আরকিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আর জি করের নির্যাতিতা তরুণীর। আগামী বছর বিয়ের তারিখ ফিক্সড ছিল। ভালোবেসে বিয়ে। নির্যাতিতার প্রেমিকও চিকিৎসক। স্কুলজীবনেই শুরু প্রেমের কাহিনি। দুজনেই স্বপ্ন দেখেছিলেন বড় ডাক্তার হওয়ার, তারপর ঘর বাঁধার।
প্রেমিকার মৃত্যুর পর দিশেহারা তিনি। ফোনের কলার টিউনে আজও বাজছে, ‘আমাদের স্বপ্নগুলো অল্প সময় ঘর পাতালো…’। প্রয়াত প্রেমিকার সবচেয়ে প্রিয় গান ছিল লগ্নজিতার গাওয়া এই গানটি, তাই তো কলার টিউন হিসাবে এই গানটা বেছেছিলেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন আরজি কর কাণ্ডে নিহত তরুণীর বয়ফ্রেন্ড। সংবাদপত্র সেই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর সেটি নজরে আসে লগ্নজিতার বাবার।
বাবার হোয়াসটঅ্যাপ মেসেজ থেকেই সবটা জানতে পারেন লগ্নজিতা। সবটা জেনে, পড়ে দু-চোখ গড়িয়ে জল গায়িকার। তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত অনেকে তাঁর গানের প্রশংসা করেছে, তবে সেই নিয়ে তিনি মাথা ঘামাননি। কিন্তু তাঁর গান যে কোনও মানুষের জীবনকে এইভাবে ছুঁয়ে যেতে পারে তা দুঃস্বপ্নেও আশা করেননি তিনি। এই ঘটনা একদিকে যেমন তাঁকে প্রভাবিত করেছে, তেমনই আফসোসে হাত কামড়াচ্ছেন লগ্নজিতা। বড্ড কষ্ট হচ্ছে, মৃতার কথা ভেবে অসহায় বোধ করছেন- ‘একবার যদি ওঁকে গানটা সামনাসামনি শোনাতে পারতাম’।
পাশাপাশি বাবার হয়ে কলম ধরেন গায়িকা। জানান, কেন তাঁর চোখে আসল হিরো তাঁর বাবা। লগ্নজিতা বলেন, ‘সব মেয়েদের কাছেই তাদের বাবারা হিরো, আমি এই ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নই; কিন্তু আজ আমার বাবা আবার নতুন করে আমার হিরো হয়ে উঠলেন। আজ আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই আমার বাবা আমায় এই খবরের স্ক্রিনশট টি পাঠান, এবং আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন বাবা সেখানে কী লিখেছেন। আমি গর্বিত যে আমার বাবা চান যে আমি প্রতিবাদ করি, পথে নামি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমি মনে করি আমার কাজটা আর পাঁচজনের মতোই। যিনি ব্যাংককর্মী, যিনি শিক্ষক, যিনি কারখানায় কর্মরত, আমার কাজ তার থেকে আলাদা নয়। কিন্তু আজ সকালে এই খবরটা পড়ে মনে হলো, সত্যিই হয়তো গানের মধ্যে দিয়ে ’touching life' মাঝেমধ্যে সম্ভব হয়। আমি কখনো ভাবিনি আমার এই গানটি মেয়েটির জীবনের সঙ্গে এত নিবিড় ভাবে জড়িয়ে থাকতে পারে। এখন যখন জানতে পেরেছি, তখন যেন কেমন একটা আলাদা রকম যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মধ্যে। আগে যে কষ্ট হচ্ছিল সেটা হয় তো সর্বজনীন, কিন্তু আজ সকাল থেকে সেই কষ্টের ধরণটা একটু বদলে গেল'। তাই আগামিতে যখন কোনও কনসার্টে এই গানটি গাইবেন, আরজি কর-এর নির্যাতিতা তরুণীর কথা নিশ্চয়ই বললেন লগ্নজিতা।
তবে প্রেম শ্বাশত-প্রেম চিরন্তন, মনে করান লগ্নজিতা। বলেন, 'প্রেমের গানে বিপ্লবের কোনো সরাসরি দ্যোতনা থাকে কী না আমি জানি না, কিন্তু এই যে প্রেমিকের স্বপ্ন গুলো, ছিঁড়েখুঁড়ে রেখে দিল সমাজ যন্ত্র, তার বুক থেকে এই গান কিন্তু কখনও মুছে দিতে পারবে না আর কেউ। প্রেম ছাড়া দিন বদলায় না, বদলাতে পারে না… ক্ষমতার অট্টহাসিকে হার মানিয়ে প্রেম দিয়েই বিপ্লবের বীজ বপন করতে পারি আমরা। আজ আমার কাছে দেশের লড়াই, আর মনের লড়াই মিলেমিশে এক হয়ে গেল। মনের মধ্যেকার দেশটা জুড়ে গানটা ফিরে ফিরে আসছে। আর শুনতে পাচ্ছি আমার বাবার কণ্ঠ, 'রাই মা, তোমার গানের লাইন। প্রতিবাদ করো, পথে নামো।'