'ইদাক তোকে মানাইছে না গো...' সুরেলা সফর শেষে লাল পাহাড়ির অজানা দেশেই পাড়ি দিলেন গায়ক সুভাষ চক্রবর্তী। তাঁর যে গান, যে সুর, যে কথা আপামর বাঙালির মননে, হৃদয়ে গেঁথে আছে তাঁকে সেই গানেই শেষ শ্রদ্ধা জানানো হল। না, তাঁর শেষ যাত্রায় শান্ত শোকজ্ঞাপন ছিল না কোনও। যা ছিল সেটা তাঁরই রেখে যাওয়া সুর, গান। গায়ককে ঝুমুর গানের সুরে, মাদলের ছন্দে, নাচের সঙ্গে সঙ্গেই বিদায় জানানো হল।
শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুভাষ চক্রবর্তী। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গায়কের মৃত্যুতে কেবল তাঁর গ্রাম বেলিয়াতোড় নয়, গোটা বাংলাতেই, সঙ্গীত জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তাঁর তৈরি করা গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। অনেকেই হয়তো জানেন না আসল গানের স্রষ্টা কে। কিন্তু তাঁর গান সকলেরই পরিচিত। পছন্দের।
ভাদু থেকে টুসু গান, ঝুমুর গানকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি আজীবন। লোকগানের জাদুতে গোটা বাংলাকে মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তাঁরই লেখা লাল পাহাড়ি দেশে যা গানটি পরবর্তী কালে আরও জনপ্রিয় হয় ভূমি ব্যান্ডের হাত ধরে।
তাঁর শেষ যাত্রায় সেই লাল পাহাড়ির সুরে সুরেই বিদায় জানানো হল। এদিন তাঁর অনুরাগীদের চোখে যেমন জল ছিল, তেমনই তাঁকে রাজার মতো বিদায় জানানোর আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। যে মানুষটা আজীবন গানেই ডুবে ছিলেন তাঁকে বিদায় জানানোর এর থেকে ভালো উপায় বোধহয় কিছুই হতো না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঁকুড়া পেজের তরফে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় শায়িত আছে সুভাষ চক্রবর্তীর মরদেহ। তাঁর সামনেই ধামসা, মাদলের তালে তালে সকলে লাল পাহাড়ি গানটি গাইছেন। নাচছেন। উপস্থিত ছিলেন লোকগান গায়ক তীর্থ, সুভাষ চক্রবর্তীর মেয়ে, অর্পিতা, প্রমুখ।
অনেকেই এই পোস্টে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। গায়ক শিলাজিৎ কমেন্ট করেন, 'ওহ, এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে একজন গায়কের চলে যাওয়ার পর।' আরেক ব্যক্তি লেখেন, 'ওঁর আত্মার চির শান্তি কামনা করি, ভালো থাকুন ওই পবিত্রালোকে।' তাঁর আরেক অনুরাগীর মতে, ‘শিল্পীর শিল্পের সার্থকতা, ভালো থাকবেন রাঙামাটির দেশে।’