কবীর খান পরিচালিত ভারতের প্রথম সোনাজয়ী প্যারালিম্পিক মুরলিকান্ত পেটকারের বায়োপিক হল 'চান্দু চ্যাম্পিয়ন'। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন কার্তিক। ছবির দুনিয়ায় মুরলিকান্ত হয়ে উঠতে কার্তিককে কিছু কম পরিশ্রম করতে হয়নি। কার্তিককে এই চরিত্রের জন্য যিনি গড়ে পিটে নিয়েছেন তিনি, অর্থাৎ যিনি ছিলেন অভিনেতার ফিটনেস কোচ তিনিও কিন্তু জাতীয় স্তরের বক্সার ত্রিদেব পাণ্ডে। কীভাবে তিনি কার্তিককে তৈরি করেছেন, সেবিষয়ে Hindustan Times-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ত্রিদেব।
ঠিক কী বলেছেন ত্রিদেব পাণ্ডে?
বারাণসীর বাসিন্দা ত্রিদেব গত ১৪ বছর ধরে জাতীয় স্তরের বক্সার। চান্দু চ্যাম্পিয়নের টিম যখন কার্তিককে প্রশিক্ষণের জন্য তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তখন তিনি বেশকিছু শর্ত চাপিয়েছিলেন। ত্রিদেব পাণ্ডের কথায়, ‘বক্সার হিসাবে কার্তিককে পর্দায় শরীর দেখাতে গেলে তাঁকে ঠিকঠাক আকৃতিতে আসতে হবে। আমি কবীর স্যারকে বলেছিলাম, এটার জন্য আমার সময় দরকার। কার্তিককে বক্সিং শেখাতে হবে, যাতে পর্দায় সবটা বাস্তব মনে হয়। সৌভাগ্যক্রমে কার্তিক এটার জন্য তৈরিও ছিলেন।’
আসল মুরলীকান্তের সঙ্গে দেখা
ত্রিদেব পাণ্ডে জানান, ‘টিপস নেওয়ার জন্য মুরলীকান্তের সঙ্গেও আমাকে দেখা করতে হয়েছিল। এরপর কার্তিককে যখন প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করি, তখন কার্তিকও আমার কাছে স্বীকার করে নেন, তিনি বক্সিংয়ের প্রাথমিক বিষয়গুলি জানেন না। তবে খেলাধুলো শেখানোর আগে আমি চেয়েছিলাম, কার্তিক ফিট হয়ে উঠুক। তাঁকে সেভাবে গড়ে তুলতে হত, যেমনটা পরিচালকের প্রয়োজন। কোনও বডি ডাবল ছাড়া, কসমেটিক সিক্সপ্যাক ছাড়াই যাতে কাজ করা যায়।’
'কার্তিকের ওজন ছিল ৯০ কেজি, একটাও পুশ-আপ করতে পারল না'
এরপর ত্রিদেব কার্তিকের সঙ্গে দেখা করেন। ত্রিদেব বুঝেছিলেন তাঁকে এমন একজন অ্যাথলিটের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে যিনি সাঁতার কাটতে পারেন, জ্যাভলিন ছুঁড়তে পারেন, স্লালম ছুঁড়তে পারেন, টেবিল টেনিস, শট পুট এবং বক্স খেলতে পারেন। ত্রিদেবের কথায়, ‘আমি এদেশে তৈরি অনেক স্পোর্টস ড্রামা দেখেছি, কিন্তু কেউ সঠিক বক্সিং দেখায় না। কারণ, অভিনেতা যতক্ষণ না ভিতরে ভিতরে খেলাটি জানেন, ততক্ষণ তাঁরা তাঁদের সেরাটা দিতে পারবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। এতে হয়ত আমাদের সময় লেগেছে, কিন্তু কার্তিকের মতো অভিনেতা থাকলে সেটা অর্জন করা যায়।’
ত্রিদেব জানান কার্তিককে পুরোপুরি তৈরি করতে তাঁর ১৪ মাস সময় লেগেছিল। ত্রিদেবের কথায়, ‘যখন কার্তিকের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন ওর ওজন ছিল ৯০ কেজি। সেদিন উনি একটাও পুশ-আপও দিতে পারেনি। তবে তৎপরতা, গতিশীলতা এবং প্রতিক্রিয়া একজন বক্সারের সেরা বন্ধু। আমাদের প্রশিক্ষণ যখন শেষের দিকে, তখন কার্তিক কম ক্যালোরি-যুক্ত ডায়েটে ছিলেন। তখন তাঁর ওজন হয় ৭২ কেজি। এদিকে তাঁর পিঠে ৫০ কেজি ভার এবং তার কোমরে ২৭,৫ কোজি ভার নিয়ে তিনি পুশ-আপ করেছিলেন। কার্তিক ৫০ ধরনের স্কিপিং শিখেছেন। আর এই সবই হয়েছে স্টেরয়েড বা ইনজেকশন ছাড়াই। এতে আমি গর্বিত’।
'কার্তিক অ্যাথলিটের মতো প্রশিক্ষণ নিয়েছিল'
ত্রিদেব বলছেন, 'কার্তিককে বক্সিং শোখানোর বিষয়টা অনেক পরে এসেছিল। প্রথম কয়েকটি সেশনে কার্তিক বক্সিং গ্লাভসও পরেননি। আমি অন্যান্য সেলিব্রিটিদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তবে যখন তাঁরা আমার সঙ্গে থাকেন, আমি তাঁদের ভুলে যেতে বলি যে তাঁরা একজন তারকা। আমি তাঁদের বলি একজন ক্রীড়াবিদের মতোই প্রশিক্ষণ নিতে। কার্তিক এটা করেছিলেন এবং তিনি যে দক্ষতা অর্জন করেছেন তা তাঁকে সারা জীবন সহায়তা করবে।
গত ১৪ জুন মুক্তি পেয়েছে কার্তির আরিয়ান অভিনীত ‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’। ইতিমধ্যেই ছবিতে কার্তিকের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।