আরজি কর কাণ্ডের আবহে সোশ্যাল মিডিয়াতে আচমকাই ‘ভিলেন’ দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং কুণাল ঘোষ। নেপথ্যে অভিনেত্রী মৌসুমী ভট্টাচার্যকে নিয়ে করা কুণাল ঘোষের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, এবং তা নিয়ে দেবাংশুর জবাব। বুধবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা সভাতেও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে কুণাল-দেবাংশুর মন্তব্য।
রাজ্য ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক আলোচনাচক্রে পৌঁছেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়রা। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সকলেই ধুয়ে দিয়েছেন শাসক দলের দুই নেতাকে। এবার পালটা জবাব দিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
পরমব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘দু-দিন আগে বর্তমান শাসক দলের একজন মুখপাত্র এবং একজন তরুণ তুর্কি নেতা একজন অভিনেত্রীকে নিয়ে বিশেষ ভাষায় আলোচনা করেছেন। অভিনেত্রীর দোষের মধ্যে হচ্ছে তিনি এদের দুজনকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করেছেন। তাদের কে অধিকার দিল এটা বলার, যে অভিনেত্রীর বদন বিগড়ে গেছে, অভিনেত্রী কাজ পান কি কাজ পান না সেই নিয়ে আলোচনা করার। তিনি বিবাহিত, কি বিবাহিত নন সেটা নিয়ে আলোচনা করার। শুনলে হয়ত তাঁরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবেন। তবে এখান থেকে যৌন নিগ্রহের মানসিকতা শুরু হয়। এখান থেকে ধর্ষণের মানসিকতা শুরু হয়''।
পরমের সেই বক্তব্যের পালটা কুণাল বাবু লেখেন, ‘পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় শুনছেন? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে দাঁড়িয়ে আমার/আমাদের সম্পর্কে আপনি বললেন, এক মহিলা আমাদের রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতা করেছিলেন বলে আমরা কেন পাল্টা দিয়েছি? রাজনৈতিকভাবে??????? প্রকাশ্য ভিডিওতে মারের কথা বলা, মারের প্ররোচনা দেওয়া রাজনৈতিক আক্রমণ? আপনি ভিডিওটা দেখেছেন? নাকি যা বললে বিপ্লবী সাজা যাবে, সেরকম কিছু বলেছেন হাততালি পেতে??????? মারার হুমকি রাজনৈতিক বিরোধিতা? আপনি তথাকথিত তারকা হতে পারেন, কিন্তু সেই পরিচিতি ভাঙিয়ে মানুষকে ভুলপথে প্রভাবিত করার অধিকার আপনাকে কে দিল? ছিঃ।’
এরপর কুণলের নিশানায় দেবলীনা দত্ত। যাঁকে বলতে শোনা গেছে, মৌসুমী ভট্টাচার্যকে করা ‘বদন বিগড়ে গেছে’ মন্তব্য নিয়ে দেবলীনা বলেন, ‘আপনারা দুজনে মিলে নিজেদের যে পরিচয় দিলেন, তারপর নিজেদের মুখ কী করে আয়নায় দেখছেন জানি না’।
দেবলীনাকে জবাব দিতে গিয়ে নস্টালজিক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আপনাদের আক্রমণ দেখলাম। আমাকে কাল্পনিক কিছু আশঙ্কায় নানা সংলাপে বিঁধেছেন। সুদীপ্তা জেনে রাখুন, আজকের যে দেবলীনা, সে যখন নবম শ্রেণী, সম্ভবত ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবে এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়। …..পত্রিকায় সেই কভারেজটি আমার ছিল। আরও দুএকটি কাজে দেখেছি মেয়েটি মেধাবী, অল্পক্ষণে স্ক্রিপ্ট করায়ত্ত করে দারুণ পারফর্ম করে। এক টেকে ওকে। আমাদের দপ্তরে ও আসত মায়ের সঙ্গে। তিনিও ভারি মিশুকে ছিলেন। অবশ্য অনেকে বড় হয়ে গেলে অনেক ব্যস্ততায় পুরনো কথা মনে না রাখাই স্বাভাবিক। আমি মেয়েটির মধ্যবিত্ত সারল্যমাখা উপস্থিতি, মেধামিশ্রিত কথাবার্তা পছন্দ করেছিলাম। আজও কখনও কোথাও ওর খবর বেরোলে চোখ বোলাই। আমি ওকে নিয়ে খারাপ কথা বলব? নিজেরা বিপ্লবী সাজতে আর কত হাওয়ায় তলোয়ার ঘোরাবেন? আপনাদের এই কাল্পনিক ও অনুমানভিত্তিক সংলাপের উপর দাঁড়িয়ে নাটকের তীব্র বিরোধিতা করলাম।দেবলীনা, কার্মাজভ কুইন মনে পড়ে?'
সোজা কুণাল ঘোষ ও দেবাংশু ভট্টাচার্যকে তোপ দাগেন স্বস্তিকাও। অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে মৌসুমী ভট্টাচার্যকে বডি শেমিং করার ঘটনা স্বস্তিকা বলে উঠেন, ‘এঁরা নাকি সরকারের মুখপাত্র, কিন্তু এরা মুখ দিয়েই বাতক্রিয়া কর্ম করে।….বদন বিগড়েছে এই কথা বলা হবে কেন?’
স্বস্তিকাকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও পোস্ট আসেনি কুণাল ঘোষের তরফে। তবে তৃণমূল মুখপাত্র উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে জানিয়েছেন, ‘উদ্যোক্তাদের বলি, সাহস থাকলে এসব আয়োজনে আমায় ডাকবেন। একা যাব। উত্তরগুলো সবার সামনে দেব। জানি, এটা নেওয়ার সাহস এঁদের নেই।’