সোনালি চৌধুরী, অভিনেত্রী
আমি একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। একদিকে আমি মা হয়েছি, আর তার ঠিক দেড় বছরের মাথায় আমি আমার মা-কে হারিয়ে ফেললাম। মা-কে হারিয়েছি মাত্র ৬ মাস হয়েছে। মা হঠাৎ করেই আমায় ছেড়ে চলে গেলেন।
আমার মা-ই আমায় সবথেকে ভালো বন্ধু ছিলেন। যার জন্য আমার যে অনেক বন্ধুবান্ধব, তেমনটা নয়। অনেকেই আছেন বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে পারলে খুশি হন, আমি কিন্তু পরিবারের সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করি। বাড়ির সকলের সঙ্গে বেড়াতে গেলে আমার ভীষণ আনন্দ হয়। আমি ভালো খেলে, ভালো জায়গায় গেলে সবসময় মনে হয় কবে বাড়ির সবাইকে নিয়ে এখানে আসতে পারব। এটা ছোটথেকেই আমার মধ্যে ছিল। আর এখন মনে হয় মাকে খুব বেশি বেশি করে মিস করছি। মনে হচ্ছে, কত কথা বাকি রয়ে গেল…। যদি কোনও নতুন কাজের প্রস্তাব পেতাম, তাহলে সর্বপ্রথম মাকে বলতাম। মায়েরও এসব নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল, কোনও ছবির চিত্রনাট্য এলেই আমার আগে মা পড়ে ফেলতেন। বলতেন এই গল্পটা বেশ ভালো, এটা ভালো, ওটা খারাপ, নিজের মতো করে মতামত দিতেন। সেগুলো খুব মনে পড়ে। আমার কোনও চরিত্র বা ছবি, বা ধারাবাহিক মা যে কতবার দেখতেন, তার কোনও হিসেব নেই। মা যখন ছিলেন, তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে অতটাও মাথা ঘামাতাম না। আসলে কোনও কিছু না থাকলে তবেই তার মর্ম বুঝি।
আরও পড়ুন-'তুমি মায়ের মতোই ভালো', এটা বলার মতো আমার জীবনে আর কেউ নেই: দিতিপ্রিয়া
আমার মা বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, দক্ষিণীতে গান শিখতেন, তাই মায়ের হাত ধরেই আমার আবার রবীন্দ্রনাথকে চেনা। সেজন্য মায়ের পর রবীন্দ্রনাথও বন্ধুর মতো। আমার খারাপ লাগা, কঠিন সময়ে রবীন্দ্রানাথের গানের মধ্যে দিয়েই কাটিয়ে উঠি, ভালো থাকি। এই ১২ মে আমার ছেলের ২ বছর হয়েছে, আর আজ মাদার্স ডে, আর কয়েকদিন আগেই ২৫ বৈশাখ গিয়েছে, পরপর এই দিনগুলি গেছে, তাই আরও বেশি করে মায়ের কথা মনে পড়ছে।
আমি চেয়েছিলাম মা কিছু কবিতা, গান, আমার ছেলেকে শিখিয়ে দিয়ে যান, সেটা আর হল না। সেটাই একটা খারাপ লাগার জায়গা। আমার বলতে দ্বিধা নেই, যে আমি অনেক বাংলা কবিতা, সাহিত্য পড়েছি, অনেক স্বল্প প্রচলিত রবীন্দ্রসঙ্গীতও আমার চেনা, আর এসবই আমার মায়ের জন্য। মা গাইতেন শুনেছি অনেক গান, চেয়েছিলাম আমার ছেলেকেও তারকিছু মা দিয়ে যান, কিন্তু সেটা হল না। খুব মনে পড়ে আমার পরীক্ষার আগে বাংলা আর ইতিহাস, এগুলো মা পড়তেন, আর আমি শুনতাম। শুনেই আমি মনে রাখতাম। আমিও চেষ্টা করব সেটা আমি আমার ছেলের সঙ্গেও এটা করতে। আমার মা যেটা আমায় দিয়েছেন, সেটা আমি আমার ছেলেকেও দিতে চাইব। জানি না, আমি আমার মায়ের মতো ভালো মা হয়ে উঠতে পারব কিনা…