অস্কারজয়ী গীতিকার গুলজার-এর কাছে এককথায় কিশোরকুমার ছিলেন 'ম্যাডলি জিনিয়াস'। তাঁর কথায় এ শব্দের অর্থও যে দু'রকম হতে পারে তাও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। এক, একজন পাগল যে জিনিয়াস অথবা এরকম পর্যায়ের একজন জিনিয়াস এক পাগল ছাড়া আর কারও পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়! গুলজারের লেখা নতুন বই ' অ্যাকচুয়ালি আই মেট দেম: আ মেমোয়ার'-এ কিশোরের বিষয়ে নানান অজানা কথা তুলে ধরেছেন তিনি। যার মধ্যে জানা গেল হৃষীকেশ ,মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ছবি 'আনন্দ' ছবিতে প্রধান ভূমিকায় রাজেশ খান্নার জায়গায় কিশোরের অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু কিশোরের হয়ত ওই ছবিটি করার ইচ্ছে ছিল না। তবে সেকথা সরাসরি মুখে না বলে এমন কান্ড করেছিলেন তিনি যা দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছিল।

গুলজার লিখেছেন, সবকিছু ফাইনাল। শ্যুটিংয়ের মাত্র কয়েকদিন আগে ছবিতে তাঁর লুক থেকে ড্রেস কীরকম হবে সেসব নিয়ে যেদিন ফাইনাল হবে সেদিন পুরো মাথা কমিয়ে ন্যাড়া হয়ে হাজির হলেন কিশোরকুমার! .ন্যাড়া- মানে পুরো ন্যাড়া! এই অবস্থা দেখে সেটের কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন। তাঁদের মধ্যে গুলজারও ছিলেন। 'আনন্দ' ছবির সংলাপ লেখার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। যাই হোক, এহেন পরিস্থিতিতে সারা ফ্লোর ঘুরে ঘুরে গুনগুন সুরে কিশোর গান গাইতে লাগলেন, 'এবারে কী করবি ঋষি?' গুলজারের কথায়, 'এভাবে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে কিশোর ছাড়া আর কাউকে এই জীবনে আমি দেখিনি'। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোনওরকমে তাড়াহুড়ো করে সেই জায়গায় রাজেশ খান্নাকে আনা হল। বাকিটুকু ইতিহাস।তবে পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন এসব সত্বেও কিশোর এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তাঁকে ভালো না বেসে থাকা যেত না।
কিশোরের আরও দুস্টুমির কথা উঠে এসেছে গুলজারের কলমে। জানা গেল, কিশোরকুমারের বাড়িতে একটি আশ্চর্য আলমারি ছিল। যার মধ্যে একটি লুকোনো সিঁড়ি থাকত। একবার তাঁর সঙ্গে এক নামি প্রযোজক কথা বলতে এসেছেন। তখন কিশোরের কথা বলার মুড নেই। 'কিশোরদা' সোজা সেই আলমারি খুলে সেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে স্রেফ উধাও হয়ে গেলেন ওখান থেকে। ওদিকে সেই প্রযোজক আলমারির বাইরে হাঁ করে বসে অপেক্ষা করেই গেছিলেন। এই ছিলেন কিশোরকুমার।
আবার অন্য শিল্পীদের হয়ে প্রযোজকদের কাছে 'জাস্টিস আদায়' করার ব্যাপারেও কিশোর ছিলেন পয়লা নম্বর। গুলজার লিখেছেন, 'ভরোসা' নাম সিনেমার একটি গানের রেকর্ডিংয়ের আগে কিশোর বলে উঠলেন চা খাবেন। শুনেটুনে কিশোরের ড্রাইভার আব্দুলকে পাঠানো হল চা আনতে সবার জন্য। আব্দুল আর আসে না। কিশোরও আর উঠছেন না গান গাইতে। প্রযোজকের অনুরোধ হেলায় সরিয়ে বলতে লাগলেন, 'আব্দুল আসুক, চা-টা খেয়ে নিয়েই যাচ্ছি'। অনেকক্ষণ পর আব্দুল এল। এদিক ওদিক না তাকিয়ে চা না খেয়ে সোজা রেকর্ডিং রুমে ঢুকে গেলেন কিশোর। সবাই তো হতভম্ব! আসলে গুলজারের 'কিশোরদা'-র কাছে চা খাওয়াটা বড় ছিল না। উনি চাইছিলেন প্রযোজক যেন পয়সা খরচ করে সবার জন্য চা জানান। অগত্যা...তাই এই 'কিশোর কীর্ত!'