রাতদখলের নামে মেয়েরা রাস্তায় বসে মদ খাচ্ছেন, মদের দোকানে গিয়ে মদ কিনছেন। সম্প্রতি এমনই মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর এহেন মন্তব্য নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এবার এবিষয়েই মুখ খুললেন কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর।
এবিষষয়ে আনন্দবাজারে নিজের কলমে মমতা শঙ্কর লেখেন, চারপাশে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে তিনি বিরক্ত। আবার কখনও এমন কিছু কথা তিনি শুনছেন, তাতে তাঁর হাসিও পাচ্ছে, আবার কখনও রাগও হচ্ছে। আর সেই কথা বলতে গিয়েই মমতা শঙ্কর লেখেন, ‘শুনলাম, রাজ্যের মন্ত্রী মেয়েদের মদ্যপানের বিরোধিতা করেছেন। রাতে যেন কোনও ভাবেই মহিলাদের মদ পরিবেশন না করা হয়, সে বিষয়েও নিদান দিয়েছেন। তাঁর দাবি, রাতদখল কর্মসূচীতে গিয়ে মেয়েরা রাস্তায় মদ্যপান করছেন। এমনকি নিজের বিধানসভা এলাকাতেও মেয়েদের মদ পরিবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।’
আর তাই মমতা শঙ্করের প্রশ্ন, এভাবে কি মেয়েদের মদ্যপান আটকানো যাবে? কারণ, নিষেধাজ্ঞা জারি করলেই লুকিয়ে সেই কাজ করার প্রবণতা বাড়ে। তাঁর কথায়, ‘এটা খানিকটা বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেড়োর মতো। আমার আরও একটা প্রশ্ন আছে, মদ্যপান বন্ধ করলেই কি নারী সুরক্ষা দারুণ উন্নতি সম্ভব?’
মমতা শঙ্কর লেখেন, ইসলামিক দেশে এসব ফতোয়া জারি করা হয়েছিল একসময়, তবে তারপরে সেখানেও যখন এসব বন্ধ করা যায়নি, তখন এখানে কীভাবে সম্ভব?
শিল্পী বলেন, মেয়েদের কী করা উচিত না ভেবে, সভ্যদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কী করা উচিত সেটা ভাবা উচিত। শিল্পীর সাফ কথা, ‘মেয়েরা মদ্যপান করবে না এটা যেমন আমি মানি না। তেমনই এটাও মনে করি, স্বাধীনতার অর্থই মদ্যপান নয়। আর এটা শুধু মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য নয়। রাস্তায় মদ্যপান করা কখনওই শোভনীয় নয়। এটা কুরুচিকর এবং অন্যায়। আর শালীনতার সংজ্ঞাটা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এক, তেমন স্বাধীনতারও। ’
সম্প্রতি মেয়েদের শাড়ি পরার ধরন নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন খ্যতনামাশিল্পী মমতা শঙ্কর। তিনি আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, ‘আজকাল শাড়ি পরব, কিন্তু আঁচল ঠিক থাকবে না! এটা না আমি বুঝতে পারি না। ক্ষমা করবেন এটা বলছি বলে, আগে যাঁদের আমরা রাস্তার মেয়ে বলতাম, যাঁরা ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন, এইরকম মেয়ে বলতাম। তাঁরা ওইরকম ভাবে দাঁড়াতেন। কিংবা গ্রামে কাজ করতে করতে তাঁর হয়তো আঁচল সরে যেত। সেটা কোনও দোষের ছিল না। আর ওঁরা (যৌনকর্মী) তো পেশার তাগিদে পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য ও ভাবে শাড়ি পরে থাকেন। তাঁদেরও আমি শ্রদ্ধা করছি। কারণ তাঁরা তাঁর পেশার দাগিদে সেটা করছেন। কিন্তু আজকাল তাঁরা বিনা কারণে ওইরকমভাবে শাড়ি পরেন। তারপর লোকে কিছু বললে, তাঁরা রেগে যান। বলেন, মেয়েদের নিচু করা হচ্ছে। আরে মেয়েরাই তো মেয়েদের নিচু করছি আমরা। আমি এটার প্রতিবাদ করি। কারণ, মেয়েদের একটা শালীনতার জায়গা আছে, যেখানে ছেলেরা মেয়েদের শ্রদ্ধা করবে।’
আর তাঁর এই মন্তব্য নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়। তবে পরে মমতা শঙ্কর আবারও বুঝিয়ে বলেছিলেন, তিনি ঠিক কী বলতে চেয়েছেন।