বলিউড অভিনেতা মুস্তাক খান ও কমেডিয়ান সুনীল পালকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত চক্রের মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। রবিবার রাতে বিজনৌরে এনকাউন্টারে আহত হয় রাহুল সাইনি নামে পরিচিত লাভি পাল। তারপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিজনৌরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জীব কুমার বাজপেয়ী বলেন, 'মূল অভিযুক্ত লাভি পালকে পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল ও কয়েকটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। তবে তার এক সহযোগী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে গ্যাংস্টার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিরাটের একটা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার আমন্ত্রণ করে গত ২ ডিসেম্বর অপহরণ করা হয়েছিল কমেডিয়ান সুনীল পালকে। অপহরণকারীরা তাকে প্রায় ২৪ ঘন্টা পণবন্দী করে রেখেছিল। মুক্তিপণ হিসাবে ৮ লক্ষ টাকা আদায়ের পর তবেই তাকে ছাড়া হয়। ঘটনার পর সুনীল পালের স্ত্রী সরিতা মুম্বইয়ে জিরো এফআইআর দায়ের করেন। পরে এবং মামলাটি মেরঠের লাল কুর্তি থানায় স্থানান্তরি করা হয়। এরপরই তদন্ত শুরু করে স্থানীয় পুলিশ।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে, সুনীল পাল এই মামলার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও সেরাজ্যের সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
এদিকে একইভাবে গত অক্টোবরে আনিস বাজমির 'ওয়েলকাম'-এ বাল্লু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত বলিউড অভিনেতা মুস্তাক খানকেও পশ্চিম উত্তর প্রদেশের বিজনৌর জেলায় অপহরণ করে পণবন্দি করে রাখা হয়।
সেলিব্রিটি অপহরণে বিস্তারিত ফাঁস করল পুলিশ
ঘটনাপ্রসঙ্গে পুলিশ সুপার অভিষেক ঝা ব্যাখ্যা বলেন, ‘১৫ অক্টোবর, অভিযুক্ত লাভি পাল, রাহুল সাইনি সেজে ২০ নভেম্বর মিরাটের একটি অনুষ্ঠানে অভিনেতা মুস্তাক খানকে আমন্ত্রণ জানায়। তাঁকে অগ্রিম টাকা এবং বিমানের টিকিট হিসাবে ২৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়। এরপর ২০ নভেম্বর মুস্তাককে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে একটি গাড়িতে তুলে বিজনৌরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে চাহশিরির একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল, যা আসলে লাভি পালের ছিল।’
এর পরের দিন বন্দিদশা থেকে পালাতে সক্ষম হন অভিনেতা। ঝা বলেন, ‘২১ নভেম্বর সকালে অপহরণকারীরা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল, তখন মুস্তাক পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি এক মসজিদে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তিনি নিরাপদে দেশে ফিরে আসেন। তাঁর ইভেন্ট ম্যানেজার শিবম যাদব ৯ ডিসেম্বর বিজনৌর কোতোয়ালি এলাকায় রিপোর্ট জমা দেন।’
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে যে এই দলটি মীরাটে সুনীল পালকে অপহরণ করার জন্য একই পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল। অপহরণের সময় তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আড়াই লক্ষ টাকার লেনদেন হয়। পুলিশ ইতিমধ্যে ছয় গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে তবে এখনও লাভি পাল এবং আরও তিন সন্দেহভাজনের খোঁজ চলছে।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ জানতে পারে, ২২-২৩ ডিসেম্বর রাতে মান্দাওয়ার রোডের জৈন ফার্মে আসবেন লাভি পাল ও তাঁর তুতো ভাই শুভম। ঝা বলেন, 'অফিসাররা দুজনকে ধরার চেষ্টা করলে তারা গুলি চালায়। একটি গুলি এসএইচও উদয় প্রতাপের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটে লাগে। পরবর্তী এনকাউন্টারে লাভি পালের পায়ে গুলি লাগে যদিও শুভম পাল পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পালকে গ্রেপ্তার করে চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জীব বাজপেয়ী জানিয়েছেন, লাভি পালের কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল, দুটি কার্তুজ এবং ৩৫,০৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্যাংস্টার আইনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে অর্জিত তার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর বিজনৌর ও মীরাট পুলিশ লাভি পালকে গ্রেফতারের জন্য ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
পুলিশ এখন ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তার গ্যাংয়ের কার্যকলাপএবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষ্যগুলি সম্পর্কে বিশদ উদঘাটন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।