রবিবার পরপারে পাড়ি দিলেন 'সুরের সরস্বতী'। ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন গোটা দেশ। শোকেকাতর তাঁর পরিবার, প্রিয়জনরা।ভারতীয় ছবির ইতিহাসে সেরা দশটি ডুয়েট-এর মধ্যে অধিকাংশই হয়তো লতা এবং কিশোর কুমারের গাওয়া। তবে প্রথমবার পরস্পরের সঙ্গে দেখা হওয়াটা এতটাও মধুর ছিল না। লতা ভেবেছিলেন কিশোর হয়তো তাঁকে অনুসরণ করে পিছনে পিছনে আসছেন।তাঁর আত্মজীবনী 'লতা মঙ্গেশকর: ইন হার ওন ভয়েস' -এর সহ লেখক নাসরিন মুন্নি কবীর লিখেছেন একবার বোম্বে টকিজ স্টুডিও যাওয়ার পথে প্রথমবার কিশোর কুমারকে দেখেছিলেন সুর-সম্রাজ্ঞী। এবং প্রথম সাক্ষাৎ বেশ মজারই হয়েছিল।
লতা জানিয়েছিলেন ১৯৪৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি 'জিদ্দি' ছবির গান রেকর্ডিং করার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। যাওয়ার পথেই কিশোরকে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। লোকাল ট্রেন ধরে মালাড যাচ্ছিলেন লতা। একই কামরায় কিশোরও উঠেছিলেন। লতার কাছেই বসেছিলেন। এরপর লতার মতো তিনিও মালাড স্টেশনে নামেন। শুধু তাই নয়, লতার পিছন পিছন তিনিও বোম্বে টকিজ স্টুডিওতে হাজির হয়েছিলেন। গোটা ব্যাপারটা নজর এড়ায়নি কোকিলকণ্ঠীর। স্বাভাবিকভাবেই মনটা খচখচ করছিল তাঁর।
নিয়োগী বুকস প্রকাশনায় চাপা সেই বইতে লতা আরও বলেছিলেন, 'কিশোরকে প্রথমবার দেখে কেমন যেন চেনা চেনা লেগেছিল। তারপর দেখলাম আমি যে পথে এগোচ্ছি, উনিও সেই পথে এগোচ্ছে। মালাড থেকে টাঙ্গা চেপে বোম্বে টকিজ স্টুডিও যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। উনিও দেখি তাই করল। শেষমেশ স্টুডিওতেও আমার পিছনে ঢুকে পড়ল। এরপর সংগীত পরিচালক ক্ষেমচন্দ প্রকাশ-কে জানিয়েছিলাম যে আমার একটু অদ্ভুত লাগছে। কিশোর-দাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওই ছেলেটি কে? আমাকে অনেকক্ষণ ধরে অনুসরণ করে পিছন পিছন আসছে!'
শোনামাত্রই হাসতে হাসতে লতাকে আশ্বস্ত করে উনি জানিয়েছিলেন কিশোরের পরিচয়। সেও যে একজন গায়ক এবং বোম্বে টকিজ স্টুডিওর মালিক তথা বলি-অভিনেতা অশোক কুমারের ভাই, সেই পরিচয়ও দিয়েছিলেন। সেদিনই নিজেদের কেরিয়ারের প্রথমবার পরস্পরের সঙ্গে গান রেকর্ডিং করেন লতা এবং কিশোর। গানের নাম? ''নিয়ে কৌন আয়া রে জিদ্দি'।
উল্লেখ্য, কোভিড পরবর্তী জটিলতার জেরেই মৃত্যু হয়েছে লতা মঙ্গেশকরের, জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিত্সক প্রতীত সামধানি জানান, ‘মাল্টি অর্গান ফেইলিউরের জেরেই মৃত্যু হল লতা মঙ্গেশকরের, কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৮ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি, করোনা মুক্ত হয়েছিলেন কিন্তু করোনা পরবর্তী জটিলতার জেরে স্তব্ধ হল তাঁর যাত্রা’।