কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০১ সালে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিল মমতার দল। শক্তিশালী বামদূর্গে ফাটল ধরানো কার্যত অসম্ভব ছিল সেই সময়। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল সত্যজিতের ‘চারুলতা’ মাধবী মুখোপাধ্যায়কে।
বুদ্ধদেবের মতো পোড়খাওয়া রাজনেতার সামনে অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর ২৩ বছর আগের সেই ঘটনার কথা কী মনে পড়ল মাধবীর? বুদ্ধদেবকে কড়া টক্কর দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। বাম নেতার ভোট ছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার ১১টি। মাধবীর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ৮০ হাজার যাদবপুরবাসী। মাত্র ৩০ হাজার ভোটের ব্যাবধানে হার মানেন তিনি। দ্য ওয়াল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাধবী স্পষ্ট বলেন, ‘বুদ্ধদেববাবুর বিরুদ্ধে আমি দাঁড়াইনি। একটা পার্টি তার বিপক্ষ পার্টির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। সেই তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। মানুষ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আমি কখনও দাঁড়াইনি।’
'সজ্জন' বুদ্ধদেবকে নিয়ে সেদিনও কোনও বিরূপ মন্তব্য করেনি মাধবী, আজ তো প্রশ্নই ওঠে না। শুধু জানালেন কেন দুম করে রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন। মাধবী জানান, একমাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথাতেই ভোটে লড়েছিলেন তিনি। স্টার থিয়েটার পুড়ে যাওয়ার পর সেটি নতুন করে গড়ে দেওয়ার জন্য মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেছিলেন মাধবী। কথা দিয়েছিলেন, ‘থিয়েটার যদি আপনি নতুন ভাবে করে দেন, আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।’
স্টার থিয়েটারের রেনোভেশনের কাজ করে দিয়েছিলেন মেয়র সুব্রত। এরপর মাধবীর কাছে যাদবপুরে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেন। না বলেননি অভিনেত্রী। তবে মনেপ্রাণে জানতেন বাম জমানায় বুদ্ধদেবকে হারানো সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, আজকের জননেতাদের মতো পরস্পরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুড়ি নয়, বরং সৌজন্যের রাজনীতিতেই আস্থা ছিল তাঁর। মাধবী বলেন, ‘সেই সময় বুদ্ধদেববাবু আমার সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলেননি। আমিও ওঁর সঙ্গে কোনও খারাপ কথা বলিনি। বলার প্রয়োজন হয়নি।’
মাধবীর হারের পর অনেকে বলেছিল রিগিং হয়েছে, তবে সে-সবকিছুকে পাত্তা দেননি তিনি। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো বুদ্ধদেব, সেই সূত্রে তাঁর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে মাধবীর। তবে জানালেন, বামফ্রন্ট সরকার কিংবা তার আগের কংগ্রেস সরকার শিল্পীদের জন্য কিছুই করেননি। অন্যদিকে মমতা কিন্তু আর্টিস্টদের কথা টেকনিশিয়ানদের কথা ভেবে অনেক কিছু করেছেন। বুদ্ধদেবের মৃত্যুর সঙ্গেই বাংলায় সিপিএম-এর স্বর্ণযুগ শেষ হল বলেই বিশ্বাস মাধবীর।