অভিনয় হোক বা তাঁর ফ্যাশন সবটা নিয়েই টলিপাড়ায় চর্চায় থাকেন মনামী ঘোষ। তিনি যে এবার গীতা সেনের চরিত্রে অভিনয় করছেন, তবে এ খবর নতুন নয়। ইতিমধ্যেই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মৃণাল সেনকে নিয়ে তৈরি বায়োপিক 'পদাতিক'-এ মৃণালের স্ত্রী গীতার চরিত্রে তাঁর ঝলক দেখেছেন সকলেই। তবে গীতা সেনের যে লুক, তার থেকে বাস্তবে মনামী অনেকটা আলাদা, অন্তত নায়িকার সোশ্যাল মিডিয়া তো তাই বলে। সেখানে নিজের স্টাইলিশ ইমেজ ভেঙে, গীতা সেন হয়ে ওঠা কতখানি কঠিন ছিল তাঁর কাছে? হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই কথাই জানালেন মনামী।
এই প্রসঙ্গে নায়িকার সাফ জবাব, 'ইমেজটা তো দর্শকের চোখে। এর আগেও আমি বাড়ির বউ, যে তার স্বামীকে খুব সাপোর্ট করে এমন চরিত্র করেছি। আর আমি শাড়ি পরতে যেরকম ভালোবাসি, আবার ওয়েস্টার্নেও সমান ভাবে সচ্ছন্দ্য। আর আমার মনে হয়, অভিনেত্রী ভালো সে, যাঁর কাছে দু'টোর কোনটাই কঠিন মনে হবে না।' কিন্তু চরিত্রটা, তার জন্য কতটা প্রস্তুতির প্রয়োজন হল? এ প্রশ্নের উত্তরে মনামী বলেন, 'না চরিত্রটা করতে গিয়ে খুব একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়নি। আর সময়ও যে অনেকটা পেয়েছিলাম কাজ শুরুর আগে, তেমনটাও নয়। আমার কাছে অফার আসার খুব কম দিনের মধ্যেই শ্যুটিং শুরু হয়ে গিয়েছিল।'

আরও পড়ুন: ‘জানলে কাজটা নিতাম না’! কার কাছে কই মনের কথা-য় মেইন থেকে সাইড রোল, ক্ষোভ বাসবদত্তার মনে?
মনামী জানান, গীতা সেনের চরিত্রের রেফারেন্স বলতে তাঁর কাছে ছিল অভিনেত্রীর কিছু সিনেমা, কিছু স্টিল ছবি এবং একটা ইন্টারভিউ। আর তা দেখেই নায়িকা বোঝেন, গীতা সেন খুবই সাদামাটা মানুষ ছিলেন। মনামীর কথায়, 'আমাদের চারপাশে আমার মা, মাসি, পিসি যেভাবে সংসার করেন, তিনিও একেবারে সেরকম সাদামাটা ভাবেই সংসারটা করতেন। তাই ওঁর চরিত্র করতে গিয়ে আমাকে খুব আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়নি। কিন্তু সেই সময় যাঁরা গীতা সেনকে দেখেছিলেন, তাঁদের কাছে তো ওঁর একটা ছবি তৈরি হয়ে আছে, তাই গীতা সেন হয়ে ওঠাটা আমার কাছে খানিকটা চ্যালেঞ্জিং ছিল।'
এতদিন ধরে পর্দায় অভিনয় করছেন মনামী, ফলে কাজ করতে গিয়ে কি কোথাও অভিনেত্রী গীতা সেনের সঙ্গে নিজের মিল পেলেন? এ প্রশ্নে অভিনেত্রীর উত্তর, 'যদি আমি ওঁর ব্যক্তি সত্তার দিক থেকে বলি, তাহলে খুব একটা নিজেকে মেলাতে পারিনি। বরং, আমি নিজেকে মৃণাল সেনের সঙ্গে রিলেট করতে পারি। কারণ গীতার সেন যে রকম সংসার সামলে অভিনয় করেছেন, সেরকম মৃণাল সেনকেও প্রচন্ডভাবে সাপোর্ট করে গিয়েছেন। আগে তো শুনেছিলাম অনেকের মুখে যে তিনি মৃণাল সেনের মেরুদণ্ড ছিলেন। আর এবার কাজটা করতে গিয়ে আমি আরও বেশি করে সেটা উপলদ্ধি করলাম। এমন অনেক কঠিন সময় গিয়েছে, যখন মৃণাল সেন পরিবারের পাশে থাকতে পারেননি, এসে পৌঁছতে পারেননি। সেই সময় গীতা সেনই পুরোটা নিজের হাতে সামাল দিয়েছেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ওঁর ঠিক উল্টোটা।'

আরও পড়ুন: বন্ধু হয় নায়িকারাও! ছুটি কাটালেন আশিতিপর আশা, হেলেন, ওয়াহিদা, ৩ জনে গেলেন কোথায়?
এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী তাঁর পরিবারের কথা উল্লেখ্য করে বলেন, 'আমার বাড়ির সকলে আমাকে ভীষণ ভাবে সাপোর্ট করেন। তাঁরা পাশে না থাকলে আজ এই জায়গায় থাকতে পারতাম না।' মনামী জানান, বাড়িতে খুব খারাপ পরিস্থিতি হোক বা আনন্দ অনুষ্ঠান সব সময় তাঁর পক্ষে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়নি। বরং, তিনি যখন কাজ করে পরিশ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বা কোনও খারাপ পরিস্থিতি মধ্যে দিয়ে গেলে তাঁর পরিবারকে নায়িকা পাশে পেয়েছেন। অভিনেত্রীর কথায়, 'এই জায়গাটায় আমি মৃণাল সেনের সঙ্গে নিজেকে খানিকটা মেলাতে পারি। এই চরিত্রটা করতে গিয়ে আমি আরও বেশি করে উপলদ্ধি করতে পেরেছি, যে আমার পরিবারের মানুষগুলো আমার জন্য কতটা করেন।'
কিন্তু, এই কাজের অফার পাওয়ার পর কেমন অনুভূতি হয়েছিল মনামীর? নায়িকা জানান, সৃজিত মুখোপধ্যায়ের পরিচালনায় এটাই তাঁর প্রথম ছবি, সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরির মতো একজন অভিনেতা। ফলে সবটা নিয়ে শুরু থেকেই বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, 'সৃজিত দার পরিচালনা, সঙ্গে চঞ্চল দা রয়েছেন, ফলে কাজটা যে দারুন হবে সেটা তো আগে থেকেই মনে হচ্ছিল। সবটা মিলিয়ে এই কাজটার জন্য আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম।'
অনেকদিন পর 'পদাতিক'-এর হাত ধরে পর্দায় ফিরছেন তিনি, কিন্তু অনুরাগীদের একাংশের দাবি নায়িকাকে নাকি খুব কম দেখা যাচ্ছে। কেন কমছে তাঁর কাজের সংখ্যা? পাশাপাশি পুজোর পর এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রোডাকশন হাউস থেকে নতুন কাজের কোন খবর পাওয়া যায়নি, এই বিষয়ে তাঁর কী মত? প্রশ্ন শুনে অভিনেত্রীর জবাব, 'আমার প্রোডাকশন হাউজ থেকে তো ইতিমধ্যেই দুটো গান এসেছে। আমার মনে হয় আমার ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে যে যে জায়গাগুলো নতুন কিছু সংযোজন করবে, সেটা আর্থিকভাবে হোক বা কেরিয়ারের দিক থেকে আমি কেবল সেই কাজগুলোই করব। সেটা অভিনয়ও হতে পারে, নাচ হতে পারে, নাচের শোয়ের বিচারক হওয়া হতে পারে এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন ব্র্যান্ড ক্যাম্পেনও হতে পারে। এগুলো সবই আমার কাজের মধ্যে পড়ে। আসলে একটা কাজে আটকে না থেকে, আমি বিভিন্ন রকমের কাজ করার চেষ্টা করি।'
তবে কেবল কাজ নয়, তার ফাঁকে ফাঁকেই মনামী বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। কাজের মাঝে ক'দিনের এই ছুটি তাঁর জীবনে নতুন কী বিশেষত্ব যোগ করে? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে নায়িকার উত্তর, 'আমি ঘুরতে ভীষণই ভালবাসি। অন্য রকমের অভিজ্ঞতা হয়, এই ঘোরা বিষয়টা মানুষ গ্রো করতে সাহায্য করে। নানা জায়গার নানা সংস্কৃতি, নানা ধরনের খাবার, কত রকমের মানুষ সব কিছুর সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ হয়। ঘুরতে গেলে অনেক কিছু জানা যায়, শেখা যায় আর সেটাই কোথাও গিয়ে জীবনকে আরও নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।'