটানোর পর আমার পুরো ধ্যান-ধারণাটাই বদলে যায়। শাহরুখের ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে যে পুরোপুরি মোহিত হয়েছিলাম সে কথা স্বীকার করতে কোনওরকম কুন্ঠাবোধ নেই আমার।'
তবে তাদের দীর্ঘ বছরের বন্ধুত্বের সম্পর্কে একাধিকবার চড়াই উৎরাই পার করেছেন তাঁরা। সেকথাও পরবর্তী সময়ে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন করণ। তবে তা সত্ত্বেও তাদের বন্ধুত্বে কোনও রকম ছেদ পড়েনি। আরও জানিয়েছিলেন, আজও ব্যক্তিগত কোন সমস্যায় পড়লে সবার প্রথমে শাহরুখের কাছেই ছুটে যান তিনি।