মহামারী অনেকের ওপরই শারীরিক এবং মানসিক ভাবে প্রভাব ফেলেছে। অভিনেতা অনুপম খেরের ওপরও নানা ভাবে প্রভাব পড়েছে তেমনই। অভিনেতার মা এবং ভাই ২০২০ সালে করোনার কবলে পড়েছিলেন। এরপর সুস্থ হয়ে ওঠেন তাঁরা। আপাতত তাঁর স্ত্রী তথা অভিনেত্রী কিরণ খেরের অসুস্থতা নিয়ে তিনি চিন্তিত। ক্যানসরে আক্রান্ত কিরণ। সম্প্রতি করোনা আক্রান্তদের সহায়তায় নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা।
সম্প্রতি বিটির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা প্রকাশ করেছেন চলতি বছরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা কথোপকথনের কথা। কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি, এবং কীভাবে সেগুলোকে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে এগিয়ে গেছেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেতা অনুপম খের জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে হয়তো রাগ হবে অথবা হতাশ হয়ে পড়বে এমন অনুভূতি আসবে। অথবা সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাওয়ার কথা মনে হবে। ‘গঠনমূলক কিছু করার জন্য, আমি এবং আমার বন্ধুরা সহযোগিতা করেছিলাম এবং প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা- সরঞ্জামাদি, ওষুধ ইত্যাদির জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছিলাম। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের হারাচ্ছে। আমিও আমার দীর্ঘ দিনের এবং খুব কাছের বান্ধবী সুাজাতাকে হারিয়েছি। আমার পরিবার গত বছর করোনার থাবা বসেছে। এই লকডাউনে নানা মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি আমি। আমাদেরও এটির জন্য একটি প্রকল্প রয়েছে। আমাদের পেশাদারদের একটি প্যানেল এবং স্বেচ্ছাসেবীদের একটি দল রয়েছে যারা সহায়তা করতে পারে। লোকেরা একবার শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে গেলেও, আমাদের এই মহামারীর ফলে মানসিক ক্ষতির সঙ্গে লড়তে হবে’।
স্ত্রী কিরণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেতা জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী তথা অভিনেত্রী কিরণ আগের তুলনায় এখন ভাল আছে। প্রায়ই নাকি সে করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের সমস্যা নিয়ে নানা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে রোগিদের ট্রিটমেন্টর সময় বাইরে বাইরে বেরোনো উচিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কিরণের বাইরে বেরোনো সম্ভবপর নয়। ‘এমন কিছু দিন আছে যখন সে ইতিবাচক থাকে এবং তারপরে এমন কিছু দিন আসে যখন কেমোথেরাপি তার ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব পড়ে। আমরা সকলেই যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং তিনিও সেটা করছেন। চিকিৎসকরা তাদের কাজটি করেন, তবে এইরকম কঠিন চিকিৎসার জন্য নিজের মানসিক অবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে হয়। তিনি সে দিকে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন এবং আমরাও তাই করছি’।
নিজের অভিনয় বা কেরিয়ার সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেতা বলেন, অভিনয় তাঁর জীবনের একটা অংশ, জীবন নয়। সব সময় কিছু পাওয়ার জন্য কিছু হারাতে হবে সেটা ভেবেই চলেন তিনি। তবে আমেরিকান শো ‘New Amsterdam’এ গত বছর কাজ করছিলেন অভিনেতা। সেটা ছেড়ে দেওয়ার সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁর কাছে একটা বড় সিদ্ধান্ত ছিল- কেরিয়ার, টাকা-পয়সা এবং অন্যান্য দিক থেকেও। তবে তাঁর পরিবার এবং কিরণের তাঁকে সেই সময় বেশি প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তিনি। ‘আমি এখানে কাজ পাব না এমন নয়। দুই বা তার বেশি বছর দূরে থাকলে দুনিয়া এগিয়ে যায়। মুশকিল হবে তবে অসম্ভ নয় না? আমি কাশ্মীর ফাইলস, রোহিত ধাওয়ানের পরের ছবি, সূরজ বর্জাতার পরের ছবি এবং নওটাঙ্কি ইন মাই কিটি ছাড়াও দুটো কাজ করেছি। যদি প্রয়োজন হয় আমি আমার বন্ধুদের ফোন করব এবং কাজের জন্য জিজ্ঞেস করব। জীবন বেশিরভাগ সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পর্কিত। আপনি নিজেকে একজন ব্যক্তি হিসাবে আবিষ্কার করা’।
তিনি এও জানিয়েছেন, আমেরিকান কলিগদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। রবার্ট দি নিরো এখনো তাঁকে মেসেজ করে তাঁর স্ত্রীর কিরণের শারীরির অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করে। জন্মদিনে ভিডিয়ো পাঠিয়ে উইশ করেছে। ‘ওঁর রজার ফেডরারের নতুন বিজ্ঞাপন দেখে আমি ওঁকে মেসেজ করেছি। পরিবার কেমন আছে কিরণ কেমন আছে প্রায়শই জিজ্ঞেস করে’।
গত বছর নিতান্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা। ইন্ডাস্ট্রির কাছের বন্ধু ঋষি কাপুরকে হারিয়েছেন। তাঁর মা করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। কিরণের শারীরির অবস্থা ততটা ভাল ছিলনা। সেই সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেতা জানিয়েছেন, ‘আমি একটা সুন্দর লাইন পড়েছিলাম। ‘শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভাল হয়ে যাবে। যদি সবকিছু ঠিক না হয়, তাহলে সেটা শেষ নয়’। যতটা আশাবাদী এবং ইতিবাচক থাকা যাবে জীবন আপনাকে সেভাবে প্রভাবিত করবে। আশাই জীবনের হৃদয়। আপনি কঠিন পরিস্থিতিতে যেতে পারেন, তবে আপনি আশাবাদী হওয়া বন্ধ করলে আপনি বাঁচতে পারবেন না। সেটা অর্থহীন। আশা করি এটা আপনাকে সব কিছুর মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে’।
অনুপমের কথায়, ‘লোকজন বন্ধু, প্রিয়জন, অল্প বয়স্ক লোককে হারিয়েছে ... আপনাকে জীবনের সন্ধান করতে হবে এবং যা-ই হোক না কেন, আশা চালিয়ে যেতে হবে। ছেড়ে দেওয়া কোনও বিকল্প নয়, কখনই নয়। আমি পালিয়ে যাওয়ার মতো মানুষ নই। হ্যাঁ, এমন কিছু দিন আছে যখন মন খারাপ থাকে। আপনি হয়ত বিধ্বস্ত হয়ে উঠতে পারেন বা বিশ্বাস করতে পারেন যে আগামীকাল কি হতে পারে। প্রকৃতি থেকে শক্তি নিয়ে বাঁচুন ... এটি যাই হোক না কেন তার গতিপথ পরিবর্তন করে না। সেখান থেকেই মোটিভেশন আসে, আপনাকে ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি দেয়’।
জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন তিনি। আর কোনো নতুন কিছু লেখার পরিকল্পনা আছে কি? সেই সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেতা জানিয়েছেন, চিন্তাভাবনা রয়েছে তবে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। হয়তো অনুপ্রেরণা, উৎসাহ এবং জীবন সম্পর্কে হবে সেটা।