বেঁচে থাকলে আজ ৯৫-এ পা দিতেন কিশোর কুমার। ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম মহান, প্রভাবশালী এবং যুগের থেকে এগিয়ে থাকা গায়ক তিনি। কিশোরের গান মৃত্যুর এত বছর পরেও সমান জনপ্রিয়। শুধু পুরোনো প্রজন্মই নয়, আজকের জেনারেশনের কাছেও ততটাই আপন কিশোর। আসলে তিনি চির-কিশোর।
শুধু গান নয়, কিশোরের অভিনয় দক্ষতাও ছিল নজরকাড়া। সেরা পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে আটটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন কিশোর, রেকর্ড ২৮ বার এই ক্যাটেগরিতে মনোনীত হয়েছেন। ৪ আগস্ট তাঁর ৯৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, এখানে মহান কিশোর কুমার সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখুন কিশোরকে নিয়ে কিছু অজানা তথ্য়-
দাদার অনুপ্রেরণায় ফিল্ম জগতে প্রবেশ
১৯২৯ সালে জন্ম হয় আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের। অশোক, সতী দেবী এবং অনুপ সহ চার ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ ছিলেন আভাস। কিশোরের বাবা কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন একজন আইনজীবী, যিনি মধ্যপ্রদেশের একটি ধনী পরিবারের জন্য কাজ করতেন। কিশোর যখন শিশু ছিলেন, তখন তার বড় ভাই অশোক চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন। তরুণ কিশোর প্রায়শই চলচ্চিত্রের সেটে অশোকের সাথে যেতেন এবং দাদার শিকারী (১৯৪৬) এবং জিদ্দি (১৯৪৮) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন কিশোর। মজার ব্যাপার হলো, কিশোর সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীর মামা।
কে এল সয়গল-কে নকল করে গাইতেন কিশোর
অভিনেতা হিসাবে কেরিয়ার শুরু করলেও সঙ্গীত পিছু ছাড়েনি তাঁর। শুরুতে কেএল সায়গলের স্টাইল নকল করে গাইতেন তিনি, পরবর্তীতে পাকিস্তানি শিল্পী আহমেদ রুশদির দ্বারা প্রভাবিত হন কিশোর। ১৯৫০ সালে অশোকের বাড়িতে কিশোরের গান শুনে এসডি বর্মণ তাঁকে নিজস্ব স্টাইল গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। কিশোর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন, আমেরিকান গায়ক জিমি রজার্স এবং টেক্স মর্টনের কাছ থেকে ইয়োডেলিং দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
কিশোর ১৯৫০ এর দশক থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত দেব আনন্দের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। এরপর আর আর ডি বর্মণের নির্দেশনায় রাজেশ খান্নার হয়ে প্লে-ব্যাক শুরু করেন কিশোর। কিশোর কুমার রাজেশ খান্নার (২৪৫) জন্য সর্বাধিক সংখ্যক গান গেয়েছিলেন।
নিষিদ্ধ হয় কিশোরের গান
জরুরি অবস্থার সময়, তাকে মুম্বাইয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমাবেশে গান গাইতে বলা হয়েছিল, কিশোর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ফলস্বরূপ, ১৯৭৬ সাল থেকে জরুরি অবস্থার শেষ অবধি জাতীয় সম্প্রচারক, অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনে তাঁর গান বাজানো নিষিদ্ধ ছিল।
কিশোর কুমার চারটি বিয়ে
কিশোরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুমা গুহ ঠাকুরতা (১৯৫০-১৯৫৮)। তাঁদের সন্তান অমিত কুমার। রুমার সঙ্গে সংসার ভাঙার পর মধুবালাকে বিয়ে করেন কিশোর। মধুবালাকে বিয়ে করার জন্য নাকি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, এমন কথাও বলিউডে প্রচলিত। দিলীপ কুমারের উপর অভিমান করেই কিশোরকে বিয়ে করেছিলেন মধুবালা, পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ সময়েও পাশে ছিলেন না কিশোর কুমার। পরে ১৯৭৬ সালে অভিনেত্রী যোগিতা বালিকে বিয়ে করেন কিশোর; ১৯৭৮ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। মাত্র ২ বছরেই কিশোরের সঙ্গে সংসার ভাঙেন যোগিতা। এরপর মিঠুন চক্রবর্তীকে বিয়ে করেন তিনি। মিঠুনদাও তখন একটা ভাঙা বিয়ে থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ১৯৭৯ সালে বিয়ে সারেন দুজনে।
কিশোরকে ছেড়ে যোগিতার মিঠুনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত আঘাত করেছিল গায়ককে। রাগে-অভিমানে তিনি মিঠুনের জন্য প্লে-ব্যাক না করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে যদিও সেই দূরত্ব ঘুচেছিল। ‘ওয়াক্ত কি আওয়াজ’, ‘সুরক্ষা’র মতো ছবিতে মিঠুনের জন্য গান গেয়েছিলেন কিশোর।
যোগিতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১৯৮০ সালে অভিনেতা লীনা চন্দ্রভারকরকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর, আমৃত্যু একসাথে ছিলেন দুজনে।