এর আগে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-ওয়েব সিরিজে ছোট্ট ‘ইন্দুবালা’র ভূমিকায় তাঁকে চিনেছেন OTT-র দর্শকরা। এবার সম্পূর্ণ ভোল বদলে 'জোনাকি বিশ্বাস' হয়ে পর্দায় ফিরেছেন অভিনেত্রী পারিজাত চৌধুরী। সৌজন্যে জি বাংলার নতুন সিরিয়াল 'মিত্তির বাড়ি'। আদৃত রায়ের নায়িকার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে পারিজাতকে। কেমন সেই চরিত্র, 'প্রথমবার' সিরিয়ালে কাজ করার অভিজ্ঞতাই বা কেমন? সবকিছু নিয়ে Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন পারিজাত।
প্রথম সিরিয়াল?
পারিজাত: প্রথম সিরিয়াল ঠিক নয় আসলে এর আগে 'মহানায়ক' করেছিলাম বুম্বা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) আঙ্কেলের সঙ্গে, সেটা একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আবার এটার অভিজ্ঞতাও আলাদা। এখানে আমার লিড চরিত্র, অনেকটা দায়িত্ব। তবে ‘মহানায়ক’ যখন করেছিলাম, আমি অনেকটাই ছোট ছিলাম। তাই সেটার অভিজ্ঞতা আমার এখন ঠিকভাবে মনেও নেই। তবে এটা যখন করছি, আমি এখন অনেকটা বড়। পরিচালক সুজিত পাইনের পরিচালনায় কাজ করছি। এটার সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। খুবই এনজয় করছি। (হাসি)
২৫ নভেম্বর থেকে সিরিয়াল 'মিত্তির বাড়ি' শুরু হয়েছে, কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
পারিজাত: খুব ভালো, খুবই ভালো রেসপন্স। রিলেটিভ বন্ধুরা তো ভালো বলছেনই, দর্শকদের কাছ থেকেও বেশ ভালো প্রতিক্রিয়াও পাচ্ছি।
'মিত্তির বাড়ি'র সঙ্গে ‘মিঠাই’- সিরিয়ালের তুলনা আসছে, কী বলবেন?
পারিজাত: মিঠাই-এর একটা সম্পূর্ণ আলাদা ফ্যানবেস ছিল। অনেক বড় একটা ফ্যানবেস। হতেই পারে, যাঁরা মিঠাই দেখেছিলেন, তাঁরা এটাও দেখছেন। তাই তুলনা তো আসবেই। শুধু মিঠাই কেন, অনেকে ‘দেশের মাটি’ সিরিয়ালটির সঙ্গেও অনেকে তুলনা টানছেন। আসলে গল্পটা যেহেতু একান্নবর্তী পরিবারকে নিয়েই, তাই তুলনা চলে আসছে। তবে এই সিরিয়ালের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা, প্রতিটা চরিত্রের জীবনদর্শনও আলাদা। এখানে জোনাকিও ভীষণই প্রাণোবন্ত একটা চরিত্র, তবে সেটার মতোও আরেকজন থাকতেই তো পারে, তাই তুলনা তো হবেই।
আবার যেহেতু 'মিঠাই'-এর যিনি চিত্রনাট্য় লিখেছিলেন, সেই রাখিদি (শাশ্বতী ঘোষ)ই এটার চিত্রনাট্য লিখছেন আবার এই সিরিয়ালের নায়কও আদৃত, সবমিলিয়েই এই তুলনাটা আসছে, দর্শকরা হয়ত নস্টালজিক হয়ে পড়ছেন। তবে আমি বলব, দর্শক কিন্তু এই গল্পে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা স্বাদ পাবেন।
'জোনাকি' ঠিক কেমন?
পারিজাত: জোনাকি চরিত্রটা ভীষণই ছটফটে, প্রাণখোলা, ভীষণই মিষ্টি-ই একটা চরিত্র। জোনাকি দাদু-দিদার খুব কাছের। সব মানুষেরই ও ভীষণ কাছের। সে চায় দুঃখ তো সকলের মনে থাকবে, তবে সেই দুঃখকে পার করে আমরা কীভাবে ভালো থাকব, বাকিদের কীভাবে ভালো রাখব। জোনাকি কয়েকটি পর্ব হয়ে গিয়েছে। যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন, জোনাকির একমাত্র লক্ষ্য মিত্তির পরিবারকে আবার কীভাবে আগের মতো করে ফিরিয়ে আনবে। এটা ওর অনেকগুলো লক্ষ্যের মধ্যে একটা বড় লক্ষ্য।
আবার জোনাকির আরেকটা লক্ষ্য হল ও ওর মাকে সুস্থ করে তুলতে চায়। বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চায়। নিদোর্ষ প্রমাণ করতে চায়। জোনাকির মনে শত দুঃখ থাকলেও ও চায় মিত্তির পরিবারকে ভালো রাখতে। কারণ, ও মিত্তির বাড়িতে শুধুমাত্র আশ্রয়ই পায়নি, ভালোবাসাও পেয়েছে। যেটা ও ওর কাকা-কাকিমার থেকে পায়নি। তাই যখন দাদুর সঙ্গে ওপ খুনসুটি হচ্ছে, ভালোবাসা পাচ্ছে, তখন জোনাকির মনে হচ্ছে, ও ওদের জন্য জীবনও দিতে পারে। জোনাকি খুবই ইমোশনাল চরিত্র, সহজেই ভালোবেশে ফেলে, আবেগে ভাসে। জোনাকি বিশ্বাসকে সবসময় বিশ্বাস করা যায়। (হাসি)
আরও পড়ুন-ঘটি হয়ে শিখতে হয়েছে ঘোর বাঙাল ভাষা, সঙ্গে গাছে চড়াও: ছোট্ট ‘ইন্দুবালা' পারিজাত
শুধু সিরিয়ালের সঙ্গেই কিন্তু নয়, 'জোনাকি'-র সঙ্গেও 'মিঠাই' সৌমিতৃষার তুলনা করছেন অনেকে। কী বলবেন?
পারিজাত: এটাতে আমার সত্যিই বেশিকিছু বলার নেই, দর্শকরা নস্টালজিক বোধ করছেন তাই তুলনা করছেন। ওরা আমাকেও ভালোবাসা দিচ্ছেন বলেই এটা হচ্ছে। আমি এটাকে ভীষণভাবেই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গীতে নিচ্ছি, দর্শকদের ভালোবাসা হিসাবেই এটাকে গ্রহণ করছি। আমার কাজ দর্শকদের এন্টারটেইন করা, আমি সেটা করে যাব।
আপনার নায়ক আদৃত রায় সম্পর্কে কী বলবেন?
পারিজাত: খুব ভালো। আদৃত অবিশ্বাস্যরকম ভালো মানুষ। এত ভালো মানুষ আজকাল খুব কম দেখা যায়। ও ভীষণ সহযোগিতা করছে। আদৃত আমার থেকে অনেক সিনিয়র, ও ভালো অভিনেতা তো বটেই, তবে মানুষ হিসাবেই ওকে বেশি এগিয়ে রাখব। এত ভালো মানুষ কম দেখা যায়। He Is Absolutely Gentleman।
একটু উদাহরণ দিয়ে যদি বলি, আমাদের সঙ্গে তো অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতা রয়েছেন, দুলাল দাদু (লাহিড়ী), অনুরাধা দিদা (রায়) রয়েছেন। ওঁরা উঠে দাঁড়ালে দেখি আদৃতও উঠে দাঁড়ায়, ওনাদের হাত ধরে এগিয়ে দেয়। সিঁড়ি ভাঙতে গেলে ও এগিয়ে যায়। ও সবার আগে নিজের চেয়ার ছেড়ে সকলকে বসতে দেয়। এমনকি আমিও যদি দাঁড়িয়ে থাকি, ও সবার আগে এসে চেয়ারটা ছেড়ে দেয়। এইটা আজকাল খুব কম দেখা যায়। আর ওঁর অভিনয় নিয়ে আমি আর কী বলব, ও তো সিনিয়ার, সত্য়িই ভালো অভিনেতা।
আপনাদের রসায়নটা কতটা জমল?
পারিজাত: সেটাও ভালো। আমাদের রসায়নটা ভালো লাগানোর একটাই পদ্ধতি, আমাদের বন্ডিংটা ভালো করা। সেটা যত ভালো হবে, তত স্বাভাবিকভাবে সুন্দর একটা রসায়নটা বের হয়ে আসবে। যেমন আমরা যখন সিন করছি, তখন ও হয়ত বললল, এটা যদি এভাবে করি, তাহলে কেমন লাগবে? আমাকে হয়ত বলল, এটা এইভাবে করতে পারিস বা আমরা এটা এভাবে না করে ওভাবে করি চল। এইরকম চলতে থাকে…।
‘ইন্দুবালা’র জন্য, আপনাকে নতুন অনেককিছু শিখতে হয়েছিল। এটার জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?
পারিজাত: হ্যাঁ, তা তো একটু হয়েছেই। অনেককিছু পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। জোনাকি যেমন রাজমিস্ত্রির কাজ ভালো পারে। ও যেমন ভাঙা মন সারিয়ে দিতে পারে, তেমন ভাঙা বাড়িও সারিয়ে দিতে পারে। প্রথম যখন এটা শুনেছিলাম, একটু ভয়ই পেয়েছিলাম। তারপর রাজমিস্ত্রি কীভাবে খুরপি চালাচ্ছে, কড়াইতে মশলা মাখছে, সেইগুলো খেয়াল করেছি, শিখেছি। তারপর যখন সিন করি তখন কিন্তু বেশ মজা লাগছিল। (১ নভেম্বর থেকে শ্যুটিং শুরু হয়েছে) জোনাকি খুবই প্রাণোচ্ছ্বল একটা মেয়ে। আর আমি তো এমনিতেই বাড়িতে গান-বাজনা-নাচ আনন্দ করেই কাটাই।
কীভাবে এই সিরিয়ালের প্রস্তাব এল?
পারিজাত: চ্যানেল থেকেই এসেছিল প্রস্তাবটা। সিরিয়ালের প্রস্তাব এর আগেও প্রচুর এসেছে। তবে পড়াশোনার চাপ ছিল। তাই আমার মনে হয়েছিল পড়াশোনাতে মন দেওয়া উচিত। তারপর এটার প্রস্তাব যখন এল, তখনও আমি প্রথমে না-ই বলে দিয়েছিলাম। কারণ, অনেকটা দায়িত্ব, প্রতিদিন শ্যুটিং, চাপে থাকতে হবে। ভাবছিলাম কীভাবে করব! সবাই বলল, তুই আগে গল্পটা, চরিত্রটা তো শোন, তারপর সিদ্ধান্ত নিস। এরপর যখন মিটিং করতে যাই, চরিত্র গল্প দুটোই শুনি, তখন আর না বলে আসতে পারিনি।
সিরিয়াল ছাড়াও সিনেমাও তো করছেন? পড়াশোনা, সিনেমা, সিরিয়াল একসঙ্গে এতকিছু চাপ হচ্ছে না?
পারিজাত: হ্যাঁ, রাস বলে একটা ছবিও করছি। আর জীবন মানেই তো চাপ, তবে ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছে। ছবির জানুয়ারি থেকে শ্যুটিং হবে। আসলে যে কাজটা ভালোবাসবেন, সেটা দেখবেন এমনিই হয়ে যাবে। প্রোডাকশন হাউস, চ্যানেল, দুটো টিমই খুব হেল্প করছে আমায়।
'রাস'-এ আপনার চরিত্রটা ঠিক কেমন?
পারিজাত: ওটার চরিত্রটা খুবই আলাদা। স্ট্রেট ফরোয়ার্ড একটা মেয়ে। ও কী করবে, সেটা ওর কাছে খুব স্পষ্ট। জোনাকিও কাছেও অবশ্য সেটা স্পষ্ট। তবে ওদের জীবন দর্শন সম্পূর্ণ আলাদা, সাঁঝ-এর বড় হওয়াটা জোনাকির মতো নয়, অনেক আলাদা। ও মেট্রোপলিটন শহরের মেয়ে। কীভাবে ও গল্পের মধ্যে বাসা বাঁধছে, কীভাবে একান্নবর্তী পরিবারের মর্ম বুঝতে পারছে সেটা নিয়েই গল্প। আবার এখানেও কিন্তু দেখুন সেই একান্নবর্তী পরিবার। তবে দুটো সম্পূর্ণ অন্য গল্পা। থিম এক, প্রেক্ষাপট আলাদা। ওখানে অনেকজন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করব, ৩২ জন!
আর পড়াশোনা?
পারিজাত: সেটাও হয়ে যাচ্ছে। এই তো এখন শ্যুটিং থেকে ফিরলাম, এবার পড়তে বসব। (যখন কথা হচ্ছিল, তখন বাজে রাত ১০টা) তারপর আবার কাল সকাল ৭টায় কল টাইম… (হাসি)।