মালায়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাস্টিং কাউচ, যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠছিল বহু দিন ধরেই। সম্প্রতি সেই বিষয়েই রিপোর্ট জমা দিয়েছে 'কে হেমা কমিটি'। এবার সেই বিস্ফোরক রিপোর্ট জমা পড়ার ৭ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ করলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজায়ন। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় অর্থাৎ CMO জানিয়েছে, এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং অভিযোগগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উচ্চ-পর্যায়ের এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ৭ সদস্যের তদন্তকারী দল বা SIT গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। CMO-র তরফে জানানো হয়, 'ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত বেশ কয়েকজন মহিলার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার এবং বিবৃতির ভিত্তিতে তাঁরা যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তা খতিয়ে দেখতেই মুখ্যমন্ত্রী উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এই অভিযোগ ও তথ্য খতিয়ে দেখতে আইজিপি জি স্পারজন কুমারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তদন্তকারী এই দলে উর্ধ্বতন মহিলা পুলিশ আধিকারিকরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন এবং ক্রাইম ব্রাঞ্চের এডিজিপি এইচ ভেঙ্কটেশের তত্ত্বাবধানে কাজ করবেন। টিমের সদস্যরা হলেন আইজিপি জি স্পারজন কুমার, ডিআইজি এস অজিতা বিগম, এসপি ক্রাইম ব্রাঞ্চের হেডকোয়ার্টার মেরিন জোসেফ, এআইজি কোস্টাল পুলিশ জি পুনকুজালি, কেরালা পুলিশ অ্যাকাডেমির সহকারী পরিচালক ঐশ্বর্য ডোংরে, এআইজি, আইনশৃঙ্খলা অজিত ভি, ক্রাইম ব্রাঞ্চের এসপি এস মধুসূদানান।
এদিকে, মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলা অভিনেতাদের যৌন হেনস্থার ঘটনা নিয়ে হেমা কমিটির রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় কেরালার রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান বলেছেন, ‘আমি মনে করি মুখ্যমন্ত্রী এবিষয়ে খবরাখবর রাখছেন। তিনি বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে এলে প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি আগেই বলেছেন ... আমি কিছু বলছি না কারণ আমি বিষয়টি নিয়ে কাজ করি না। তবে আমি মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে বিশ্বাস করতে চাই যে ক্ষতিগ্রস্থরা যদি এগিয়ে আসেন এবং তারা যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তবে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
কী বলছে বিচারপতি হেমা কমিটির রিপোর্ট?
সম্প্রতি বিচারপতি হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পর কেরালায় রাজনৈতিক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৭ সালে এক নির্যাতিতা অভিনেত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর গঠন করা হয়েছিল হেমা কমিটি। গত সপ্তাহে, বিচারপতি হেমা কমিটির রিপোর্টের একটি সম্পাদিত সংস্করণ জনসমক্ষে আনা হয়েছিল, মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলা অভিনেতাদের জড়িত যৌন হেনস্থার একাধিক ঘটনা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই সমীক্ষার রিপোর্টে যৌন শোষণ, বেআইনি নিষেধাজ্ঞা, বৈষম্য, মাদক ও অ্যালকোহলের অপব্যবহার, পারিশ্রমিক বৈষম্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমানবিক কাজের সাংঘাতিক বিবারণ দেওয়া হয়েছে। একাধিক সাক্ষী ও অভিযুক্তের নাম সংশোধনের পর ২৩৫ পাতার রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। তাতে মালায়লম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কিছু পুরুষ প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতাদের কথা বলা হয়েছে। একজন বিশিষ্ট অভিনেতাকে মাফিয়া হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, তাঁরা নাকি ইন্ডাস্ট্রিতে যে কোনও কাউকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখেন।
এদিকে কেরলের বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীসান বলেছেন, হেমা কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে কেরলের সংস্কৃতি মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।