মুম্বই : ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। সেজন্য বরাবর শ্বশুরবাড়ির তরফে চাপ দেওয়া হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পরও হেনস্থা অব্যাহত আছে। এমনই অভিযোগ করলেন প্রয়াত সংগীত পরিচালক ওয়াজিদ খানের স্ত্রী কমলরুখ খান।
শনিবার ইনস্টাগ্রামে একটি নোট প্রকাশ করে ধর্মান্তকরণ-বিরোধী বিলের স্বপক্ষে মুখ খুলেছেন কমলরুখ। জানিয়েছেন, কীভাবে পুরো বিষয়টির সঙ্গে তাঁর ও দুই সন্তানের যোগ আছে। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে কমলরুখ জানিয়েছেন, তিনি পার্সি এবং ওয়াজিদ মুসলিম ছিলেন। সেজন্য বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। যাঁরা কলেজ-জীবন থেকে সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে বলে অভিযোগ প্রয়াত সংগীত পরিচালকের স্ত্রী'র।
কমলরুখের কথায়, ‘মূল্যবোধের দিক থেকে সাধারণ পার্সি পরিবারে অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে বড় হয়েছিলাম। ভাবনাচিন্তার স্বাধীতার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করা হত এবং ভালো তর্ক-বিতর্ক একেবারেই সাধারণ বিষয় ছিল। সর্বস্তরেই শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হত। কিন্তু বিয়ের পর আমার স্বামীর পরিবারের কাছে সেই স্বাধীনতা, শিক্ষা এবং স্বাধীনচেতা মূল্যবোধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সবথেকে বড় সমস্যার। নিজস্ব মতামত থাকা শিক্ষিত, সুচিন্তিত এবং স্বাধীন মহিলা একেবারেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। ধর্মান্তকরণের জন্য যে ক্রমাগত চাপ দেওয়া হত, তা নিন্দাজনক ছিল।’
সর্বধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও ধর্মান্তকরণে একেবারেই রাজি ছিলেন না বলে জানিয়েছেন কমলরুখ। তিনি জানিয়েছিলেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও ‘ধর্মান্তকরণের জন্য' ওয়াজিদের পরিবারের তরফ থেকে 'বিচ্ছেদের জন্য আমায় আদালতে নিয়ে যাওয়া-সহ বিভিন্ন জঘন্য কৌশল নেওয়া হয়েছিল।’ তবুও ওয়াজিদের পরিবারের কাছে নতিস্বীকার করেননি বলে জানিয়েছেন কমলরুখ। তিনি বলেন, 'আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম, বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছি বলে মনে হয়েছিল এবং মানসিকভাবে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে আমার সন্তানদের সঙ্গে আমি অনড় ছিলাম।'
কমলরুখ আরও বলেন, ‘ইসলামে ধর্মান্তরিত না হওয়ার জন্য আমি রুখে দাঁড়ানোর পর স্বামী এবং আমার মধ্যে মারাত্মকভাবে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে আমাদের সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেওয়া এবং আমাদের সন্তানদের বর্তমান বাবা হিসেবে ওর (ওয়াজিদ) ক্ষমতার জন্য যথেষ্ট বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল তা। ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে ও এবং ওর পরিবারের প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার শিক্ষা দেয়নি আমার মর্যাদা এবং আত্মসম্মান।’
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত মে'তে মৃত্যু হয়েছিল ওয়াজিদের। তাঁর করোনাভাইরাস রিপোর্টও পজিটিভ এসেছিল। কমলরুখের দাবি, তারপর তাঁদের ১৬ বছরের মেয়ে এবং ন'বছরের ছেলেকেও ওয়াজিদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ তিনি ‘ধর্মান্তকরণ’-এ রাজি হননি। কমলরুখের আক্ষেপ, সেই 'ধর্মান্ধতা'-র কারণে দুই সন্তান পরিবারের স্বাদ পায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা মন থেকে ওর অভাব অনুভব করি এবং ভাবি যে নিজের সুর তৈরির সময় প্রতি যেমন মনোযোগ দিত, ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে পরিবার হিসেবে তেমনই যদি আমাদের সময় দিত। ওর এবং ওর পরিবারের কারণে ধর্মান্ধতার কারণে আমরা কখনও পরিবার হয়ে উঠতে পারিনি। ওর অকালপ্রয়াণের পর আজ ওর পরিবারের তরফে থেকে হেনস্থা জারি আছে।’