মহম্মদ রফি এবং লতা মঙ্গেশকরকে ভারতীয় সঙ্গীত জগতের অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দুই শিল্পী এক সময়ে বলিউডের শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠ ছিলেন। তাঁরা একসঙ্গে অসংখ্য সুপারহিট উপহার দিয়েছিলেন শ্রোতাদের। স্বর্ণ যুগের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন তাঁরা। কিন্তু আপনি কি জানেন? একটা সময় ছিল যখন এই দু'জনের মধ্যেই শুরু হয়েছিল বিরাট মনোমালিন্য! এই সময় তাঁরা টানা অনেক বছর একে অপরের সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ রেখেছিলেন।
১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই মহম্মদ রফি মাত্র ৫২ বছর বয়সে হৃদরোগ জনিত কারণে মারা যান। প্রয়াত কিংবদন্তীর পুত্রবধূ ইয়াসমিন খালিদ রাফি ২০২০ সালে তাঁর জীবনীমূলক বই ‘মোহাম্মদ রফি: মাই আব্বা’-এ এই বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। রফির জীবনে এসেছে বহু ওঠা-পড়া। তবে সে সবটা সময় অনুরাগীদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। গায়কের জীবনে ঘটে যাওয়া এই সব বহু আজানা চড়াই-উতরাইয়ের কাহিনি তাঁর পুত্রবধূ তুলে ধরেছেন ‘মোহাম্মদ রফি: মাই আব্বা’ বইটিতে।
আরও পড়ুন: মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে অদ্ভুত এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টি! কেন এমন দশা অনির্বাণের?
ওই বই থেকেই জানা গিয়েছিল যে লতা মঙ্গেশকর এবং মহম্মদ রফি তাঁদের গাওয়া ডুয়েটগুলির রয়্যালটি নিয়ে সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। এমনকী এটি তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলেছিল। এই সময় সমস্যা এতই গুরুত্বর হয়েছিল যে তাঁরা প্রায় তিন বছর একসঙ্গে কাজ করেনি।
বই অনুসারে, ১৯৬০ সালের শুরুতে, তাঁদের দ্বন্দ এমন একটি পর্যায় পৌঁছে গিয়েছিল যে, লতা মঙ্গেশকর মহম্মদ রফির সঙ্গে দ্বৈত গান গাওয়া বন্ধ করে দিইয়েছিলেন। জানা যায়, লতা প্রযোজকদের কাছে রয়্যালটি ইস্যু উত্থাপন করেছিলেন সেই সময়, যা রফি সমর্থন করেননি।
আরও পড়ুন: 'শো না পাওয়া নিয়ে আমি কিছু লিখিনি, কিন্তু…', প্রতীম ডি গুপ্তর কথায় খোঁচা দেবকে?
মহম্মদ রফির একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তাঁর মতে একজন প্রযোজক যখন একটি গানের জন্য অর্থ প্রদান করেন, তখন গায়ককে রয়্যালটি ভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কিশোর কুমার, মান্না দে এবং তালাত মেহমুদের মতো অন্যান্য বিশিষ্ট গায়করা অবশ্য এই বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে ছিলেন লতা মঙ্গেশকরকে। তাই যখন সমস্ত গায়কদের একটি বৈঠক হয়েছিল তখন লতা মঙ্গেশকর এবং মহম্মদ রফি তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রাগের বশবর্তী হয়ে দু'জনেই ভবিষ্যতে একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি। শোনা যায়, যে সময় লতা নাকি তাঁকে বলেছিলেন, ‘আজ থেকে আমি আপনার সঙ্গে কোনও গান গাইব না।’ তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা নাকি লতা সমস্ত সঙ্গীতশিল্পীদেরও জানিয়েছিলেন।
পরে একটি সাক্ষাৎকারে, লতা মঙ্গেশকর প্রকাশ করেছিলেন যে মহম্মদ রফি তাঁকে একটি চিঠি লিখে, তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং এই দ্বন্দ শেষ করার জন্য ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিলেন। এর পর অবশ্য দুজনে একসঙ্গে একটি কনসার্টে পারফর্ম করেছিলেন।