সদ্যই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন মনোজ মিত্র। তবে তিনি যে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অঞ্চলের বাসিন্দা সেই কথা জানতেনই না সেখানকার বর্তমান বাসিন্দারা। এমনকি তাঁর জন্ম হয়েছে যে গ্রামে সেখানে নেই তাঁর কোনও স্মৃতিচিহ্ন।
আরও পড়ুন: কলকাতার পাবে আইটেম সংয়ে কাঁটায় কাঁটায় একে অন্যকে টক্কর দিলেন টোটা-শান্তনু! ব্যাপারটা কী?
আরও পড়ুন: ‘কুকর্ম’ করে শ্রেয়ার সহকর্মী কিঞ্জলের ফ্ল্যাটেই লুকিয়েছিলেন সঞ্জয় চক্রবর্তী! বিস্ফোরক দাবি TMC-র মুখপাত্রর
কী ঘটেছে?
বাঞ্ছারাম তাঁর সাজানো বাগান ফেলে রেখে পাড়ি দিয়েছে অন্য জগতে। তবে এর আগেও তিনি তাঁর আরও একটি সাজানো বাগান, তাঁর জন্ম ভিটে ছেড়ে চলে এসেছিলেন এপার বাংলায়। তিনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরার ধুলিহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা জানেনই না এই কথা। এমনকি তিনি যে স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন অর্থাৎ ধুলিহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেখানকার বর্তমান প্রধান শিক্ষক নিজেও জানতেন না এই কথা। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জন্ম যে গ্রামে, যেখানে বড় হয়ে উঠেছেন সেই গ্রামেই নেই তাঁর কোনও স্মৃতিচিহ্ন।
প্রসঙ্গত অতীতে মনোজ মিত্র একাধিকবার জানিয়েছিলেন যে বাঞ্ছারাম চরিত্রটি বাংলাদেশ থেকেই পেয়েছিলেন। সেখানকার এক পান বাগানের মালিককে দেখেই এই চরিত্রের বুদ্ধি পান।
মনোজ মিত্রের জীবনী প্রসঙ্গে
১২ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হল বর্ষীয়ান অভিনেতার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেলেন, তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল, কলকাতারই এক বেসরকারি হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: 'সিনেমা হেরে গিয়েছে', হঠাৎ এমন কেন বললেন অনির্বাণ?
১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর তারিখে ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলায় সাতক্ষীরা জেলার ধূলিহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মনোজ মিত্র। প্রথমদিকে তিনি নিজের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেছেন। কারণ তার বাবা অশোক কুমার মিত্রর বদলির চাকরি ছিল। দুর্গা পুজার সময় বাড়ির উঠানে যে যাত্রা ও নাটকগুলি অনুষ্ঠিত হত তাঁর প্রতি তিনি ছোট থেকেই আকৃষ্ট ছিলেন। তবে তাঁর বাবা তাঁকে কোনওভাবেই নাটকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেননি। পরবর্তী সময়ে দেশভাগের পর বসিরহাটের কাছে ডান্ডিরহাট এনকেইউএস নিকেতনে তাঁর স্কুলজীবন শুরু হয় । পরে তিনি দর্শনে অনার্সসহ স্কটিশ চার্চ কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৫৮ সালে স্নাতক হন। তবে কলকাতার নাট্যজগতে পা রাখার পর তিনি নিজের প্রকৃত সত্তা খুঁজে পান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বাংলার অন্যান্য বিশিষ্ট সাহিত্যিকের তীব্র প্রভাব রয়েছে তাঁর নাট্য রচনায়। খুব দ্রুতই তিনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
তিনি তাঁর প্রথম নাটক ‘মৃত্যুর চোখে জল’ লেখেন ১৯৫৯ সালে। তবে ১৯৭২সালে চাঁকভাঙা মধু নাটকের মাধ্যমেই নাট্য জগতে পা রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে বিভিন্ন কলেজে দর্শন বিষয়েও শিক্ষকতা করেন। একসময় পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমির দায়িত্বও পেয়েছিলেন। মনোজ মিত্রের প্রথম নাটক ‘বোগল ধীমান’ রাজ্যব্যাপী প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল। এছাড়াও সাজানো বাগান, চোখে আঙ্গুল দাদা , কালবিহঙ্গো, পরবাস , অলোকানন্দর পুত্র কন্যা, নরক গুলজার , অশ্বথামা , চকভাঙ্গা মধু , মেষ ও রাখশ , নয়শো ভোজ , ছায়ার প্রশাদ , দেশ্বরম , শ্বরপদ , শ্বরপদ্ম প্রভৃতি শতাধিক নাটক তিনি লিখেছেন। তবে শুধু নায়ক নয় বাংলা সিনেমার দুনিয়াতেও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকদের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন।